ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » প্রবাসের চিঠি » বিস্তারিত

নিউ ইয়র্কের টাইম টেলিভিশনের উপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৬:৪২:৪০
নিউ ইয়র্কের টাইম টেলিভিশনের উপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

প্রবাস ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনীতিতে কীভাবে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এমন একটি প্রশ্ন করায় নিউ ইয়র্কের টাইম টেলিভিশনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা নয়।বিএনপির জন্য আপনাদের এতো মায়াকান্না কেন? গত শুক্রবার সকালে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের সফলতার সম্পর্কে তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নকর্তা নিউ ইয়র্কের টাইম টেলিভিশনের সিইও ও সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের এর রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি সংক্রান্ত একটি প্রশ্নে গড়মিল থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বেশ কয়েকটি পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন এবং প্রশ্নটি গুছিয়ে বলতে গিয়ে তালগোল পাকান।

মূলতঃ জাতীয় বিষয়গুলোতে বিএনপি কেন আসছেন না এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন জাতীয় ঐক্যমত বলতে কী বুঝাচ্ছেন। জাতীয় ঐক্যমত কেন, বিশ্বব্যাপী তো আমাদের ঐক্যমত রয়েছে। বিএনপি কেন আসছে না এ প্রশ্ন বিএনপিকেই করা উচিত। কারন আমি বিএনপিকে নেতৃত্ব দেই না। বিএনপি একটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল। তাঁদের দলের নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। জাতীয় ইস্যুতে তাঁরা কেন এগিয়ে আসে না সেটা তাঁদের ব্যাপার। প্রশ্নকর্তা মুখে বিএনপির সাফাই শুনেই রেগে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে এবং ইনডেমিনিটি বিল পাশ করে বিচার বন্ধের ব্যবস্থাও করেছিল। তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে বসবো। পাল্টা প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার বাবা-মাকে কেউ মেরে ফেললে আপনি কি তাদের সঙ্গে বসবেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী নই। তাই বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া কারো উচিত হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, যারা হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড এবং দেশকে ধ্বংসে বিশ্বাসী তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম। সংবাদ সম্মেলন শেষে ‘টাইম টেলিভিশন কীভাবে এখানে এলো’ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী এমন একটি প্রশ্ন তোলেন কিন্তু কেউ সদুত্তোর দিয়ে পারেনি বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, নয়া দিগন্ত, দিনকাল ও সংগ্রামের সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাইম টেলিভিশনের উপর ক্ষুব্ধ হবার মূল কারন ছিল ভিন্ন। ২০১৬ সালের মে মাসে টাইম টেলিভিশনে মেন্দি সাফাদি নামে ইসরায়েলের একজন নাগরিকের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাতের বিষয় নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিলেন যা ২৭ মে তারিখে সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রাক্তন উপদেষ্টা জাহিদ সরদার সাদি ও টাইম টিভির উপস্থাপক জেকব মিলটন যৌথভাবে মেন্দি সাফাদির সেই সাক্ষাতকারের কল্পকাহিনী সাজিয়েছিলেন বলে পরে তা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়।

এ কারনে টাইম টেলিভিশনের উপর কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের নেতা ও সরকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই নাখোশ। কিন্তু নিউ ইয়র্কের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। টাইম টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে ও টকশো’তে অংশ নেবার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিরা লাইন ধরে বসে থাকেন বলে গেছে।শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সঙ্গে টাইম টিভির কর্মকর্তাদের একটা সুসম্পর্কও রয়েছে বলেও বিভিন্ন মহলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনাটি বর্তমানে ‘টক অব দ্য নিউ ইয়র্ক’ এ পরিনত হয়েছে। সাংবাদিক মহল থেকে শুরু করে সর্বত্রই এ ঘটনাটি এখন মুখরোচক আলোচনায় পরিনত হয়েছে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭)