ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

ফসলের বিষে মরছে পাখি!

২০১৭ অক্টোবর ১৬ ১৬:১২:৩৫
ফসলের বিষে মরছে পাখি!

এমএ বশার, বাউফল (পটুয়াখালী) : আকাশে পাখি উড়লে প্রকৃতি পায় নতুন মাত্রা। সকাল বিকাল পাখ-পাখালির উড়া-উড়ি আর ডাকা ডাকিতে মুখর হয় সবুজ প্রকৃতি। পাখির পাখায় শোভা ছড়ানো উদার প্রকৃতিতে হৃদয় খুঁজে পায় অনাবিল প্রশান্তি। কিন্তু এ সময় উপকুলীয় কৃষি প্রতিবেশে শিকারের আশায় ছুটে আসা পাখিরা হচ্ছে বিপন্ন।

সবুজে ছাওয়া জলা ধান ক্ষেতে ছোট মাছ আর পোকা- মাকড়ের আশায় ছুটে এসে প্রাণ দিতে হচ্ছে এদের। পোকা দমনে আমন ক্ষেতে ছিটানো বিষের ছোবলে মরছে বক, পানকৌঁড়ি, ফিঁঙে, মাছরাঙার মতো পাখিরা।

পটুয়াখালীর বাউফলের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা এখন সবুজে সবুজে ছাওয়া ধান ক্ষেত। কিন্তু এসব সবুজে ছাওয়া ধান ক্ষেতের পাশে মেঠো পথে হাটলে নাক লুকোতে হয় ছিটানো বিষের গন্ধে। জলা ধান ক্ষেতের পাশেও স্থান পাচ্ছে বহু জাতিক কোম্পানির কিটনাশকের বোতল কিংবা প্যাকেট।

আমনের পোকা দমনে ছিটানো এসব বিষ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে ও পানিতে। জলা ধান ক্ষেতের বিষে আক্রান্ত ছোট মাছ কিংবা পোকা-মাকড় আহার করে মারা যাচ্ছে প্রকৃতির মনোহর শোভা ছড়ানো বক, পানকৌঁড়ি, ফিঁঙে, মাছরাঙার মতো নানা প্রজাতির পাখি।

বিভিন্ন এলাকায় ধান ক্ষেতের পাশে দেখা যায় বিষক্রিয়ায় মারা যাওয়া পাখিদের। ঝোপ-ঝাড় কমে যাওয়ায় বাসস্থান, প্রজননে বাসা তৈরী, খাদ্য সংঙ্কট, অসাধু শিকারির কবল ছাড়াও এখন আমন মৌসুমে আবাদি জমিতে ছিটানো কিটনাশকে মারা যাচ্ছে পাখিরা। দিন দিন কমছে বিভিন্ন প্রজাতির দূর্লভ পাখির সংখ্যা। ফসলের ক্ষেতে সুজিনন, ক্যারাটে, ম্যাগমা, থিউবিট, ভার্টিমেঘ ও স্কোরের মতো কীটনাশক ব্যাবহারের কারণে মরছে পাখিরা।

স্থানীয় পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ এর পরিচালক মন্ডলির একজন মো. কামরুজ্জামান জানান, ‘আবহাওয়ার বৈরী প্রভাব, উপকুলীয় ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছপালা, নারিকেল-সুপারির বন, বাঁশ বাগান, হোগলা পাতার বন, জোপ-জঙ্গল কমে যাওয়াসহ কিটনাশকের ব্যাবহারের কারণে উপকুলীয় অঞ্চল থেকে ধুপনি বক, রাঘ্ধসঢ়;গা বক, কুনি বক, লাল বক, ময়ূর পঙ্খি বক, শামুক খোল, মৌটুসী, ফটিকজল, সোনালী মাছ রাঙা, নীল বুক মাছরাঙা, পাকরাও মাছ রাঙা, বসন্ত বাউরি, দোয়েল, বাবুই, গোবরে শালিক, হলদে পাখি, পানকৌঁড়িসহ বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিরা হারিয়ে যাচ্ছে।

বিষক্রিয়ায় বিলুপ্তির পথে স্থানীয় জাতের বিভিন্ন মাছ ও প্রাণি। একসময় জলাশয়ের কাছে কলোনি করে থাকা দুই-তিন যুগ পার করার কথা থাকলেও হাজার হাজার বক, শামুকখোল, পানকৌঁড়ির মতো পাখিদেরও আর দেখা যায় না।



খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণি ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সার-ওষুধের ছোবলে প্রাণ-প্রকৃতি- প্রতিবেশ বিপন্ন। বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন পশু-পাখি। মুগ্ধ হওয়ামতো পাখির কোলাহল তেমন চোখে পড়ে না। এরা টিকে থাকতে পারে এ ব্যাপারে সকলের যত্নবান হওয়া উচিৎ।’

(এমএবি/এসপি/অক্টোবর ১৬, ২০১৭)