ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত

শর্মিষ্ঠা সাহা’র গল্প

২০১৭ অক্টোবর ১৭ ১৫:০৪:৫৮
শর্মিষ্ঠা সাহা’র গল্প







রাজলক্ষ্মীর ডায়েরি

মফস্বল শহরের মেয়ে রাজলক্ষ্মী। লক্ষ্মী পূজার দিনে জন্ম বলে ঠাকুমা বড় নাতনির নাম রেখেছিলেন রাজলক্ষ্মী । স্থানীয় কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক অসীম আর সদ্য প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তির্ণ হওয়া তনুজার স্বভাবতই এমন নাম পছন্দ হয়নি।ওদের ইচ্ছে ছিল বড় সন্তানের একটা আধুনিক নাম দেবার। তবে মায়ের উপরে কথা বলতে পারল না কেউই। ভেবেছিল মেয়ে স্কুলে ভর্তি হবার সময় সুন্দর একটা নাম দেবে। তবে বিধাতার মনে ছিল বিপরীত চিন্তা। লক্ষ্মী স্কুলে ভর্তি হবার আগেই তার ঠাকুমা মারা গেলেন। মায়ের এই আকস্মিক প্রয়াণে অসীম দিশেহারা হয়ে পড়ে। মায়ের রাখা নাম বদলাবার মত মানসিক জোড় বা ইচ্ছে কোনটাই আর রইল না। রাজলক্ষ্মী নামেই মেয়ে বেড়ে ওঠে ।

এবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেড়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে লক্ষ্মী। ছোট বোন ঐশী স্কুলে যেতে শুরু করেছে। ওদের মা তনুজা বিএ পাশ করে বিএড শেষ করেছে।ভাবছে সরকারি চাকরির বয়স থাকতে থাকতেই একটা কিছু শুরু করবে।ভেবে চিন্তে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হবার সিদ্ধান্ত নেয়। ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিও হয়ে যায়। তবে প্রথমেই বাড়ীর কাছাকাছি পোস্টিং পেল না। স্কুলটি পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য। প্রতিদিন বাস, নৌকা, রিকসা ভ্যানে চরে স্কুলে যেতে হয়। তনুজা ভেবেছিল ঐশীকে নিজের স্কুলে ভর্তি করতে পারলে অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু সেটা হলো না। ওকে স্কুলে নেয়া আনা এবং বাকী সময়টা দেখাশুনা করার দায়িত্ব পড়ল ঠাকুরদা দিবাকর বাবুর উপর। অবসর জীবনে নিজের গুরুত্ব ফিরে পেয়ে তিনি খুশিই হলেন।

হাজার চেষ্টা করেও তনুজার বদলির কোন ব্যবস্থা হলো না। এদিকে দুর্গা পূজা এসে গেছে। বাড়ীতে পূজা না হলেও অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা তো করতে হবে। শাশুড়ী নেই, এখন সকল দায়ীত্বই যে তার। কিন্তু মা দুর্গা যেন নিজেই পূজার আয়োজন করে নিলেন। পূজার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তনুজা বদলি হয়ে এল বাড়ীর কাছের স্কুলে। বাড়ীর সকলে ভীষণ খুশি, আর হাফ ছেড়ে বাঁচল অসীম। আধুনিক শিক্ষার প্রভাব তাকে স্ত্রীর চাকুরি ছাড়ার কথা বলতে বাধা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু পদ্মার চরে যাবার ব্যাপারটি সে মেনে নিতে পারেনি। একটা সময় মনে হয়েছিল তনুজা আর কখনওই বদলি হতে পারবে না। অবশেষে স্থানীয় সরকারি দলীয় নেতার প্রভাবে তার বদলি হওয়া সম্ভব হল। স্বভাবতই পুরো পরিবার সেই নেতার কাছে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ । কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ নেতাকে দুর্গাপূজার সপ্তমির দিনে বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করা হল। নেতা এলেন দশ-বার জন পাতি ও ছাত্র নেতাকে সংগে করে।অসীম আতিথেয়তায় কোন ত্রুটি রাখল না। বাড়ীতে মেয়ে দেখতে আসলে যেভাবে আদর আপ্যায়ন করা হয় ঠিক সেভাবেই ওদের আপ্যায়ন করল।ফলাহার থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, নাড়ু, লুচি, পায়েস সবই খাওয়ানো হল। মা দুর্গা আসনে থাকতে থাকতে বাড়িতে মাংস রান্নায় বেশ আপত্তি ছিল দিবাকর বাবুর। কিন্তু অতিথীদের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তিনি পিছু হটলেন।

আজ মহা অষ্টমী। এলাকার অন্য সকলের মত তনুজাও বাড়ীর সব কাজ শেষ কেরে সন্ধ্যায় পূজা দেখতে বের হয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে। অন্যান্য পূজা মন্ডপ ঘুরে এলাকার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ পূজাটা দেখতে এল ওরা। প্রতি বছর এখানে না এলে পূজাটা যেন সার্থকই হয় না। মন্দিরের সামনে মেলা বসেছে। ঐশীকে একটা সুন্দর খেলনা কিনে দিলেন দিবাকর বাবু। লক্ষ্মী বেশ বড় বড় ভাব নিয়ে খেলনা কিনতে চাইল না। তাই তাকে কাঁচের চুড়ি, মালা এসব কিনে দিলেন তিনি। এরপর খুশি মনে সবাই পূজা দেখতে মন্দিরে ঢোকে। শৃংখলার স্বার্থে মহিলা ও পুরুষদের আলাদা প্রবেশ পথ। কাজেই দুই মেয়েকে নিয়ে তনুজাকে ঢুকতে হলো আলাদা। লক্ষ্মী আর ঐশী মহিলাদের সারির সীমানার কাছাকাছি থাকতে চাইল যেন বাবা আর ঠাকুরদাকে দেখা যায়। মন্দিরে তখন প্রচন্ড ভীর। এর মধ্যে দিবাকর বাবু ঠিকমত এগোতেই পারছেন না। কাজেই অসীমকেও ধীরে ধীরে চলতে হচ্ছে । তাছাড়া একদল অল্প বয়েসি ছেলে খুব ধাক্কাধাক্কি করে এগিয়ে যাচ্ছে, ওদেরকে জায়গা দিতেই হয়। শিক্ষক হিসাবে ছাত্র বয়সিদের এই ধরণের আচরণ অসীমের ঠিক পছন্দ না হলেও মেনে নিল।

ওদিকে তনুজা লক্ষ্মী ও ঐশীকে নিয়ে সামনে পৌছে গেছে।দুই বোন খুব ভক্তিভরে দেবি দুর্গাকে প্রণাম করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ভীড়ের মধ্য থেকে একটি হাত ব্যারিকেডের উপর দিয়ে এসে চেপে ধরল লক্ষ্মীর বুক। সদ্য তের বছরে পা দেয়া লক্ষ্মী কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিছন থেকে ওর বাবা অসীম ক্ষিপ্র গতিতে এসে হাতটি চেপে ধরে টেনে হিচড়ে ছেলেটিকে নিয়ে যায় মন্দিরের বাইরে। এরপর চড় থাপ্পর দিতে থাকে পাগলের মত। মুহূর্তে শুভ অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে অশুভ। তনুজা মেয়েদের সামলাবে না স্বামীকে ঠেকাবে বুঝে উঠতে পারছিল না। এমন সময় ভীড়ের মধ্যে থেকে অসীমের ছাত্র শুভ এগিয়ে এসে অসীমকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। অবশেষে শুভ আর দিবাকর বাবু মিলে অসীমকে সরিয়ে নিয়ে আসে তনুজা আর মেয়েদের কাছে। মাটিতে যে ছেলেটি আহত অবস্থায় পড়ে আছে তার চেহারা দেখে এত উত্তেজনার মধ্যেও তনুজার রক্ত হিম হয়ে গেল। ও এলাকার মাস্তান, সরকারী দলের নেতার সংগে গতকালই ওদের বাড়ীতে ভুড়ি ভোজ সেরে এসেছে। শুভ তনুজার দিকে তাকিয়ে ওর মনের ভীতিটি বুঝতে পারে। তাছাড়া চারপাশের উৎসুক মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন অসীম পরিবার। শুভর ছোট বুদ্ধিতে বিষয়টি ভাল লাগল না। সে অসীম ও তনুজাকে অনুরোধ করল বাড়ী চলে যেতে । অসীমও বিষয়টি বুঝতে পেরে সকলকে সংগে নিয়ে রওনা হয় মন্দিরের বাইরের দিকে।

ওদিকে কয়েকজন মিলে বিল্লালকে দাঁড় করিয়েছে। সে তখন আহত বাঘের মত চিৎকার করছে।

-আমিও দেখে নেব। কিছুতেই ছাড়ব না।

শুভ সহ্য করতে না পেরে বলল,

-কিন্তু তুমি যা করেছ সেটা মহা অন্যায়। মেয়েদের সম্মান করতে শেখ।

-এই চুপ, মালাউনের বাচ্চা ওই অসীম মাস্টারকে যদি দেশ ছাড়া করতে না পারি তো আমার নাম বিল্লালই না।

ঘটনাটা বেশিদুর এগোবার আগেই দুই পক্ষের বন্ধুবান্ধবেরা দুজনকে দুদিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বিল্লালের হুমকি ধামকি চলতেই থাকে। আতঙ্ক, লজ্জা আর ঘৃণা নিয়ে অসীম পরিবারের সকলকে নিয়ে রওনা হয় বাড়ীর দিকে। মন্দির এলাকায় শান্তি ফিরে আসে। মা দুর্গা অসহায় মাটির মূর্তি হয়েই দাড়িয়ে রইলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে খড়গ উঁচু করার ক্ষমতা তার হলো না।

ঘটনার আকস্মিকতায় পরিবারের সবাই যেন বাক্যহারা হয়ে গেছে। লক্ষ্মীর কান্না কিছুতেই থামছে না। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে নীরবতা ভাঙলেন দিবাকর বাবু।

-এভাবে চুপ করে বসে থাকলে কিছু হবে? তার চেয়ে নেতাকে একবার ফোন করে দেখ, কিছু একটা সুরাহা হতে পারে।

-ফোন করে কি বলব।তার দলের মাস্তান অসভ্যতা করেছে আমার মেয়ের সাথে। নাকি তাকে আমি মেরেছি আর সে আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।

-যা ঘটেছে তার পুরোটাই বলবি। তিনি আমাদের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য কিছু করতে পারেন কিনা সেটাও জিজ্ঞেস করবি।

-তার মানে তুমি বলছ সেই অসভ্যটার সংগে আপোষের ব্যবস্থা করতে।

-ঠিক আপোস নয়। তবে এখানে পরিবার নিয়ে থাকতে হলে..

-বুঝেছি, একাজ আমার দ্বারা হবে না। করতে হয় তো তুমি ফোন কর।

অগত্যা দিবাকর বাবুকেই ফোন তুলতে হলো। ঘটনাটা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে নেতার কানে। নেতা দিবাকর বাবুকে এটুকু আশ্বস্ত করলেন যে, তিনি বিল্লালকে ডেকে বলে দেবেন অসীমের পরিবারের কোন ক্ষতি না করতে। তবে এর বেশি কিছু তিনি করতে পারবেন না। সবাইকে সাবধানে থাকতে বললেন।

পরদিন শুভ এল অসীমের সংগে দেখা করতে।ওর সংগে কথা বলে অসীমের মনের ভার অনেকটা হালকা হলো। শুভ বার বার করে অসীমকে অনুরোধ করে পূজোর কদিন যেন বাড়ীর বাইরে না যায়। পূজোর পরে কলেজে যাবার সময় শুভ যায় অসীমের সংগে। লক্ষ্মী বা ঐশী কাউকেই স্কুলে পাঠাল না তনুজা। শুধু নিজে গেল স্কুলে, তাও ভয়ে ভয়ে।

আক্রমণটা এল তৃতীয় দিন অসীম কলেজ থেকে ফেরার পথে। বিল্লাল দলবলসহ আক্রমণ করল অসীমের উপর। শুভর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে জড়ো হওয়াতে পালিয়ে যায় বিল্লাল। দুইমাস হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ীতে ফিরল অসীম। প্রাণে বেঁচে যায় অসীম কিন্তু হারাতে হয় একটি পা।

এদিকে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বার্ষিক পরীক্ষার দিনগুলোতে বহু ঝামেলা করে ওদের স্কুলে নেয়া হয়।তনুজা কোন পথ না দেখে একদিন গেল নেতার কাছে বদলীর ব্যবস্থা করাতে। নেতার সহায়তায় খুব অল্প দিনের মধ্যেই তনুজার বদলী হয়ে গেল । অসীম ইনভ্যালিড পেনশন নিয়ে কলেজের চাকরিটা ছেড়ে সাত পুরুষের ভিটে মাটি ফেলে চলে গেল নতুন শহরে। দিবাকর বাবু একাই রয়ে গেলেন বাড়ী পাহাড়া দিতে।শুভ অসীমকে আশ্বস্ত করল সে নিয়মিত দিবাকর বাবুর খোঁজ খবর রাখবে।

লক্ষ্মী আর ঐশীর নতুন পরিবেশে শুরুতে মানিয়ে নিতে সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে তাদের তৈরি হলো বন্ধু। কিন্তু ঘরে বসে থেকে অসীম কেমন খিটখিটে মেজাজী হয়ে উঠেছে । স্ত্রীর রোজগারে চলছে সংসার, এটা মেনে নিতে তার ভীষণ কষ্ট। একদিন যে চাকরিটা তনুজা ছেড়ে দিলে সে খুশি হতো, সেই চাকরিই এখন সংসারের উপার্জনের একমাত্র সম্বল।

বছর ঘুরে আবার এল দুর্গা পূজা। তবে অসীমের পরিবারর কেউ এবার আর পূজা দেখতে গেল না। লক্ষ্মী কিছুতেই ভুলতে পারেনি সেই ভয়াবহ স্মৃতি। যদিওবা মাঝে মাঝে ভুলে যায়, বাবাকে দেখলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই কাল রাত।মায়ের জীবন সংগ্রাম আর বাবার বেঁচে থাকার প্রয়াস তাকে ভাবিয়ে তোলে। শুধু তার জন্যই বাড়ীর আজ এ অবস্থা। ঠাকুরদা কিছু টাকা পাঠিয়েছে পূজোতে খরচ করার জন্য । তা থেকে লক্ষ্মী একটা ডায়েরি আর কলম কিনে বাবাকে দেয় পূজোর উপহার হিসাবে। ডায়েরি হাতে পেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরে অসীমের চোখ দিয়ে। রাজলক্ষ্মী বাবার গলা জড়িয়ে ধরে শুধু একটা শব্দই উচ্চারণ করে, ”লেখ।” মেয়ের চিন্তার গভীরতা দেখে আপ্লুত অসীম ডায়েরি হাতে নিয়ে লিখতে শুরু করে।

এরপর আর থামেনি। যে জীবনটা ব্যর্থ হয়ে গেছে ভেবে সে মরমে মরেছিল সেই জীবনের শক্তি দিয়েই অসীম শিক্ষক থেকে লেখক হয়ে ওঠে।ধীরে ধীরে বিভিন্ন দৈনিকে তার লেখা প্রকাশ শুরু হয় আর সাথে সাথে বাড়তে থাকে খ্যাতি। এখন সে দেশের পরিচিত লেখক।বেঁচে থাকার স্বার্থ্কতা খুঁজে পেয়ে অসীমের খিটখিটে স্বভাবটিও অনেক গেছে। তনুজা এখন অনেকটা হালকা বোধ করে।

সামনে লক্ষ্মীর এস এস সি পরীক্ষা । নিজের শহর ছেড়ে আসার পর তিন বছর পেরিয়ে গেছে।অসীমের পরিবারের কেউ আর দুর্গা পূজোয় বাইরে যায় না। লক্ষ্মী যেতে চায় না কিছুতেই। মা দুর্গার ওপর তার ভীষণ রাগ, কেন সেদিন তিনি মন্দিরের ভিতর এমন কুৎসিত ঘটনা ঘটতে দিলেন। অষ্টমী পূজোর দিন একটি দৈনিকের সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়েছে অসীমের ছোট গল্প ।লক্ষ্মী বাবা-মাকে গল্পটি পড়ে শোনাচ্ছে।ছোট ঐশীও মনযোগ দিয়ে শুনছে।সাহিত্য পাতায় না ধরাতে গল্পের কিছু অংশ ছাপা হয়েছে নবম পাতায়। পাতা উল্টিয়ে নবম পাতায় যেতেই ওর চোখে পড়ে আরেকটি খবর। লক্ষ্মীর পড়া বন্ধ হয়ে যায়। বাবার লেখা গল্পের শেষে কলামের পাশে ছোট্ট একটি খবর, ”ক্রসফায়ারে বিল্লালের মৃত্যু।” লক্ষ্মী উত্তেজনা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিল,

-বাবা...

-কি হয়েছে?

”দেখ” বলে বাবাকে নজর দিতে বলল খবরটির উপর। তারপর বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে শুরু করল কান্না ।

পরদিন সকালে অসীম পরিবারসহ রওনা হল বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাস থেকে নামতেই সকলে এক অদ্ভূত শিহরণ অনুভব করল। নিজের শহর, প্রাণের শহর – এর ছোঁয়াটাই অন্যরকম।অসীম দুই হাত ওপরে তুলে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিল কতক্ষণ। দৃশ্যটি দেখে তনুজার দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল আনন্দাশ্রু।বাড়িতে পৌঁছে দেখে দিবাকর বাবু বারান্দায় শুভর সংগে গল্প করছেন। শুভ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। স্যারকে দেয়া কথা সে রক্ষা করে চলেছে নিয়মিত। পূজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে খোঁজ নিতে এসেছে দিবাকর বাবুর। হঠাৎ সবাইকে বাড়ির আঙিনায় দেখে দিবাকরবাবু প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না, তারপর দুই নাতনিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলেন। এমন আবেগঘন পরিবেশে শুভও নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারল না।

চার বছর পরে দেখা । লক্ষ্মী প্রথমে শুভকে চিনতে পারেনি। তবে বাবার মুখে নামটা শুনে আবার ভেসে উঠল সেই পুরানো দিনের স্মৃতি।সেদিনের বার বছরের লক্ষ্মীর চেয়ে আজকের লক্ষ্মীর উপলব্ধি অনেক গভীর। মনে মনে ভাবল পৃথিবীতে শুধু বিল্লালের মত অসুরদের বসবাস নয়। এখানে শুভর মত কার্তিকেরাও আছে। মা দুর্গার মুখটা দেখা বন্ধ করেছিল তিন বছর। আজ সে রাগটা অনেক কমে গেছে। বাবাকে বলল, চল আমরা পূজো দেখতে বের হই।

(এসএস/এসপি/অক্টোবর ১৭, ২০১৭)