ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » অর্থ ও বাণিজ্য » বিস্তারিত

বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর আহ্বান বিজিএমই’র

২০১৭ অক্টোবর ২১ ১৩:৪৯:৪৫
বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর আহ্বান বিজিএমই’র

স্টাফ রিপোর্টার : গ্যাস বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম না বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত ‘পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সংগঠনটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।

বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তৈরি পোশাক খাতে কোনো প্রভাব পরবে কি না জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘অবশ্যই প্রভাব পড়বে। সেটা হলো, গণশুনানির শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি কোনো অবস্থায় এ মুহূর্তে, যেহেতু আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস আমরা এখনো ১৭৬ নম্বরে, সেহেতু আমরা মনে করি যেকোনো জায়গায় একটা খরচ বাড়ালেই সেটা আমাদের ওপর একটা চাপ হিসেবেই আসবে। আমরা অনুরোধ করব সরকারকে, কোনোভাবেই যেন বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো হয়।’

লিখিত বক্তব্যে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার ও কোনাবাড়ি এলাকায় ৩৫০টি পোশাক কারখানা উৎপাদন করতে পারছে না। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তাদের আশস্ত করা হয়েছে, একটি সার কারখানায় সরবরাহ বন্ধ করে পোশাক কারখানায় গ্যাস দেয়া হবে।

যানজটে পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভয়াবহ যানজট। এই সমস্যার কারণে পোশাকশিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বহু কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়ছে। মধ্যম স্তরের কর্মকর্তারা কারখানায় কাজ করতে চাইছেন না বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটি, বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সরকারের বৈঠকের কথা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি গঠিত হয়।

অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ক্রেতাজোট দুটি গত সাড়ে চার বছরে সরকার ও বিজিএমইএর সঙ্গে মিলে একত্রে অনেক কাজ করেছে। তারা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। কারখানাগুলো এখন ভালো পর্যায়ে এসেছে।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আরসিসির আওতাধীন করখানাগুলো সংস্কারকাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৬৭টি কারখানা গ্রিন কারখানা হয়েছে। আরো ২৬৮টি কারখানা গ্রিন হওয়ার অপেক্ষায়। সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্ট না হলে নতুন কোনো কারখানাকে বিজিএমইএ থেকে সদস্যপদ দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

এ অবস্থায় সরকার মনে করছে বাংলাদেশে এখন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স থাকার দরকার নেই।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত অ্যাকর্ডের ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। অ্যালায়েন্স বলেছে, আগামী সাত মাসের মধ্যে তারা কাজ শেষ করবে। এরপর তারা আর এ দেশে থাকতে চায় না। এ ব্যাপারে অ্যালায়েন্স লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছে।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অ্যাকর্ড গতকাল সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশে তাদের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য। এ সময় তাদের নাম হবে ট্রানজিশন অ্যাকর্ড।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করি এ সময়ের মধ্যে আমরা গুছিয়ে নিতে পারব। লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে কয় দিন কাজ করা যায়।’

সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে পরিবহন বাড়ছে ১৭-১৮ শতাংশ হারে। এ জন্য বন্দরের সক্ষমতা ও দক্ষতা ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রয়োজন হলেও তা করা হয়নি। গত ৪০ বছরে ৬০টি জেটি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৭টি। পর্যাপ্ত জেটি না থাকায় জাহাজজটের কারণে বছরে হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।

বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনার কথাও বলেন তিনি। আর এ জন্য পোশাকশিল্পের প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমদানি করা কাঁচামাল খালাসে ১০-১৫ দিন বেশি সময় লাগছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পকে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মঈনউদ্দিন আহমেদ (মিন্টু), সহ-সভাপতি এস.এম. মান্নান (কচি), মাহমুদ হাসান খান (বাবু), পরিচালক শহিদুল হক মুকুল, আশিকুর রহমান (তুহিন), মিজানুর রহমান চৌধুরী, আতিকুল করিম খান উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০১৭)