প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত
রামায়ণ অবলম্বনে প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক 'অকাল বোধন' : পর্ব- ১
২০১৭ অক্টোবর ২১ ১৯:৪৬:১১প্রথম দৃশ্য
(প্রথম অংক)
(বাংলার গ্রামের কোন বাড়ীর বারান্দায়ে একজন রামায়ণের সুরে পুথি পাঠ করছে কয়েকজন শ্রোতা বসে শুনছে।)
নমোঃ নমোঃ দর্শক শ্রোতা করি নিবেদন
শরৎ কালে দুর্গা পূজা হলো কি কারণ।
দশরথ রাজা ছিলেন অযোধ্যা নগরে
কৌশলা, সুমিত্রা, কৈকেয়ী তিন রানী ঘরে।
সগরবংশ উদ্ধারে গঙ্গা আনে ভগীরত
তাহারই বংশে জন্মে রাজা দশরথ।
জন্মের বছরে সে হারায় পিতা মাতা
পাঁচ বছর বয়েসে হয় রাজ্য পিতা।
অযোধ্যা নগর যেন সুখের সাগর
দিনে দিনে পার হয় নয় হাজার বছর।
পুত্রহীন মহারাজ মনে দুঃখদাহ
পুত্র লোভে করিলেন সাড়ে সাতশত বিবাহ।
অন্ধক মুনির শাপে দুঃখ গেল উড়ে
রাম, লক্ষণ, ভরত, শত্রুঘ্ন পুত্র এলো ঘরে।
জানকীর সাথে দিলেন রামের বিবাহ
আনন্দে হরষিত দশরথ গৃহ।
(আলো নিভে যায়। আসরের সবাই মঞ্চ থেকে নেমে যায়)
(আলো জ্বলে। ঘোষকের প্রবেশ )
ঘোষক: ঘোষণা, ঘোষণা, ঘোষণা। রাজা দশরথ ঘোষণা করেছেন যে আগামীকাল শ্রী রাম চন্দ্রের রাজ্য অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি হবেন অযোধ্যার রাজা। আজ থেকে সমগ্র রাজ্যে শুরু হবে উৎসব।
প্রজারা: জয় রাম চন্দ্রের জয় । জয় দশরথ রাজার জয়। জয় রাম চন্দ্রের জয় । জয় দশরথ রাজার জয় ।
প্রজারা এক পাশ থেকে ধ্বনী দিতে দিতে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।
(সীতাসহ মঞ্চে উঠে আসে রাম । পিছনে জয়ধ্বনী চলতে থাকে। রাম আসন গ্রহণ করার পর ধ্বনী থেমে যায়। একদল শিশু মঞ্চে উঠে আসে।)
প্রথম শিশু: তুমি বুঝি রামচন্দ্র ।
রাম: হ্যাঁ আমি রামচন্দ্র।
প্রথম শিশু: তোমার সাথে বুঝি জানকী সীতা।
রাম: হ্যাঁ
দ্বিতীয় শিশু: তুমি বুঝি আমাদের রাজা হবে ।
রাম: হ্যাঁ। আমি রাজা হব আর সীতা হবে রানী।
দ্বিতীয় শিশু : এই না্ও আমাদের শুভেচ্ছা । তোমাদের জন্য আমরা ফুল নিয়ে এসেছি।
তৃতীয় শিশু: তুমি রাজা হবে! আমাদের খুব মজা হবে। জানো আনন্দে আমাদের গাইতে ইচ্ছা করছে, নাচতে ইচ্ছা করছে ।
সীতা : তোমরা নাচতে গাইতে যান।
তৃতীয় শিশু: হ্যাঁ জানিতো
সীতা: তাহলে তোমরা নাচো, গান করো, আনন্দ করো।
প্রথম শিশু: চল চল সকলে আমরা নাচি আনন্দ করি।
তৃতীয় শিশু: সীতা তুমিও এসোনা আমাদের সাথে। (সীতার হাত ধরে টানে)
(শিশুদের গান এবং নাচ)
এসো এসো এসো সবে এসো মজা করি
এসো সবে নাচি গায় হাতে হাত ধরি৷
সীতা হবে রাজরানী রাম হবে রাজা
এতে ভারি মজা হবে এযে ভার মজা৷
রাম রাজা হবে শুনে বন বীথি সেজেছে
বুলবুলি ময়নারা লাল ঝুটি বেঁধেছে৷
চলো যায় ফুল তুলে রাজবধু সাজাবো
সারাদেশে নেচে গেয়ে ঢাক ঢোল বাজাবো।
এসো এসো এসো সবে এসো মজা করি
এসো সবে নাচি গায় হাতে হাত ধরি৷
(প্রথম অংক শেষ৷ আলো নিভে যায় )
দ্বিতীয় অংক
(একদল প্রজার প্রবেশ- মঞ্চে আলো জ্বলে)
প্রথম প্রজা: আমাদের কি ভাগ্য দেখ৷ নতুন রাজার অভিষেকে আনন্দ করছি৷
দ্বিতীয় প্রজা: তুই তো দেখলাম একাই এক হাড়ী দই খেয়ে ফেললি৷
প্রথম প্রজা: খাব না ! রাম চন্দ্র রাজা হবে আর খাব না! খাওয়ার মধ্যেই তো আনন্দ৷ তুই কি কম খেলি নাকি৷ আমি তো দেখলাম তুই একটা করে রসগোল্লা মুখে ঢুকাচ্ছিলি আর ঢক ঢক করে গিলছিলি৷
তৃতীয় প্রজা : ( ঢেকুর তুলে ) যাই বলিস মন্ডা মিঠাইয়ের যা স্বাদ হয়েছে না। আমার বাপের জম্মে এমন মিঠাই খাইনি।
দ্বিতীয় প্রজা: খাবি কেমনে। বাপের জন্মে কি কোন রাজার অভিষেক দেখেছিস। দশরথ রাজার অভিষেক কবে হয়েছিল কেউ বলতে পারো। আমার বাপও বলতে পারে না।
প্রথম প্রজা: খাও খাও। খেয়ে নাও। আবার কবে এরকম অভিষেক হবে তা কেউ কি জানে।
তৃতীয় প্রজা : আমি জানি আবার অভিষেক হবে।
দ্বিতীয় প্রজা: তুই কিভাবে জানলি।
তৃতীয় প্রজা: কেন রামচন্দ্রের বুঝি ছেলে পুলে হবে না। রামচন্দ্রের ছেলে হলে সেও রাজা হবে। তারপর একদিন অভিষেক হবে।
প্রথম প্রজা: ততদিন কি তুই বেঁচে থাকবি। মরে ছাই হয়ে গঙ্গার জলে বিলিন হয়ে যাবি।
দ্বিতীয় প্রজা: তুই যা বলেছিস। হে হে হে।
তৃতীয় প্রজা: আজ রাতে বাড়িতে গিয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করব। ভগবান এরকম একটি খাওয়া দাওয়ার জন্য আমাকে রামচন্দ্রের ছেলের রাজ্য অভিষেক পর্য্ন্ত বাঁচিয়ে রাখ।
দ্বিতীয় প্রজা: একেই বলে গাছে কাঠাল গোঁফে তেল। আরে তোর মত অকর্মাকে বাঁচিয়ে রেখে ভগবানের কি লাভ অ্যাঁ। পারিস তো খালি খেতে আর ঘুমোতে। অকর্মা মানুষকে ভগবান পছন্দ করে না।
তৃতীয় প্রজা: খাওয়া আর ঘুমের মধ্যে যে কি আনন্দ তুই যদি বুঝতি তাহলে আর একথা বলতি না।
প্রথম প্রজা: আজকেতো অনেক হলো। চল চল তাড়াতাড়ি বাড়ীতে যাই। কালকে আবার আসতে হবে না ।
প্রজারা : হ হ হ। চল চল চল চল ।
(প্রজারা মঞ্চ থেকে নমে যায়, নেপথ্যে রামায়ণ পাঠ শোনা যায়)
রাজ্য অভিষেক হবে রাম হবে রাজা
নাচে গানে আনন্দতি দেশের যত প্রজা।
খাওয়া দাওয়া নৃত্য গীত চলে ঘরে ঘরে
ভরতকে করিতে রাজা ষড়যন্ত্র অভ্যন্তরে।
(ঘোষক মঞ্চে প্রবেশ করে)
ঘোষক : ঘোষণা ঘোষণা ঘোষণা। রাজা দশরথ রাজ্য অভিষেকের সব আয়োজন বন্ধ ঘোষনা করেছেন। রাম চন্দ্র রাজা হচ্ছেন না। তিনি চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যাচ্ছেন। ভরত বিদেশ থেকে ফিরে এসে রাজ্যভার গ্রহণ করবেন। ঘোষণা ঘোষণা ঘোষণা, ঘোষণা ঘোষণা ঘোষণা।
(ঘোষক মঞ্চ থেকে নমে যায়, নেপথ্যে রামায়নের সুরে পাঠ চলতে থাকে। পরবর্তি দৃশ্যের জন্য মঞ্চ সাজানো চলে )
রাজ্য অভিষেকের দিন একি হইল হায়
মন্থরার কুচালে রাম বনবাসে যায়।
সাথে যায় সীতা, লক্ষণ সুমন্থ সারথী
রাজপুরী ছেড়ে রাম বাড়ায় রথের গতি।
অন্ধক মুনির শাপে বুকে লাগে ব্যাথা
বদ্ধ ঘরে দশরথ ভাঙ্গে নিজ মাথা ।
দুইদিনের পথ শেষে সন্ধ্যা অবশেষে
রাম এসে পৌঁছলেন শৃঙ্গবের দেশে।
তিনদিন পর ছেড়ে সারথী আর রথ
গঙ্গা পার হয়ে ধরে বনবাসের পথ
দশ বছর হেতা সেথা ঘুরে বনে বনে
অবশেষে রাম এলেন পঞ্চবটি বনে।
(প্রথম দৃশ্য শেষ –চলবে)