ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি একবার ভেবে দেখবেন?

২০১৭ অক্টোবর ২২ ২০:০৮:৫৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি একবার ভেবে দেখবেন?

প্রবীর সিকদার


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ কিংবা ফেলের অপশন থাকাটা কি উচিত, এমন ভাবনাটিই আমাকে আচ্ছন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হাজির হলে। ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে সেই ভাবনাটি হারিয়ে যায়। এবারও হয়তো তেমনটিই হতো, যদি আজকের এই লেখাটি না লিখতে বসতাম! প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাশ কিংবা ফেলের অপশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানে আছে কিনা সেটা আমার একেবারেই জানা নেই।

ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ কিংবা ফেলের সার্টিফিকেট নিতে আসেন না। ওরা দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়েই আসেন। সেই লক্ষ্যেই ওরা ভর্তির যোগ্যতা অর্জনের পরীক্ষায় অংশ নেয়। যাদের নাম ভর্তির তালিকায় থাকে না কিংবা ওই পরীক্ষার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হবার নম্বর পাননি, তাদেরকে ফেল বলা একেবারেই অনৈতিক। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাশ-ফেল হবে কেন? ওদেরকে ফেল বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি বোঝাতে চাইছে, ওরা পাশ করবার অযোগ্য হওয়া সত্বেও বোর্ড ওদেরকে এসএসসি কিংবা এইচএসসিতে পাশ করিয়েছে?

যদি এমনটি হয়, তাহলে তো বলতেই হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে প্রতিযোগিতামূলক ওই ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সারিতে বসিয়ে দিলে, তিনি ওই পরীক্ষায় পাশ করবেনই এমন গ্যারান্টি কি কেউ দিতে পারেন? ওই পরীক্ষায় ভালো না করা মানে কি ওই শিক্ষক এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাশের যোগ্য নন? অবশ্যই সেটি নয়। চাকুরি কিংবা ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অনেকেই পাশ নম্বর ৩৩ কিংবা ৩৫ কিংবা ৪০-এর নিচে নম্বর পেয়েও কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে নিয়োগ কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পান। সে ক্ষেত্রে তো এটা বলার সুযোগ নেই যে, ওরা পরীক্ষায় পাশ না করেও চাকুরিতে নিয়োগ পেয়েছে্ন কিংবা ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন! প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বাস্তবতাই এমন, ৫০ কিংবা ১০০ জনকে চাকুরি দেওয়া কিংবা ভর্তি করার লক্ষ্যে দরখাস্ত আহবান করা হয়। আবেদন করেন হয়তো ৫০০০ কিংবা ১০০০০ জন।

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ওদের মধ্য থেকে ৫০ কিংবা ১০০জনকে বাছাই করা হয়। এই সবক্ষেত্রে সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রাপ্ত নম্বর বড় থেকে ছোট হিসেবে সাজানো হয়। সেখান থেকে প্রথম ৫০ কিংবা ১০০জনকে চাকুরিতে নিয়োগ কিংবা কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এটাকে সুযোগ না বলে এভাবেই বলা সমীচীন যে, ওই ৫০ কিংবা ১০০ জন চাকুরি প্রাপ্তির কিংবা উচ্চশিক্ষায় ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এই সব ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায়, ১০০ নম্বরের মধ্যে মাত্র ১০ কিংবা ১৫ কিংবা ২০ কিংবা ৩০ প্রাপ্তরাও ওই যোগ্যতা অর্জন করেন। একই ভাবে ৫০ কিংবা ৬০ পেয়েও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে অনেকেই চাকুরিতে কিংবা উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ নাও পেতে পারেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাশ কিংবা ফেলের হিসাব তো পরীক্ষার আগেই বলে দেওয়া যায়। যেমন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা ৫০০০।

কিন্তু ওই ৫০০০ আসনের জন্য আবেদন করেছেন তথা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ২৫০০০জন। সেক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগেই বলে দিতে পারি, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করবেন মাত্র ২০% কিংবা বলতে পারি, সেই পরীক্ষায় ফেল করবেন ৮০%। এমন করে বলাটা শুধু অনুচিতই নয়, অনৈতিকও।

আমি আশা করবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ আগামীতে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে পাশ কিংবা ফেলের বর্তমান ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া বদল করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মূল ধারায় ফিরে যাবেন।

(এসএস/অ/অক্টোবর ২২, ২০১৭)