ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

উচ্চশিক্ষায় রমরমা বাণিজ্য ও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস

২০১৭ অক্টোবর ২২ ২০:১১:৫৫
উচ্চশিক্ষায় রমরমা বাণিজ্য ও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস

হাকিম মাহি


ছোট বেলা মা আমাকে ঘুম পাড়ানোর সময় প্রায়ই একটি গান গেয়ে শোনাতেন। ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয়, এখানে সভ্যতারই ফুল ফুটানো হয়’। আমি বলতাম, মা প্রতিদিন তুমি একই গান গাও কেন? মা বলতেন, তুমি এখন অনেক দুষ্টুমি করো, মারামারি করো। কয়েকদিন পরে স্কুলে ভর্তি হলে তুমি সভ্য হয়ে যাবে। দেখবা তোমার স্যাররা কারো সাথে বেয়াদবি করে না, বড়দের কথা শুনে! তোমরাও স্কুলে গেলে ওনাদের মতো একদিন ভালো মানুষ হয়ে যাবে। আসলেই এগুলো শুধু মায়ের ঘুম পাড়ানি গান ছিলো না। বাস্তবেও ওই গুরুজনরা যতোদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও মহানুভবতা ছিলো এবং তাঁদের সাহচর্যে যেসকল শিক্ষার্থী ছিলেন, আজও তাঁরা সকলেই মানবতার মূর্ত প্রতীক। কিন্তু এখন মানুষ যতো বড় নামীদামী শিক্ষাঙ্গনে পড়ে বড় শিক্ষিত হচ্ছে, বেশির ভাগ ততো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস ও অসভ্য হচ্ছে। ভক্তি, শ্রদ্ধা, মানবিকতা ভুলে যাচ্ছে গুরু শিষ্য উভয়ী। কারণ কী? আমি চেষ্টা করবো এর বাস্তব কিছু উদাহরণ দিয়ে কারণ ব্যাখ্যা ও সমাধান খুঁজে বের করতে।

সেপ্টেম্বর ২০১৫। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ভ্যাট আন্দোলনের জয় জয়কার মুহূর্ত। আমি আমার বিভাগের বড় ভাইদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বসেছিলাম। আলোচনা চলছে। কিছুক্ষণ পরে চার পাঁচ জন শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে প্রবেশ করে আমাদের কাছে আসলো। দেখলো, আমরা টেবিলের লম্বালম্বি দিককার চেয়ারে বসে আছি। ওরা আমাদের জিজ্ঞাসা করলো, আমরা নেতাদের চেয়ারে বসে আছি কেন? আমরা বললাম, ভাই আমরা তো জানি না এগুলো নেতাদের চেয়ার। আমরা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখানে আসছি একটি বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। ওরা বললো, তোরা যদি বহিরাগত না হতি তাহলে চড়াইয়া দাঁত ফেলে দিতাম, বেয়াদবি না! শুনে আমরা কোন ভাবে আত্ম সম্মান নিয়ে এক কর্নারে গিয়ে বসলাম।

২০১৬ এর শীতের কোন এক সন্ধ্যায়, আমার এক বন্ধু ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হলের পাশের মাঠে দাঁড়িয়ে ছাত্রদের ব্যাডমিন্টন খেলা দেখছিলো। হঠাৎ কোথা থেকে যেন একদল শিক্ষার্থী এসে বলছে, ওই সরে দাড়া। আমার বন্ধু বলছে, ওই দিকে তো জায়গার অভাব নাই। আমাকে তুই তুকারি বলে ফেলে দিচ্ছেন কেন? একথা বলতে না বলতেই একটা আদর্শ শিক্ষার্থী ওর গালে কষে এক চড় বসিয়ে দিলো। কি আর করার মার খেলো।

গেলো ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার আমার এক ছাত্র এবং কয়েকজন বন্ধুরা মিলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু বন্ধুদের আমন্ত্রণে বেড়াতে গিয়েছিলাম। মনে অনেক আনন্দ, দেশের অন্য একটি বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি ভ্রমণে। তাই একজন নিজের হাতে গড়া শিক্ষার্থীকে নিয়ে গেলাম। এতো বড় ক্যাম্পাস, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে ভাষা শহীদদের নামে প্রতিষ্ঠিত ছাত্র হোস্টেলের ক্যান্টিনের সামনে একটি বেঞ্চে বসলাম। মনের সুখে হাওয়া খাচ্ছি আর ক্যাম্পাসের অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করছি। এর মধ্যে কয়েকজন ছাত্ররা এসে আমাকে বলতেছে, তোর বাড়ি কোথায়, এখানে কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ছ? আমি বললাম, আমি বহিরাগত ছাত্র, এখানে আপনাদের ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছি। আমার বাড়ি মাদারীপুর। তারা বলল, জানস না, এখানে সিনিয়র এবং নেতারা ছাড়া কেউ বসে না? আমি বললাম, না ভাই জানি না। আমার বন্ধু বলল, মাহি ওঠে যাও। পরে তোমাকে তো পাবে না, আমার ছোটদের হাতে মার খেতে হবে।

বাংলাদেশের এমন কোন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা নেই, যেখানে শিক্ষক মহল ছাত্রদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছে, মাইর খেয়েছে এই সংবাদটি নেই। আমি প্রমাণ স্বরূপ কিছু পত্রিকার হেড লাইন তুলে দিলাম, ঢাবি ভিসির গাড়িতে হামলা, বাসভবন ঘেরাও| শিক্ষাঙ্গন (যুগান্তর)| রাবিতে ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত : বিচারের দাবিতে মানববন্ধন-স্মারকলিপি, মামলা (নয়া দিগন্ত), জগন্নাথে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ৬ ছাত্র বহিষ্কার (প্রথম আলো), শিক্ষকদের ওপর হামলা :ওরা কারা|(দৈনিক ইত্তেফাক)। শুধু ছাত্ররাই যে শিক্ষকদের অপমান করে তা নয়। বাবা মায়ের তুল্য শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের অপমানসহ যৌন নির্যাতন চালাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। আমি তাঁদের এই জঘন্য ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের উদাহরণ দিতে লজ্জাবোধ করছি। এগুলো জাতীয় দৈনিক ও ইন্টারনেটে পাওয়া খুব সহজ।

যদি কারণ খুঁজতে যাই, যে উচ্চ শিক্ষায় এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস কেন? তাহলে অনেকগুলো কারণ খুঁজে পাবো। বিশেষ করে যেগুলো উল্লেখ না করলেই নয়, তা আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো। ক. নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষা কারিকলাম। আমি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছাত্র। আমার যে কোর্স ডিজাইন করা হয়েছে, তাতে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার অনেক পথ ও মত দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা যে শুধু একজন শিক্ষার্থীকে জীবিকা নির্বাহের সূত্রই গলাধকরণ করায় না, নৈতিক ও মানবিক করেও গড়ে তোলে, সেই ব্যাপারে কোন শিক্ষা নেই এখানে। নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টতা এগুলোর মরণ তো অনেক আগেই হয়েছে এই বিদ্যাপীঠে। খ. নীতিবান শিক্ষকের অভাব। কোন এক সময় ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক প্রবন্ধ থাকতো শিক্ষা কারিকুলামে। কারণ, গুরু শিষ্য উভয় যেন নীতিবান হন। সম্ভবত ৮/১০ বছর যাবত এগুলো নেই। আর থাকলেও সৃজনশীল নীতিতে এই গল্প আর পড়তে হয় না কাউকে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা গল্প প্রবন্ধ কেউ ধরেও দেখে না। কারণ, বই থেকে কোন সরাসরি বড় প্রশ্ন থাকে না। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষক হিসেবে ছেলে মেয়েরা যাদের পায়, তাঁদের বেশির ভাগ বিভিন্ন অপকর্ম ও বিভিন্ন দোষে দুষ্ট। আমি তাঁর মতো হতে চাই, এমন সভ্যতার মডেল হিসেবে সাক্ষাত ভগবান কেউ নেই বললে মনে হয় ভুল হবে না।

পলাশের বাবা পলাশকে নিয়ে সবসময় স্বপ্ন দেখতেন তাঁর ছেলে বিচারক হবেন। ছোট বেলা থেকে ওভাবেই বড় হয়েছিলো পলাশ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মানের সাথে পাস করে ঢাকায় চলে আসলেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। ভাবলেন, সবাই দেশের নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে মানুষ হয়, আমিও হব। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন। পাসও করলেন, কিন্তু একটি মার্কসের জন্য আইন বিষয়ে পড়তে পারলেন না। আর যে বিষয় পেলেন, তা তাঁর স্বপ্ন নয়। তাই পাবলিকে পড়া আর হল না। এরি মাঝে পলাশের বাবা মারা গেলেন। কোন গতি না দেখে কাজে লেগে গেলেন পলাশ। কাজ করে থাকা খাওয়া ও পড়ার একটা ছোট্ট সুযোগ হলো। তাই রাজধানীতে অনেক ঘুরে একটি কম বেতন ভুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন সাংবাদিকতা বিভাগে। এখানে প্রতি সেমিস্টারে টিউশন ফি দিতে হবে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য ভার্সিটিতে একই বিষয়ে পড়লে চার মাসে বেতন দিতে হয় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজারের মতো। একটা সেমিস্টারে পড়ে ভালো একটা রেজাল্ট করে তাঁদের বিভাগের অ্যাডভাইজর স্যারের কাছে চলে গেলেন একটা বড় স্কলারশিপ এর জন্য। স্যার তাঁর সব কথা শুনে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ৩৭% ওয়েভার এনে দিলেন। তাতে পলাশকে দিতে হবে প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ১৬ হাজার। আর সে ফাস্ট/সেকেন্ড হলে আরও পাঁচ হাজার টাকা স্কলারশিপ পাবে। সর্বমোট তাঁকে ফি দিতে হবে চার মাসে ১১ হাজার টাকা। সে অনেক খুশি। কিন্তু তাঁর এই নিষ্পাপ খুশি বেশি দিন স্থায়ী হলো না।

ইউজিসি’র সহযোগিতায় সরকার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করে দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশের মতো এই অসহায় শিক্ষার্থীদের উপর। তা নিয়ে জীবন বাজি রেখে তীব্র আন্দোলন করে পলাশরা। অবশেষে সরকার চাপের মুখে শিক্ষার উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়।

ইউজিসিকে হাত করে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে নতুন নতুন কৌশল ব্যাবহার করে। যেমন পলাশদের মতো অসহায়দের নিয়েই বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাঁদের সেমিস্টার ফি নিতে চার মাসে তিনটি সময় নির্ধারণ করে। এই সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দিতে পারলে যেসমস্ত ছাত্র/ছাত্রী স্কলারশিপ পায় তা বন্ধ হয়ে যাবে। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ফাস্ট/সেকেন্ড হলে যে পাঁচ হাজার টাকা পুরষ্কার পায় তাও দেয়া হবে না। আরও সময় মতো ফি না দেয়ায় ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। তার মানে ১১ হাজার আর দিতে পারছে না, এমনকি ২৪ হাজারও দিতে পারছে না। তাহলে এখন প্রতি সেমিস্টারে তাঁদের মানে শিক্ষার্থীদের ২৭ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। আর এ টাকা পরীক্ষার আগের দিন জমা দিলেও একই নিয়মে সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।

প্রতিবছর যে পরিমাণ শিক্ষার্থীরা পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়, তাতে প্রায় ৬২% দরিদ্র ছাত্রছাত্রীকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, ১. পাবলিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে একদম স্বল্প আসন সংখ্যা। ২. শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক সন্ত্রাস। ৩. এই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনো আধুনিকায়ন করা হয় নি। তারপরেও যতগুলো আসন সংখ্যা রয়েছে, সেগুলো মেধাবীদের জন্য নয়। কিছু আসন এই যুগের নিকৃষ্ট কয়েকটি কোঠায় সীমাবদ্ধ। সরকারি কোঠা, ছাত্র রাজনীতি কোঠা, গোত্রীয় কোঠা, সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা কোঠা, আরও আছে টাকার বিনিময়ে বাণিজ্য কোঠা। ছি! এখানে শুধু মেধার কোঠাই শূন্য। যতটুকু এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি অনুদান ও বরাদ্ধ পায়, সেগুলো সবক্ষমতাধররা মিলে রাঘব বোয়ালের মতো গিলে ফেলে।

বিজনেস, ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ পাইনি, তাই চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা কি জিনিস, কাকে বলে বুঝতে পারিনি। অবশেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমরা বুঝতে পারলাম চক্রবৃদ্ধি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি। একটি উচ্চ শিক্ষায় টিউশন ফি যখন ১১ হাজার থেকে তিন মাসে ২৭ হাজারে পৌঁছে যায়, তাকে আমি কি বলবো, তা যারা ব্যাংকে সুদের ব্যাবসা করেন, তারাই বলতে পারবেন। আপনারা যারা অভিজ্ঞ তাঁরা বুঝবেন, মূল টাকার চেয়ে তিনগুণ যেখানে বেশি সুদ, এটি অতি ঘৃণ্য ও জঘন্য। এই নমুনা পৃথিবীর কোন ব্যাংক, বীমা এমন কি ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানেও নেই। সুতরাং সরকারের উচিৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামক এই চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা সুদিদের কঠোর আইনের আওতায় এনে প্রতিষ্ঠান চালাতে অনুমতি দেয়া, অথবা দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিয়ে শিক্ষা নামক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া।

পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র কাউঞ্ছিল রয়েছে। যারা তাঁদের অধিকারের জন্য প্রায়সময় আন্দোলন করেন। আমাদের দেশেও ছিলো এই ছাত্র রাজনীতির নমুনা, যাদের হাতে সফলতা এসেছিলো ভাষা আন্দোলনের এমনকি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেরও। আর আজ ছাত্র রাজনীতি হয় ইতিহাসের ঘৃণ্য চরিত্র নিজেদের স্বার্থে রক্তপাত করার জন্য। যে কারণে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আজ মেধা শূন্য। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিটি ক্যাম্পাস জুড়ে মানুষ খুনি নব্য কিছু কসাইয়ের দল। সময় যতো যাচ্ছে, কসাইয়ের দল ততো ভারী হচ্ছে। ফলে, অধিকাংশ মেধা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এখনো আমরা সেই পশু শিকারি যুগেই বসবাস করছি। সভ্যতা আমাদের থেকে আজ অনেক দূরে।

তাহলে এর সমাধান কোথায়? একমাত্র সমাধান মানবিকতায়। আমি বলবো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সন্ত্রাস নেই, সবচেয়ে বড় একটি সন্ত্রাস আছে। সেটি উল্লেখিত রমরমা বাণিজ্য। যেটি খুনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। খুন তো একটি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। কিন্তু শিক্ষায় চক্রবৃদ্ধি হারে বাণিজ্য পুরো একটি জাতিকে চিরোতরে ধ্বংস করে দেয়। এই বাণিজ্য বন্ধ করুন। আর পাবলিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসকে না বলুন।

একটি মেধা, একটি দেশের খনিজ সম্পদের চেয়েও বেশি মূল্যবান। এমেধাগুলো দেশের ঘৃণ্য রাজনীতির লাঠি হিসেবে ব্যাবহার চিরতরে বন্ধ করুন। দেখবেন এই ছাত্র সমাজ উন্নয়নের মডেল হতে সময়ের ব্যাপার। এরাই এক সময় দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবিক কর্ণধার হবে। গুরুজনদের প্রতি দাবি থাকলো, আপনার মহান পেশাটার স্বার্থে জাতি গঠনে নিঃস্বার্থ শ্রমটি দিন। আপনি এই যুগেও হতে পারবেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়কার শিক্ষা গুরু। শরীরের কোন অঙ্গে ব্যথা পেলে যেমন সারা শরীর ব্যথা হয়ে যায়, তেমনি একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি হল শিক্ষা। আর এই শিক্ষাঙ্গন যখন দুর্নীতিবাজদের হাতে চলে যায়, তখন সারা দেশ ধ্বংসের অকুল দরিয়ায় হাবুডুবু খায়। বঙ্গবন্ধুর সেই বাণীটি আজও এই সমাজে দৃশ্যমান, ‘দুর্নীতি আমার বাংলার কৃষক করে না, দুর্নীতি আমার বাংলার শ্রমিক করে না, দুর্নীতি করে আমাদের শিক্ষিত সমাজ’।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।
[email protected]