ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উচ্চতায় বঙ্গবন্ধু 

২০১৭ নভেম্বর ২২ ১৬:৪০:৩১
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উচ্চতায় বঙ্গবন্ধু 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবার ‘বিশ্বপ্রামান্য ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি পেলো ইউনেস্কো থেকে। গত ৩০ অক্টোবর সংস্থাটির কার্যালয় প্যারিস থেকে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসে। বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য এ এক বিরল সম্মান।

৭১ এর বাঁশিওয়ালা শেখ মুজিব ওই দিন এক যাদুকরী সুর বাজিয়েছিলেন, সেই সুরের মূর্ছনায় আবিস্ট ও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সকল বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্বসংস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেল।

এ স্বীকৃতির এত বিলম্ব হওয়ার কারণ কী? এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। তবে দু’টি প্রধান কারণ হলো, প্রতমত স্বাধীনতার প্রেরণাদানকারী এ ভাষণটি নিয়ে দেশ বা বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। দ্বিতীয়টি হলো দেশে আজও কিছু মানুষ আছেন যারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সমার্থ্য বুঝতে ব্যর্থ অথবা পাকিস্তানি ভাবধারায় আজও আচ্ছন্ন রয়েছেন। তারপরও এ ভাষণটির আন্তর্জাতিক আবেদন কম তা বলা যায় না।

বিবিসি টেলিভিশনের দূরপাচ্য সংবাদদাতা ব্রায়ান ব্যরন বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর তাঁকে নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের ২৮ আগস্ট তার সংবাদ বিবরণীতে বলেন, ‘শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনসাধারণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটি কেবল সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, যখন নিঃসন্ধেহে তাঁর বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বারক-চিহ্ন এবং তাঁর কবরস্থান পবিত্র পুন্য তীর্থে পরিনত হবে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরদিন যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছাপা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়,‘সবকিছু সত্ত্বেও শেখ মুজিব স্বরণীয় হয়ে থাকবেন এজন্য যে, তাকে ছাড়া বাংলাদেশ কখনও বাস্তবে পরিনত হতো না।’ জনপ্রিয় মার্কিন সাময়িকী ‘নিউইয়র্ক’ এর ‘রাজনীতির কবি’ খ্যাত শেখ মুজিবের অলিখিত, শ্বৈল্পিক, কাব্যিক এ ভাষণটি একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল রচনা করেছিল এবং তা নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনা, গবেষণা ও আগ্রহের অন্ত নেই।

বলা হয় বিগত প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের অগ্রযাত্রার সহায়ক ঘোষণাগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণাও একটি।

১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের একটি সংখ্যায় প্যারিসের একটি বিখ্যাত সংবাদপত্রে ফরাসী লেখক জড়নবৎঃ ঊংপড়ঁৎঢ়রঃ এরম মন্তব্য ছিল, ‘বড় নেতা সে-ই, যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বড় হতে থাকে। তাঁকে খুন করে সমাজ থেকে নির্বাসন করা যায় না। সে বার বার ফিরে আসে। প্রয়াত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সেই মাপের নেতা।’

ব্রিটেনের বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী জ্যাক ওয়াডিস বলেছেন, চারটি ঘোষণা মানব সভ্যতার সড়ক নির্মানের সহায়ক হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চেও ভাষণকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদিও এই ভাষণটিতে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আসলে এটি তাঁর সমকালীন বিশ্বে সব নিপীড়িত জাতিরই মুক্তি সংগ্রামের দিক নির্দেশনা।’

এ অলিখিত ভাষণটির অসাধারণ শব্দ বিন্নাস, যুৎসই অর্থবহ উচ্চারনসহ বক্তার তাৎক্ষনিক শারীরিক ভাষার মিশ্রন যে অনন্যতা দিয়েছে তা বিস্ময়কর। নানা আঙ্গিকে দেশে-বিদেশে গবেষণার মাধ্যমে একদিন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর এক নম্বর ও সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে তা আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়।

আমাদের জাতীয় জীবনে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ভাষণের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ছাত্র, নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার জন্য বা সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচার শুরু করতে হবে এখনই । এছাড়া বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করতে হবে যাতে প্রথিবীর মানুষ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আরও গভীরভাবে জানতে পারে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সাফল্য আছে অনেক, ব্যর্থতাও কম নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে সকল ব্যর্থতা কাটাতে হবে আমাদের।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।