ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

সাতক্ষীরায় সাক্ষ্য দেওয়ায় হাত ভেঙে দেওয়া হলো সাক্ষী আকবর আলীকে

২০১৭ নভেম্বর ২৪ ১৭:৩৮:১১
সাতক্ষীরায় সাক্ষ্য দেওয়ায় হাত ভেঙে দেওয়া হলো সাক্ষী আকবর আলীকে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আন্তর্জাতিক যুদ্ধারপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দেওয়ায় এক সাক্ষীকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার পাইথালী বাজার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ, ওই সাক্ষী শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানে পুনরায় হামলা হতে পারে এমন খবরে তিনি দুপুরে পালিয়ে গেছেন।

আহতের নাম আকবর আলী (৬২)। তার বাড়ি আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামে।

এ মলার বাদি সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আলা উদ্দিন সানা জানান, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধচলাকালিন আশাশুনি উপজেলার চাপড়া গ্রামের সদরউদ্দিন সরদারের ছেলে রাজাকার কমাণ্ডার লিয়াকত আলী (৭৫), তার ভাই মুজিবর রহমান সরদার (৭০) ও একই গ্রামের তাহের সরদারের ছেলে আবুল হাশেম সরদার (৬৮) রাজাকার বাহিনী গঠণ করে চাপড়া গ্রামের আমিনউদ্দিন সরদারের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন।

তিনি জানান, ওই ক্যাম্পে অবস্থানকারি প্রায় ৫০ জন রাজাকার রাজাকার কমাণ্ডার লিয়াকত আলী, মুজিবর ও হাশেম সরদারের নির্দেশনায় হত্যা, খুন, জখম ধর্ষণ, বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করে। তাদেরই নির্দশনায় উপজেলার স্বরাপপুর গ্রামের মনোহর দাশের ছেলে কৃষ্ণপদ দাশ, চণ্ডী চরণ দাশের ছেলে মেঘনাথ দাশ, একই গ্রামের তারাপদ দাশকে বাড়ি থেকে তুলে এনে কুল্ল্যা তিন রাস্তার মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করে। একইভাবে লিয়াকত সরদারের নির্দেশে চাপড়া গ্রামের নিজামউদ্দিন সরদারের ছেলে আনিছুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, দয়ারঘাট গ্রামের গোরাচাঁদ ঠাকুরের মেয়ে নমিতা রানী ঠাকুরকে অপহরণ করে ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় বাবা ও মেয়েকে গুলি করে হত্যা করে। ওই সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে আশাশুনি গ্রামের আফতাবউদ্দিনের ছেলে আব্দুর রকিবের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে আব্দুর রাজ্জাককে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা আশাশুনির বিভিন্ন স্থানে নির্মম অত্যাচার চালায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারা বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে পূর্বের অপকর্ম ধামাচাপা দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর তিনি বাধ্য হয়ে বিবেকের কারণে গত ৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার আমলী আদালত-১ এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় রাজাকার কমাণ্ডার লিয়াকত আলী সরদার, তার ভাই মুজিবর সরদার ও একই গ্রামের হাশেম সরদারকে আসামী করা হয়। মামলায় সাতজনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক হাবিবুল্লাহ মাহমুদ মামলাটি বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাব্যুনালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওকালতনামাসহ মামলার নথি বাদিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এ মামলার খবর পেয়ে আসামীরা ওই মামলার সাক্ষী আবুল হোসেন, আব্দুর রকীব, সেলিম রেজা, আব্দুস সাত্তার, মিজানুর রহমান সানা ও রিয়াজউদ্দিন মোড়লকে হুমকি ধামকি দিয়ে তাদেরকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি আন্তজার্তিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেয়ে মামলা দাখিল করেন। এত সাতক্ষীরা আদালতে দায়েরকৃত মামলার একমাত্র সাক্ষী নুরুল ইসলা বাবুলসহ আরো নতুন সাতজনকে সাক্ষী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। বিচারক মামলাটি তদন্ত করে সিডিসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরই জের ধরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুরালের সহকারি পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক গত মঙ্গলবার ও বুধবার সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে এসে আটজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষী দিয়েছেন এমন খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার রাত ৯টার দিকে পাইথালী বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বুধহাটার আকবর আলীর (৬২) উপর হামলা চালায় আসামী হাশেম আলী সরদার, কবীর হোসেনসহ কয়েকজন। তারা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আকবর আলীর বাম হাত ভেঙে দেয়। তার বাম কাঁধের উপর হামলা করে মারাত্মক জখম করার পর রাতে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তারই পরামর্শে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে আকবর আলীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আকবর আলীর স্বজনরা জানান, মামলায় সাক্ষী দেওয়ায় তারাও হুমকির মুখে। অপর সাক্ষী সাদেক আলীকে হুমকি দেওয়ায় তিনি শুক্রবার দুপুর দু’ টোর দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকবর আলীকে জানালে তারা দু’জন মিলে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে আকবর ও ছাদেক প্রাণের ভয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২৪, ২০১৭)