ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » রাজনীতি » বিস্তারিত

খালেদা জিয়া ও জাতির কাছে ক্ষমা চান : প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল

২০১৭ ডিসেম্বর ০৮ ১৪:৩৮:১০
খালেদা জিয়া ও জাতির কাছে ক্ষমা চান : প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার :বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের দেশের বাইরে বিনিয়োগ নিয়ে যে তথ্য তুলে ধরেছেন, তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া ও তাঁর সন্তানদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হব।”

গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সৌদিতে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার বিশাল শপিংমল ও সম্পদ পাওয়ার খবর বিদেশ থেকে এসেছে। টাকা পাচার, মানিলন্ডারিং বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার ছেলেরা করেছে।”

ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া আজ (শুক্রবার) সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গতকাল অনৈতিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কল্পিত পাচারকৃত সম্পদ সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। দুর্নীতির এইসব কল্পকাহিনির মূল উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা এবং রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ, যা সৌদি আরবের শপিংমলে বিনিয়োগ করা হয়েছে। কাতারে ইকরা নামে একটি বহুতল ভবন তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপির এ ক্ষেত্রে মালিকানার অর্থ প্রায় ১২ বিলিয়ন, যা বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ কোটি টাকা, বাংলাদেশের অনেক গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশ পায়নি। তাই গণমাধ্যমকে তিনি শিষ্টাচারবহির্ভূত বলেছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “শেখ হাসিনা বিএনপির বিরুদ্ধে দেওয়া দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা তন্নতন্ন করেও আজ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি। জোর করে গণমাধ্যমে প্রকাশ, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে। বানোয়াট এসব তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহার করে খালেদা জিয়া ও জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে এমন মিথ্যা মন্তব্য না করার জন্যেও আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কানাডাভিত্তিক একটি কথিত টেলিভিশন চ্যানেলের বরাত দিয়ে অপরিচিত কয়েকটি অনলাইন মাধ্যমে এই মিথ্যা তথ্য রটনা করা হয়েছে যে, খালেদা জিয়া ও তাঁর সন্তানেরা সৌদি আরবের ‘আল আরাফা’ শপিংমল এবং কাতারে বাণিজ্যিক ভবন ‘তিনারাট’ এ বিনিয়োগ করেছেন। আরাফাত রহমান কোকো কাতারে ‘ইকরা’ নামের একটি বহুতল ভবনের মালিক। আরবসহ ১২টি দেশে জিয়া পরিবারের ১২ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় এক লাখ কোটি টাকা) সম্পদ রয়েছে। আমরা সৌদি আরবে খোঁজ নিয়েছি, গুগলে অনুসন্ধান করে দেখেছি, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই।”

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্টের নামে যে মেগা লুট করছেন, জনগণ তা জানেন। পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর আণবিক শক্তি প্রকল্প, পায়রা বন্দর, এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভিওআইপি, স্যাটেলাইট স্টেশন প্রতিটি সেতু, সড়ক, মহাসড়ক, প্রতিটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের যে অভিযোগ উঠছে, জনগণ তা হিসাব রাখছে। দেশ বিদেশের পত্রপত্রিকায় আপনাদের দলের মন্ত্রী, নেতা ও পরিবারে সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। কানাডার বেগমপাড়া, ব্রিটেন, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বেলারুশ, সুইস ব্যাংক, পানামা অবশোর ইনভেস্টমেন্ট তালিকায় আপনাদের অনেকের নাম উঠে আসছে। ফ্লোরিডা, ওয়াশিংটন ডিসি, সিএটল বাফেলো, আমেরিকা, কানাডাসহ ব্যয়বহুল শহরগুলোতে কাদের সন্তানদের এবং পরিবারে সদস্যদের নামে বাড়ি ও সম্পদ কেনা হয়েছে, তার হিসাব জনগণ রাখছে।”

প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “কাচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছুড়বেন না। আপনাদের লুটপাটের যে হিসাব, তা জনগণ জানে। আপনার মুখে সুনীতি এবং সুশাসনের কথা বেমানান।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭)