ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » রাজনীতি » বিস্তারিত

খালেদার দুর্নীতির মামলার রায়ের কী প্রভাব?

২০১৭ ডিসেম্বর ০৯ ১৩:৩৮:৪৩
খালেদার দুর্নীতির মামলার রায়ের কী প্রভাব?

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলা রায়ের পর্যায়ে চলে এসেছে। স্পষ্টতই বিএনপির চোখ আদালতের দিকে। রায় খালেদা জিয়ার পক্ষে গেলে নির্বাচন করার যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠবে না। তবে বিরুদ্ধে গেলে আগামী নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবেন কি না, এই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গণে।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখনও নিশ্চিত নয়। তারপরও দলের চেয়ারপারসনের নির্বাচন করার আইনি যোগ্যতা থাকে কি না, এ নিয়ে কৌতুহল আছে।

আইন অনুযায়ী দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার দুই বছরের বেশি সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ হারাবেন। বিদেশে অর্থপাচারের এক মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ এসেছে আপিল বিভাগ থেকে। ফলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে গেছেন। এখন খালেদা জিয়ারও যদি একই পরিণতি হয়, তাহলে বিএনপির জন্য বিষয়টি সুখকর হবে না। মূলত এ কারণেই খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তার দুর্নীতি মামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার দুই মামলার রায় কবে হবে সে বিষয়ে অবশ্য সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ ঘোষণা হয়নি এখনও। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৫ ডিসেম্বরে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিএনপি নেত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সময় ঠিক করে দিয়েছে আদালত। আর এর মাধ্যমেই শেষ হবে শুনানি, এরপর যে কোনো দিন ঘোষণা হতে পারে রায়ের দিন।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ ধারা অনুযায়ী, দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। সেই সঙ্গে সাজা ভোগ শেষে পাঁচ বছর পার করার পরই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নিম্ন আদালতের দেয়া দুই বছরের বেশি সাজা হাইকোর্টে স্টে (স্থগিত) না হলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে বেগম জিয়ার মামলা এখনো শেষ হয়নি। এ বিষয়ে এখনো কিছু বলা যাবে না।’

এই রায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গেলে তার প্রভাব কী হবে, তার সাজা হলে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না-এসব বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চান না দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলা এখনো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তাও অনুমান করে বলা যাবে না। তাই এখনই কিছু বলা যাবে না।’

বিচারিক আদালতের রায়ই অবশ্য শেষ কথা নয়

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, বিচারিক আদালতে সাজা হওয়ার পরও নির্বাচনে অংশ নেয়ার নজির আছে। কারণ, উচ্চ আদালতে আপিল গ্রহণ করা হলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্থগিত হয়ে যায় আপনাআপনি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, তাদের নেত্রীর আশঙ্কা অনুযায়ী এই মামলার রায় তাদের বিরুদ্ধে গেলে উচ্চ আদালতে অবশ্যই আপিল করা হবে। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী এক বছরের মধ্যে এই মামলার মীমাংসা উচ্চ আদালতে হয়ে যাবে বলে তারা মনে করেন না। ফলে বিচারিক আদালতের রায় বিরুদ্ধে গেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকার কারণ নেই।

তবে উচ্চ আদালতে কোনো কোনো মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে দ্রুত। ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ আদালতে সাত খুন মামলার রায় হয়েছিল। আর হাইকোর্টে আদালতে আপিলের রায় হয়েছে গত আগস্টে। তবে এখনও আপিল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সে হিসাবেও চলতি বছর এই মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

বিচারিক আদালতেই আট বছর

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে নয় বছর আগে। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা করা হয়।

বিশেষ জজ আদালতে এই মামলায় প্রতিবেদন জমা পড়েছে আট বছরেরও বেশি সময় আগে, ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট। তবে আদালতে অভিযোগপত্র আসার পরও বিচার শুরু করতে করতেই লেগে যায় পাঁচ বছর। খালেদা জিয়া বারবার সময় নেয়ার পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়।

তবে শুনানি শুরুর পরও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ১৫০ বারেরও বেশি সময় নেয়া এবং ২০ বারেরও বেশি উচ্চ আদালতে আবেদনের কারণে সময়ক্ষেপন হয়েছে। আর বিচার শুরুর পৌনে চার বছরের মাথায় বিচারিক আদালতে মামলাটি শেষ পর্যায়ে এসেছে।

বিচারিক আদালতে যে মামলার নিষ্পত্তিতে এত সময় লেগেছে, সে মামলা উচ্চ আদালতে আগামী নির্বাচনের আগে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে মনে করেন না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

সাজার আশঙ্কা আদালতেই করেছেন খালেদা

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা হতে পারে, আদালতেই এমন বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি এই সাজার পরোয়া করেন না। দুই মামলাতেই দুর্নীতির অভিযোগকে অসত্য, বানোয়াট, হয়রানিমূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার বদনাম করতেই এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।

তারপরও সাজার আশঙ্কা করার কারণ হিসেবে গত ২ নভেম্বর আদালতে খালেদা জিয়া বলেন. অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনরা একটি নীল নকশা প্রণয়ন করেছে। ৯ নভেম্বর আদালতে তিনি আবার বলেন, ‘শাসক মহলের ইচ্ছে অনুযায়ী আমাদের বিরুদ্ধে কোন একটা রায় দেওয়া হবে।’

মামলায় কী অভিযোগ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি করা হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।

এতে খালেদা জিয়া ছাড়াও তার ছেলে তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে আসামি করা হয়।

একই আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে চলছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা। এই মামলাটি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে।

ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ শুরু হয় বিচার।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭)