ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিস্তারিত

বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে যুদ্ধ করে : জাফর ইকবাল 

২০১৭ ডিসেম্বর ০৯ ১৬:০১:৩২
বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে যুদ্ধ করে : জাফর ইকবাল 

স্টাফ রিপোর্টার :নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, কাগজে সিগনেচার (সই) করে কেউ বাংলাদেশের জন্ম দেয়নি। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে যুদ্ধ করে।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভয় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে জাফর ইকবার বলেন, তোমাদের বয়সের ছেলেরা যুদ্ধ করে এই বাংলাদেশটাকে নিয়ে এসেছে। সেই বাংলাদেশটাকে এখন আরও সামনে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব তোমাদের প্রজন্মের। তোমরা বাংলাদেশটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও, পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর একটি দেশ তৈরি করো। যে দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন থাকবে না। তাহলে যে মানুষরা জীবন দিয়ে বাংলাদেশ তৈরি করেছিল তাদের আত্মা শান্তি পাবে।

আলোচনা সভায় প্রায় ১৫ মিনিট বক্তব্য দেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, যার পুরোটাই ছিল নতুন প্রজন্মের জন্য বিভিন্ন উপদেশমূলক।

স্বার্থ ছাড়াই অন্যের উপকার করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো প্রকার স্বার্থ ছাড়া অন্য মানুষকে কোনো কিছু দিলে তখন যে আনন্দ হয়, সে আনন্দের কোনো তুলনা নেই। কাজেই তোমরা তোমাদের জীবনে কী করবে? অন্যের জন্য কিছু করবে। আমি যদি অসৎ হই, আমি যদি দুর্নীতিবাজ হই, আমার জীবনে কোনো আনন্দ নেই।

‘আয়নার সামনে দাঁড়াও, চুল আঁচড়ানোর জন্য, তাকাও আয়ানার দিকে মনে হবে চোর দাঁড়িয়ে আছে। কেমন লাগে বলো? আজ এক লাখ চুরি করেছি, ওই জায়গা থেকে ১০ লাখ টাকা চুরি করবো। বলো এ জীবনে কোন আনন্দ আছে? আমার তো খুব ছোট একটা জীবন। জীবনটাকে আনন্দময় করতে হবে। জীবনটা আনন্দময় করা খুব সহজ। শুধুমাত্র কোনো অন্যায় করো না, অন্যকে অন্যায় করতে দিও না, দেখবা জীবনটা কতো আনন্দময় হয়।’

জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘আমরা তিন ভাই, হুমায়ূন আহমেদ, আমি আর আমার ছোট ভাই। হুমায়ূন আহমেদ একটি শার্ট গায়ে দিয়ে বাইরে বের হয়ে কাজ শেষ করে ফিরে এসেছে, তারপর আমি সেই শার্ট গায়ে দিয়ে বের হতাম। আমরা এ রকম জীবন পার করে এসেছি। বেশি তো লাগে না। অল্প টাকা উপার্জন করেই তো জীবন চলে যায়। এতো টাকা দিয়ে কী করবো?’

নতুন সহস্রাব্দের সম্পদ ‘জ্ঞান’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০০ সালে যখন নতুন মিলেনিয়াম হয়েছে তখন পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানী-গুনি মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলেছেন। কথাটা হলো- নতুন সহস্রাব্দের সম্পদ হলো জ্ঞান। ওরা কিন্তু বলেনি নতুন সহস্রাব্দের সম্পদ হচ্ছে কয়লার খনি, সোনার খনি, তেলের খনি, হীরার খনি, রূপার খনি, ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি, সফটওয়্যার, রোবট। ওরা বলেছে সম্পদ হলো জ্ঞান।

‘তার মানে হলো এই যে তোমরা যে ছেলে-মেয়েরা বসে আছো.. তোমরা যদি ঠিক মতো পড়া-লেখা করো, তোমরা সবাই একটা সম্পদের খনি। পকেটে টাকা থাকাটা তো সম্পদ না, ঐশ্বর্য না। ঐশ্বর্য হলো মাথার মধ্যে কী জ্ঞান আছে। আমার মানিব্যাগের দরকার নেই। আমার মাথার মধ্যে জ্ঞান নিয়ে ঘুরে বেড়াবো, আমি সবকিছু করতে পারবো। আমার যদি জ্ঞান থাকে তাহলে পৃথিবীর সবদেশ আমাকে নিয়ে টানাটানি করবে। নিজের দেশ তো করবেই।’

তরুণদেন বই পড়ার উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, আজকাল যে নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, সেই প্রজন্মের বই পড়ার অভ্যাস কমে আসছে। এখন নতুন সময় এসেছে সবার হাতে একটা করে স্মার্টফোন থাকে। সেই স্মার্টফোন দিয়ে ফেসবুক খোলে। হায়রে হায়, কেউ টের পেল না আমাদের দেশের সমস্ত তথ্য ওদের কাছে আছে। পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলো অন্যদের কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, ওই তথ্য দিয়ে। আমাদের সব তথ্য চলে যাচ্ছে, আর আমরা আনন্দ পাচ্ছি।

ফেসবুক প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাফর ইকবাল আরও বলেন, কিছুদিন আগে আমি একটি আর্টিকেল পড়েছি। ফেসবুকের প্রথম প্রেসিডেন্ট সেই আর্টিকেল লিখেছেন। তিনি লিখেছেন আমরা যখন প্রথমে ফেসবুক শুরু করি, আমরা সমস্ত পরিশ্রম করেছি যাতে মানুষ এটাতে ঢোকে, আর যেন বের না হয়। তারপর তিনি লিখেছেন, হায়রে! আমরা পৃথিবীর নতুন প্রজন্মের না জানি কী সর্বনাশ করেছি। তারপর তিনি বলেছেন, আমরা সবাই টেকনোলজি ব্যবহার করবো। কিন্তু টেকনোলজি যাতে আমাকে ব্যবহার করতে না পারে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন, কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭)