ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » স্বাস্থ্য » বিস্তারিত

মুখ বলে দেবে শরীরের অবস্থা!

২০১৭ ডিসেম্বর ০৯ ১৭:১৪:১২
মুখ বলে দেবে শরীরের অবস্থা!

স্বাস্থ্য ডেস্ক :কথাটা শুনে প্রথমটায় অবাক লাগলেও একথা ইতিমধ্যেই এক আন্তর্জাতিক স্টাডিকে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে মুখের শেপ দেখে অনেকংশেই শরীরের অন্দের কী খেল চলছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধরণা করে ফেলা সম্ভব। শুধু জ্ঞান থাকতে হবে সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে। তাই তো আজ এই প্রবন্ধে মুখের অবয়ব অনুসারে কীভাবে শরীর সম্পর্কে জানা সম্ভব, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা পত্রটিতে দাবি করা হয়েছে, যাদের মুখ খুব রোগাটে ধরনের হয়, তারা সাধারণত খুব স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকেন, অন্যদিকে যাদের মুখের নিচের অংশে অল্প করে চর্বির পরত থাকে, তাদের রক্তচাপ নিয়ে কোনও দিন চিন্তায় পরতে হয় না। কিন্তু শরীরের ভাল-মন্দের সঙ্গে মুখের অবয়বের সম্পর্কটা ঠিক কোথায়?

গবেষকরা এক্ষেত্রে "বি এম আই" বা বডি মাস ইনডেক্সের সাহায্য নিয়েছেন। তাদের মতে আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম শরীরের প্রতিটি অংশের খোজ খবর প্রতি সেকেন্ডে নিয়ে থাকে। সেই কারণেই তো শরীরের অন্দরে কোনও রোগ বাসা বাঁধলে তার প্রভাব মুখের উপর পরতে শুরু করে, আর এমনটা যখনই হয়, তখনই মস্তিষ্কের কাছে সেই খবর পৌঁছে যায়। কিন্তু সবার পক্ষে সেই খবরকে ডিকোড করা সম্ভব হয় না। মুখের এমন পরিবর্তন সম্পর্কে যাদের জ্ঞান রয়েছে, কেবল তাদের পক্ষেই এই ফেসিয়াল পরিবর্তন বুঝতে পারা সম্ভব হয়।

চিকিৎসকেদের মতে এই গবেষণাটির সাফল্য আগামী দিনে রোগ নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ সাধারণ মানুষকে যদি এ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা সম্ভব হয়, তাহলে প্রতিটি রোগেরেই একেবারে গোড়া থেকে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। ফলে আয়ু তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে সুস্থ জীবনের পথও প্রশস্ত হবে। প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে যেভাবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্টের অসুখের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে ফেসিয়াল রেকগনিশন যে যুগন্তকারি পরিবর্তন আনতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য!

গবেষণাটি করা হয়েছিল কিভাবে?

৫০ জন মালয়েশিয়ান চাইনিজ, ৫০ জন ককেশিয়ান এবং ৯৭ জল ব্ল্যাক পুরুষের মুখের ছবি তোলা হয়েছিল প্রথমে। সেই সঙ্গে বি এম আই, ব্লাড প্রেসার এবং শরীরে মেদের পরিমাণ কত, সে সম্পর্কেও নথি সংগ্রহ করা হয়েছিল। এইসব তথ্য সংগ্রহ করার পর শুরু হয়েছিল মূল গবেষণা।

মুখ এবং শরীর :

গবেষণাটি চলাকালীন গবেষকরা লক্ষ করেছিলেন বিশ্বের কোন প্রান্তে জন্ম হয়েছে এবং মুখের অবয়ব কেমন, তা শরীর সম্পর্কে অনেক গোপন তথ্য জানতে সাহায্য় করে। শুধু তাই নয়, জন্মস্থান অনুসারে কী কী রোগ আগামী দিনে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে, সে সম্পর্কেও ধরণা করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন ভারতীয়দের কথাই ধরুন না। গবেষকদের মতে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের জিনের গঠন এমন হয যে ওজন বৃদ্ধি সমস্যায় বেশিরভাগই ভুগে থাকেন। শুধু তাই নয়, এই অংশের মানুষদের উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। এবার বুঝেছেন যে ভারত ডায়াবেটিস ক্যাপিটল হওয়ার পিছনে আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যতটা দায়ি, ততটাই দায়ি আমাদের জিনও।

আপনার চোখের সাদা অংশ কি হলদেটে?

গবেষকদের মতে যাদের চোখের সাদা অংশ বেশি মাত্রায় হলুদ হয়, তাদের শরীরের অন্দরে হয় জন্ডিস বাসা বেঁধেছে, নয়তো লিভার ঠিক মতো কাজ করতে পারছেন না। কারণ বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে চোখের অন্দরে যেমন এই ধরনের পরিবর্তন হয়, ঠিক এখই ঘটনা ঘটে দেহে বর্জ্যের মাত্রা বৃদ্ধি পলেও। প্রসঙ্গত, লিভারের কাজ হল শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বার করে দেওযা। এই অঙ্গটি যখন নিজের কাজ ঠিক মতো করতে পারে না, তখনই শরীরে ওয়েস্ট মেটিরিয়ালের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে চোখ হলদেহে হতে থাকে।

আঁচিলকেও নজর রাখতে হবে:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আপাত সাধারণ আঁচিলও অনেক সময় আমাদের শরীরের অন্দরে ঘটে চলা নানা নেতিবাচক পরিবর্তন সম্পর্কে জানান দিয়ে থাকে। যেমন ধরুন আঁচিলটির রং যদি হালকা থেকে গাড় হয়, এর আকার যদি দিন দিন বড় হতে থাকে, সপ্তাহে সপ্তাহে যদি এর অবয়ব বদলে যেতে শুরু করে, তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ আঁচিলের এমন পরিবর্তন মোটেও ভাল খবর নয়!

ঠোঁট ফেটে যাওয়া:

শীতকালে আদ্রতা কমে যাওয়ার কারণে ঠোঁট ফাটাটা বেজায় সাধারণ একটি ঘটনা। কিন্তু গরম কালেও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে শরীরের অন্দরে জলের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। ফলে ডিহাইড্রেশনের খপ্পরে পড়েছে শরীর। এমন অবস্থায় বেশি মাত্রায় জল পান করতে হবে।

অযাচিত চুল:

অনেক মেয়েরই মুখে চুলের আধিক্য বেশি থাকে। এমনটা কেন হয় জানা আছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যারা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগে থাকেন, তাদের শরীরে হরমেনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেয়, যে কারণে শরীরে অযাচিত জায়গায় চুলের আধিক্য হতে দেখা যায়।

চোখের পাতায় হলুদ হলুদ মাংস জমা:

অনেকেরই চোখের পাতায় বা চোখের নিচে হলুদ মতো মাংস জমতে দেখা যায়। এই মাংসপিন্ডগুলি যন্ত্রণা দায়ক না হলেও এমনটা হওয়া মোটেও ভাল খবর নয়। কারণ শরীরে যখন কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, তখনই সাধারণত এমনটা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে করনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

চোখের তলা ফুলে যাওয়া:

শরীরে জলের পরিমাণ বাড়তে থাকলে সাধারণত এমনটা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে একবার কিডনি ফাংশন টেস্ট করে দেখতে হবে যে কিডনি ঠিক মতো কাজ করছে কিনা। কারণ এই অঙ্গটির উপরই শরীর থেকে জল বের করে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে, তাই কিডনি নিজের কাজ ঠিক মতো না করতে পারলেই সাধারণত চোখের তলা এমন ফুলতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, ঠিক মতো ঘুম না হলে, নুনের পরিমাণ বেশি রয়েছে এমন খাবার বেশি মাত্রায় খেলে এবং শরীরে হরমোনাল চেঞ্জ হতে থাকলেও চোখের তলা ফুলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭)