ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

‘মোবাইলের এমবি কেটে নেয়ার যৌক্তিকতা’ বিবেকের কাঠগড়ায়

২০১৮ জানুয়ারি ১০ ১৯:০২:৪৭
‘মোবাইলের এমবি কেটে নেয়ার যৌক্তিকতা’ বিবেকের কাঠগড়ায়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন


একটি প্রশ্ন প্রায়ই ফ্ল্যাক্সি লোড করতে গিয়ে মাথায় আঘাত করে। প্রশ্নবানে বিদ্ধ করে অবলীলায়। প্রশ্নটিকে ব্যক্তিগত ভেবে চুপ করে থাকি। কিন্তু না; প্রশ্নটি যে ব্যক্তিগত নয় তা বুঝতে পারি কয়েকজনের সাথে কথা বলে। তারা প্রত্যোকেই কিছুটা ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া জানায় তাদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত। বুঝতে পারি থাকে না - প্রশ্নটি আসলে আমার ব্যক্তিগত নয়। এটি সমষ্টিগত ক্ষোভ আর হতাশার একেকটি অভিন্ন জিজ্ঞাসার অভিব্যক্তি।

এবার মূল প্রশ্নে আসি। আমাদের কষ্টার্জিত টাকায় আমাদের প্রযুক্তি-ফোনে আমরা যে এমবি ক্রয় করি তার সুনির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। থাকে ব্যবহার সময়সীমা বা শর্ত। কিন্তু মেয়াদ শেষ হবার এ সেকেন্ডের মধ্যেই আমাদের ক্রমকৃত এমবিগুলো আমাদের চরমভাবে ব্যথিত করে মহাশূন্যে বিলিয়ে যায়।

স্বীকারও করছি যে, এর সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বিদ্যমান। তাই করে আমাদের টাকায় ক্রয় করা অবশিষ্ট এমবিগুলো চিরতরে কেটে নিতে হবে কেন? তা সাময়িকভাবে বিছিন্ন করে তো রাখা যেতে পারে। কোনো গ্রাহক পুনরায় যখন এমবি ক্রম করবেন তখন তার মুঠোফোনের অপারেটরে ওই রয়ে যাওয়া অবশিষ্ট এমবিগুলোও নতুন এমবির সাথে যুক্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের মতো তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার একটি দেশের জন্য আমাদের টাকায় ক্রয়করার এমবিগুলো চিরতরে কেটে নেয়া একটি অবিবেচিত ও অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত। যা বহুদিন ধরে অন্যায়ভাবে প্রচলিত হয়ে রয়েছে। এই প্রচলিত পদ্ধতিটি দেশের জনগণসাধারণের উপর এতোদিন ধরে চাপিয়ে দেয় হয়েছে। এমন অনুচিত সিদ্ধান্ত আমাদের দেশের জন্য কখনোই কাম্য হতে পারে না। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ যখন তথ্য-প্রযুক্তির মহাকাশে নিজেদের মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কথা। “কৃষকের জানালা” নামে তাদের একটি দারুণ কার্যক্রম প্রচলিত রয়েছে। এটি কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের ফসলভিত্তিক নানা সমস্যার চিত্র যৌক্তিকভাবে সাজিয়ে তৈরি করা একটি তথ্যভান্ডার। এখানে ছবি দেখে কৃষক নিজেই তার সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারেন এবং চিহ্নিত ছবিতে ক্লিক করলেই সমস্যার সমাধান মনিটরে ভেসে উঠে।

এখানে মাঠ ফসল, শাকসব্জি, ফলমূল ও অন্যান্য গাছের রোগবালাই, পোকা-মাকড়, সারের ঘাটতি বা অন্যান্য কারণে যেসব সমস্যা হয়; সেসব সমস্যা ও তার সমাধান যুক্ত করা রয়েছে। প্রতিটি সমস্যার একাধিক ছবি এবং কমপক্ষে একটি প্রতিনিধিত্বপূর্ণ ছবি যুক্ত করা হয়েছে; যাতে কৃষক সহজেই তার সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারে। কৃষকের জানালা ব্যবহার করে সেবাগ্রহিতা ও সেবাপ্রদানকারী উভয়েই উপকৃত হচ্ছেন। সেবা গ্রহিতা দ্রূত ও সঠিক সেবা পাচ্ছেন আর সেবা প্রদানকারী কৃষকের জানালা ব্যবহার করে যে কোন সমস্যার খুব সহজেই দ্রুত ও নির্ভুল সমাধান দিতে পারছেন।

আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকই দরিদ্র। বিশেষত জলবায়ু ও মৌসুমী আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে কখনো কখনো তাদের ফসলের মাঠে হাহাকারের অভিশাপ নেমে আসে। আমাদের দেশের প্রাণ এই কৃষকরাও আজ তথ্য-প্রযুক্তির মধ্যে প্রবেশ করেছেন। এটি বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের একটি অসাধারণ সফলতার বাস্তব রূপরেখা। কৃষকরাও আজ প্রযুক্তি-ফোন ব্যবহার করে চলেছেন।

আমাদের কৃষক, আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে আমাদের টাকায় কেনা আমাদের মোবাইলের এমবিগুলো মেয়াদ শেষে চিরতরে কেটে নেয়ার অন্যায় সিদ্ধান্তটি বালিত করা হোক। এটি সাময়িকভাবে বিছিন্ন করে রাখা যেতে পারে। পরে গ্রাহক আবার এমবি ভরলে নতুন এমবির সাথে পুরাতন এমবিগুলো যেন যুক্ত হয় – এ ব্যবস্থাই করা উচিত।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল আপারেটর কম্পনিগুলো হলো- গ্রামীনফোন, বাংলালিংক (সেবাওয়ার্ল্ডকে কিনে নেয়), রবি (পূর্ব নাম একটেল) , টেলিটক এবং এয়ারটেল-রবি (পূর্ব নাম ওয়ারিদ)।

ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর কাছে এটি আমাদের সানুনয় প্রার্থনা। ‘মোবাইলের এমবি কেটে নেয়ার যৌক্তিকতা’ আজ সত্যিই বিবেকের কাঠগড়ায়।

আমরা বিশ্বাস রাখছি, বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তিখাতে এগিয়ে নিয়ে যেতে মোস্তাফা জব্বার অনেক যুগান্তরকারী প্রদক্ষেপ নেবেন। আমাদের টাকায় কেনা আমাদের মোবাইলের এমবিগুলো মেয়াদ শেষে চিরতরে কেটে নেয়ার অন্যায় সিদ্ধান্তটি রহিত করে আমাদের প্রযুক্তিবিভ্রাটের হাত থেকে রক্ষার করবেন।

সোনালী মাঠের ঠিক মধ্যখানে আমাদের দেশের প্রিয় কৃষকটি হাসুক তার কষ্টার্জিত হাসিটি নিয়ে। গ্রামের অন্তঃপুর থেকে উঠে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ভর্তি হওয়া তরুণটি খুঁজে পাকা জীবনের দুর্বার গতি। তথ্যপ্রযুক্তি বারবার এমন অপার সম্ভাবনাকেগুলো বড় বিশ্বাসের থাকে আকড়ে ধরে রয়েছে।


লেখক : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, লেখক, সাংবাদিক।