ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ব্যাংক কমিশন নয় স্পেশাল ব্যাংক ট্রইবুনাল চাই

২০১৮ এপ্রিল ২৩ ১৮:৫০:২৩
ব্যাংক কমিশন নয় স্পেশাল ব্যাংক ট্রইবুনাল চাই

চৌধুরী আব্দুল হান্নান


ব্যাংক ব্যবস্থার চলমান অরাজগতা, উল্টো যাত্রা ঠেকাতে এবং ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অচিরেই ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আপরদিকে ব্যাংক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা নেই, পরিবেশও নেই । এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো, সব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে বাধ্যতামূলক নগদ জমা রাখতে হয়, তার হার শতকরা এক ভাগ কমিয়ে দিয়েছে সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ ছাড়াই। ব্যাংকের তারল্য সংকট নিরসন কল্পে এমন নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বেপরোয়া, নিয়মনীতিহীন ব্যাংকিং করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বরং তাদের অর্থ সংকট কাটাতে সরকার এগিয়ে এসেছে। এখন থেকে সরকারি সংস্থাগুলো পূর্বের থেকে অধিক হারে (২৫% এর পরিবর্তে ৫০%) অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখতে পারবে।

সম্প্রতি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ব্যাংক মালিক/উদ্যোক্তাদের স্বেচ্ছাচরীতা করার পথ আরও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ঢাল-তলোয়ার থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে ‘নিধিরাম সর্দার’ সেখানে নতুন আর একটি কমিশন ত্রাস কী করবে? এ কমিশনের সভাপতি/সচিব বা অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ দিবেন কারা? বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নিয়োগেই তো নীতিমালা নেই, ব্যক্তির ইচ্ছা বা সরকারের ইচ্ছাই সব। যোগ্যতা যাচাইয়ের বালাই নেই।

ব্যাংকিং কমিশন তো এভাবই গঠিত হবে। স্বাভাবিকভাবেই অর্থমন্ত্রী এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকায় থাকবেন কিন্তু তিনি অনেকবার স্বীকার করেছেন- তিনি ব্যাংক ব্যবস্থা পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। তাহলে এ কমিশন কীভাবে সফল হবে, এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।

ব্যাংকের আরও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তা হলো- আদালতে ঋণ খেলাপিদের রিট আবেদন আনেকেই উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ লাভ করে থাকেন, তাদেরকে খেলাপি দেখানো যায় না। ফলে প্রকৃতপক্ষে ঋণ খেলাপি থাকা সত্ত্বেও নতুন কওে ঋণ নেয়ার সুয়োগ তেরী হয়ে যায়। ব্যাংক কমিশন এক্ষেত্রে কী প্রতিকার করবে ? এ কমিশন তো আদালতের চেয়ে খমতাবান হতে পারে না। বর্তমানে এ ধরনের ঋনখেলাপি রিট আবেদনকারী সংখ্যা ৬ শত।

আর কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত কারী, বড় ঋনখেলাপি, বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী প্রতিনিধিদের প্রভাব মুক্ত থাকবে তা কেউ বিশ্বাস করবে না। এখানেও বাবুল চিশতীর মত লোকের অনুপ্রবেশ ঘটবে না তা কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

তাছাড়া, এ কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার জন্য একটা নীরব প্রতিযোগিতাও থাকবে। আনেকেই লাভের হিসাব কষবেন তারা তো আমাদেরই কাজ-ভাই। চরিত্র পার্থক্য হবে এমন আশা করা দুরাশা।

মূলত ব্যাংক সম্পর্কে রিপোর্ট, সুপারিশ করাই হবে কমিশনের কাজ, কার্যকর করবে প্রধানত কেন্দ্রীয় ব্যাংক । ব্যাংক নিয়ন্ত্রনে রাখার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার অডিট। বাংলাদেশ ব্যাংকর বিভিন্ন অডিট, প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব অডিট, সরকারি অডিট এবং এ জাতীয় অসংখ্যা অডিট -কার্য পরিচালনা করা হয়। তারপরও রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পেশাল ইন্সপেকশন, সারপ্রাইজ ইন্সপেকশন ইত্যাদি।

তাই নিশ্চিত বলা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থা সুরক্ষার্থে বহুস্তর বিশিষ্ট নিরাপতা বলয় বিদ্যমান রয়েছে। এখন প্রয়োজন কেবল তা কার্যকর রাখা।

ইচ্ছা থাকতে হবে, সদিচ্ছা। চিহ্নিত অপরাধীকে কঠিন শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, এখনই । অবৈধ অর্থ শক্তির দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে যার কাছে আমরা বার বার অসহায় হয়ে পড়ছি। বর্তমানে অর্থ ঋণ আদালতে প্রায় ২ লাখ মামলা দীর্ঘ সূত্রতায় আটকা আছে, এখানে জড়িত টাকার পরিমান ৫৫ হাজার কোটি টাকার ওপর । আপরদিকে রিট আবেদনকারী স্থগিতদেশ প্রাপ্ত ঋণ খেলাপিরা তো আছেই। এখানে ব্যাংকারদের শুধু মনোযোগেরই আভাভ তাই নয়, ঋণ খেলাপি বিবাদীদের কাছে আসহায়ও।

বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রনের জন্য যে হাতিয়ার, অবলোপনকৃত, বেনামি ভুয়া, ভুয়া জামানতের ঋণ ইত্যাদি মোকাবেলায় ব্যাংকিং কমিশনের চেয়ে স্পেশাল ব্যাংক ট্রাইবুনাল গঠন করা বেশি জরুরি।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার