ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » পাশে দাঁড়াই » বিস্তারিত

আবার স্কুলে যেতে চায় দুলিয়া

২০১৮ এপ্রিল ২৫ ১৫:৪৪:৪৩
আবার স্কুলে যেতে চায় দুলিয়া

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :‘স্কুলে না গ্যালে পরীক্ষায় পাস করমু ক্যামনে। আমি স্কুলে যামু’ এ আকুতি পটুয়াখালীর বাউফল পৌর সদরের বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুলিয়ার (১৫)।

পুরো নাম সাবেকুন নাহার দুলিয়া। পৌর সদরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিনমজুর বাবা দুলাল হাওলাদারের মেয়ে। শ্রেণি কক্ষে সহপাঠিদের সঙ্গে দুষ্টমিতে বেঞ্চের কোনায় সামান্য আঘাতের পর ক্যান্সারে রুপ নিলে একটি পা হারাতে হয় তাকে। কিন্তু স্কুলে ফেরতে চায় চিকিৎসা ব্যায় আর পরিবারের অভাব অনটনে বছর খানেক আগে পড়াশুনা বন্ধ হওয়া মেধাবি ছার্ত্রী দুলিয়া।

দুলিয়ার মা রাহিমা বেগম জানান, ‘অভাব-অনটনে চলছিল সংসার। বগা বন্দরের ডা. ইয়াকুব শরীফ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা মোশারফ হোসেন ও নির্মাণ শ্রমিক মাহদুলসহ সংসারে তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট দুলিয়ার। শ্রমজীবি স্বামী দুলাল হাওলাদারের আয়ে চলা দোচালা ছাওনির বসতঘরে দু’ভাইসহ মেয়েটির অনিন্দ আনন্দ খুনসুটি, আর ভালোবাসায় ছিল পরিপূর্ন।

অভাবের সংসারের মোড় ঘোরাতে হাল ধরবে লেখাপড়া শিখে। হাসি ফেরাবে সংসারে। এমন সব স্বপ্ন নিয়ে
চালিয়ে যাচ্ছিল সে নিয়মিত পড়াশুনাও। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে মেয়েটির সেই স্বপ্ন কুড়ে খাচ্ছে ক্যান্সার। প্রতিদিনের মতো ওই দিনও স্কুলে যায় সে। শ্রেণি কক্ষে সহপাঠীদের সাথে দুস্টমির একপর্যায়ে বেঞ্চের কোনায় পড়ে গিয়ে বা-পায়ের হাটুর নীচে আঘাত পায়। প্রথমে অতটা গুরুত্ব না দিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে সামান্য বিষ-ব্যাথার ঔষধও দেওয়া হয় তাকে। ব্যাথা সেরে কিছুটা ভালো অনুভবও করে সে। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও ব্যাথা দেখা দেওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়ে ডাক্তার প্লাষ্টার ব্যান্ডেজ করে দেয় তার পায়ে।

এতেও অবস্থার উন্নতি না হলে এক্সরে করায় রিপোর্টে ধরা পড়ে তার পায়ের হাড়ের ফাটল। এবার তাকে ভর্তি করা হয় বরিশার শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে। এবারেও অবস্থার উন্নতি না হলে ভর্তি করা হয় ঢাকায় জাতীয় ক্যান্সার গভেষণা ইনিস্টিটিউটে। সেখানে সহোযোগী অধ্যাপক ডা. শাহ মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের তত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হয় দুলিয়ার। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ক্যান্সারের জীবানু সনাক্ত হলে কেটে ফেলা হয় তার বাম পা। যেন থেমে যায় দুলিয়ার স্বপ্নের পথ চলা।

ডাক্তার জানায়, শরীরের অন্য কোন স্থানে ক্যান্সারের জীবানু ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ কারণে অন্তত ১৩ বার (প্রতিটি ৩০ হাজার টাকা ব্যায়ে) ক্যামো থেরাপি দিতে হবে তাকে। দিতে হবে রেডিও থেরাপিও। চলাচলের জন্য করতে হবে কৃত্রিম পা সংযোজন। সব মিলে দুলিয়ার চিকিৎসায় আরো ৫ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। ধার-দেনায় এ পর্যন্ত চললেও চিকিৎসার এই বিশাল ব্যায়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে তাদের। মেয়ের সুস্থতার চিন্তায় অন্ধকার দেখছেন বাবা দুলাল হাওলাদার।

সরেজমিন চোখের পানি ফেলে উন্নত চিকিৎসার আকুতি জানিয়ে দুলিয়া বলেন, ‘স্কুলে না গ্যালে পরীক্ষায় পাস করমু ক্যামনে। আমি স্কুলে যামু।’

দুলিয়ার স্কুলের শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘জেডিসিতে জিপিএ- ৪.৮০ পায় দুলিয়া। মেয়ের চিকিৎসায় লোক-লজ্জায় সমাজের কারো কাছে হাত পাততেও পারেন না দুলিয়ার বাবা-মা। সাবেকুন নাহার দুলিয়ার মতো মেধাবি শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরা উচিত। দুলিয়ার মতো অসহায় মেধাবি শিক্ষার্থীদের
চিকিৎসা সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত সমাজের বিত্তবানদের।’

প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে মেয়ে দুলিয়ার চিকিৎসার সহযোগিতা কামনা করছেন (সোনালী ব্যাংক বাউফল শাখায় সঞ্চয়ি হিসাব নম্বর- রাহিমা বেগম, ৪৩০৬১০০৮৭৭৫৭, মোবাইল- দুলাল হাওলাদার, ০১৭২৮৬৩২১৮৮, মোশারফ হোসেন, ০১৭৮৮৪২০৬২৬) বাবা দুলাল হাওলাদার।

(এমএবি/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০১৮)