ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

মা, ভালোবাসি তোমায়

 

২০১৮ মে ১৩ ০০:০৪:৫৩
মা, ভালোবাসি তোমায়
 

ঘটনা ১
ছেলেটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এইতো সেদিনের কথা ছেলেটি ক্লাস নাইন পেড়িয়ে সবেমাত্র টেন এ উঠলো। দেখতে দেখতে চলে এলো এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার রাতের কথা মনে পড়তেই চোখে জল চলে আসে ছেলেটির। মনে হচ্ছিল পরীক্ষা ছেলেটির না, পরীক্ষা মায়ের। কি রেখে কি করবে, কোনটা ছেড়ে কোনটা খাওায়াবে, কোন বই ছেড়ে কোন বই পড়াবে তা যেন কিছুতেই মানানসই ছিল না। সকাল হলেই মায়ের ডাক, বাবা ওঠ। আর মাত্র কয়টাদিন এরপরই পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ করে যতো ইচ্ছে ততো ঘুমিয়ে নিস। এখন উঠে পড়তে বস।

পরীক্ষা চলে আসে। ছেলেটির পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল অনেক দূরে। ছেলেকে কি আর একা একা ছাড়া যায় ? সেই কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে পুরো পরিবারে সারাদিনের খাবার তৈরি করে বের হয়ে যেত ছেলেকে নিয়ে। ছেলেকে পরীক্ষার হলে নিয়ে যেতে যেতে রাস্তায়, আরেকটু পড়। এখন যেটা পড়বি সেটাই দেখবি প্রশ্নে চলে এসেছে। ছেলেকে হলে ঢুকিয়ে দিয়ে কাঠফাটা রোদে হলের বাইরে একটানা ৩ ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। ছেলে বের হলেই, শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিতে দিতেই প্রশ্ন কেমন হয়েছে পরীক্ষা বাবা ? কি খাবি ? আইসক্রিম না সমুচা নাকি বার্গার ?

ঘটনা ২

মেয়েটির মা মারা যায় মেয়েটি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মেয়েদের আস্থার একমাত্র জায়গা নাকি হয় মায়েরা। সেটার শতভাগ মা বেঁচে থাকতে না বুঝলেও মায়ের মৃত্যুর পর বুঝে গিয়েছে মেয়েটি।

কারো সাথে মন খুলে কথা বলতে পারে না, না পারে নিজের কোন সমস্যার কথা কাউকে বলতে। মেয়েটিভাবে, মা থাকলে বলতো, ঈশ তোর জামাটাতো পুরানো হয়ে গিয়েছে! আমার মেয়েটার নতুন জামা দরকার! মা বলতো, মেয়েটা আমার শুকিয়ে গিয়েছে, একটুও খাওয়াদাওয়া করেনা ! মেয়েটির পুরো পৃথিবীই থমকে গিয়েছে শুধুমাত্র মা না থাকার কারণে। মা নেই বলে কেউ আর তার এলো চুলে তেল দিয়ে দেয় না। মা নেই বলে ক্ষুধার যন্ত্রণা বোঝে না কেউ। একগাল হাসি দিয়ে মাকেই জড়িয়ে ধরা যায় না।

মায়ের বেঁচে থাকা আর না থাকার আকাশ পাতাল পার্থক্যকে সামান্য তুলে ধরার চেষ্টা করতেই সত্য দুটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। একজন মা, একজন সন্তানের পৃথিবী। সন্তানের সকল আনন্দ-দুঃখ, হাসি-কান্নার এক বিশাল আকাশ। মা, মাদার, মম, মাম, আম্মা- যাই বলি না কেন, একজন সন্তানের কাছে তার মায়ের চেয়ে অধিক প্রিয় কোনও কিছুই এই পৃথিবীতে নেই।

জগতে মায়ের অভাব কেউ কোনদিন পূরণ করতে পারে না। মায়ের ঋণ সন্তান কখনও শোধ করতে পারে না। এযেন অতল করুণার সাগর, যার কূল নেই, কিনারা নেই। যেন সন্তান যেখানেই থাকে, সুখে থাকে, শান্তিতে থাকে।

‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ। ভালোবাসা আর নিরাপদ আশ্রয়ের শ্রেষ্ঠ জায়গা। মা শাশ্বত, চিরন্তন। আজ ১৩ মে, ‘বিশ্ব মা দিবস’। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি রইল শ্রদ্ধা, রইলো ভালোবাসা।

প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। যদিও মাকে ভালবাসা জানাতে কোনো দিনক্ষণ লাগে না; তবুও মায়ের জন্য ভালোবাসা জানানোর দিন আজ। সময়টা আজ থেকে দেড়শ’ বছর আগের। সপ্তাহের প্রতি রবিবারের সকালটা অ্যানা জারভিসের জন্য একদম অন্যরকম। নিজের প্রতিষ্ঠিত সানডে স্কুলে বাচ্চাদের দিতেন বাইবেল পাঠ। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি হতো তার নিজের। এদের মুখাবয়বে খুঁজে পেতেন নিজ মায়ের মুখ। ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় বিনম্র হতে ইচ্ছে করত মায়ের প্রতি। এ বোধ থেকেই ১৯০৫ সালে মাকে ভালবাসা ও সম্মান জানাতে প্রবর্তন করেন মাদার্স ডে বা মা দিবসের। তবে যুক্তরাষ্ট্রে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর স্বীকৃতি ও প্রসার ঘটে ১৯১৪ সালে।

মায়ের কাছে ছেলে-মেয়ে সব সন্তানই সমান, মা সর্বজনীন। মা ভালোবাসা। একটি পরম মমতা। মা বুকের কাছে জাপটে ধরে আগলে রাখা একটি ছায়া। ‘মা’ শব্দটি নিজেই একটি অসমাপ্ত গল্প, শ্রেষ্ঠ কবিতা, সময়ের সেরা উপন্যাস। মা শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন, প্রিয় অনুভূতি, প্রিয় ব্যক্তি, প্রিয় দেখাশুনা, প্রিয় রান্না এবং প্রিয় আদর। যতগুলো প্রিয় আছে তার সব প্রিয়ই শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করেই।

কবি নজরুলের ভাষায়, যেখানেতে দেখি যাহা/ মা-এর মতন আহা/ একটি কথায় এত সুধা নাই/ মায়ের মতন এত/ আদর সোহাগ সে তো/ আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই।

কামিনী রায়ের ভাষায়, জড়ায়ে মায়ের গলা, শিশু কহে হাসি/ মা তোমারে কত ভালবাসি/ কত ভালোবাস ধন? জননী শুধায়/ “এ-ত” বলি দুই হাত প্রসারি দেখায়? তুমি মা আমায় ভালোবাস কতখানি? মা বলে মাপ তার আমি নাহি জানি/ তবু কতখানি বল, যতখানি ধরে তোমার মায়ের বুকে নহে তার পরে।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে/মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।/তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ'ড়ে/দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক'রে,/আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে/টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।/রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে/রাঙা ধূলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।/সন্ধ্যে হল, সূর্য নামে পাটে,/এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।

সারা পৃথিবীতে মাকে নিয়ে, মাকে ভালোবেসে লেখা হয়েছে হাজার হাজার কবিতা, হাজার হাজার গান, হাজার হাজার উপন্যাস।

একজন সন্তানের কাছে মা বেঁচে থাকেন, সবসময় বেঁচে থাকেন। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি আবারও রইলো শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। ভালো থাক সকল মা, সুখে থাক সকল মা।

লেখক : সুপ্রিয় সিকদার। ছাত্র, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।