ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

জাগছে ফরিদপুর, ছাত্রলীগ নেতা পুচ্চিকে মুক্তি দিন এখনই

২০১৮ জুন ০১ ১১:১৯:৫১
জাগছে ফরিদপুর, ছাত্রলীগ নেতা পুচ্চিকে মুক্তি দিন এখনই

প্রবীর সিকদার


অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন ফরিদপুরের ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন একজন এমপি। খুবই সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত দেলোয়ার স্যার এখনো আছেন আমার শিক্ষাগুরু ও দীক্ষাগুরু হিসেবেই। অনেকদিন ধরেই শুনছি, স্যার অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। কিন্তু যাই যাই করেও স্যারকে দেখতে যাওয়া হয়নি।

অপরাধ বোধ যখন খুব কাজ করছিল, তেমনই একটি সময় অপরিচিত একটি মোবাইল ফোন থেকে আমার মোবাইল ফোনে কল এলো; রিসিভ করতেই পিতৃসুলভ কণ্ঠে আশীর্বাদ ' প্রবীর,তোমার জন্য আমি গর্ব বোধ করি; তুমি এগিয়ে যাও, সাধারণ মানুষ তোমার পাশে আছে, থাকবে'। শুনতে শুনতেই উপলব্ধি করলাম, ফোন করেছেন আমার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন। আমিও প্রাণ ভরে তার কাছে আশীর্বাদ চাইলাম।

তারিখটি ছিল ১৯ আগস্ট ২০১৫। আমি ওইদিন ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলাম। স্যারের ওই ফোনটি আমার সারাজীবনের জন্য একটি নির্দেশনা হয়েই থাকবে।

২৫ মে শুক্রবার ২০১৮ রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আমার মোবাইল ফোনে অপরিচিত ফোন থেকে কল এলো। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে কোনো পরিচয় না দিয়েই জানালো, এই মাত্র ফরিদপুর শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে জামান সাহেবের পেট্রোল পাম্পে হাইব্রিড লীগের একদল চ্যালা পুচ্চিকে নির্মমভাবে মেরেছে। সে বাঁচবে বলে মনে হয় না। পুচ্চি কে, জিজ্ঞেস করতেই অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এলো, দেলোয়ার স্যারের ছেলে।

আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না, পুচ্চি আমার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরুর ছেলে তৌফিক হোসেন পুচ্চি। ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের তুখোড় ছাত্রনেতা পুচ্চি ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ সংসদের তিন তিন বারের নির্বাচিত কর্মকর্তা; ভিপি, জিএস ও সাহিত্য সম্পাদক। সেই পুচ্চিকে হাইব্রিড লীগের চ্যালারা নির্মম ভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে, এটা ভাবতেই শিউড়ে উঠলাম। অপরিচিত ওই ফোন থেকে যা শুনলাম, তা কতোটা সত্য সেটা জানতে ফরিদপুরে কয়েকজনের কাছে ফোন করলাম। ফোনে যা শুনলাম সেটা আরও ভয়াবহ! ৫/৬ মোটরসাইকেলে চড়ে আসা ১২/১৪ জন দুর্বৃত্ত পুচ্চিকে শুধু নির্মমভাবে মারপিট করেনি, মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে ওর চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। ঘটনা সেখানেই শেষ নয়। পুচ্চিকে পিটিয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ রক্তাক্ত জখম পুচ্চিকে উদ্ধার কিংবা আটক করে হাসপাতালে নেয়নি কিংবা নিতে পারেনি। ওই অবস্থায় পুচ্চিকে তুলে নিয়ে কোতোয়ালি থানার ভেতরে মেঝেতে ফেলে রেখেছে। রাত একটু বাড়লে পুলিশ যখন উপলব্ধি করেছে, পুচ্চির অবস্থা ভালো নয়, তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পুচ্চিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। কোনো মতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই পুচ্চিকে থানায় ফিরিয়ে আনা হয়। পরদিন কোতোয়ালি থানার একটি পেন্ডিং খুনের মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় একজনের জায়গায় পুচ্চিকে আসামি করে ফরিদপুরের আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মারাত্মক অসুস্থ পুচ্চির পক্ষে জামিন চাওয়া হলে আদালত সেই আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে ফরিদপুর জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন। নিম্ন আদালতে জামিন না হওয়ায় পুচ্চির পক্ষে জেলা জজের আদালতে জামিন আবেদন করা হয়েছে। সেই জামিন আবেদনের শুনানি আগামি ৩ জুন ২০১৮ রবিবার।

পুচ্চিকে নির্মমভাবে মারপিট ও জেলখানায় আটকের বিষয়টি এখনো তার বাবা, সাবেক এমপি এবং আমার শিক্ষা-দীক্ষাগুরু অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনকে জানানোই হয়নি। অসুস্থ বাবা প্রতিনিয়ত তার সন্তানের খোঁজ করেন, আর পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত নানা ছলাকলায় সত্য আড়াল করেন!

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ঠিকাদার তৌফিক হোসেন পুচ্চির অপরাধ কি? এটা খুঁজতে গিয়ে আরও বিস্মিত হতে হয়! সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে ছোট একটি ঠিকাদারি কাজের দরপত্র জমা দিয়েছিলেন পুচ্চি। আর সেই অপরাধেই পুচ্চিকে নির্মমভাবে মারপিট করে পুরনো একটি খুনের মামলায় কারাবন্দি করা হল পুচ্চিকে! ফরিদপুরের এ কী হাল! অবশ্য ফরিদপুরে আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেশ পুরনো। ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোকাররম মিয়া বাবু এবং সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক জিএস ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জির বিরুদ্ধে মিথ্যা ৪০ মামলা দিয়ে তাদেরকে নির্দয়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি সত্যজিতের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক মানস মুখার্জিও মামলা ও কারানির্যাতন থেকে রেহাই পাননি।

ফরিদপুরে এই ত্রাসের রাজত্ব নতুন নয়। এমন চলছে প্রায় দশ বছর! আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন হাইব্রিড তোষণ ও পীড়নে অতিষ্ঠ। দলে এখন আর তাদের কোনো জায়গা নেই। প্রবল ক্ষমতাধর একজনের আশীর্বাদ ধন্য বিএনপি ক্যাডার বরকত মণ্ডল ওরফে চৌধুরী বরকত ইবনে সালামের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ দখল করে নিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। মৃদু প্রতিবাদ করেও রেহাই পাননি অনেকেই। প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল, ফরিদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা অলক সেনসহ বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে খুন করবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেই সব ঘটনার একটিরও মামলা কিংবা তদন্ত হয়নি। আওয়ামীলীগের বড় দুঃসময়ের কাণ্ডারি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ বড় অভিমান নিয়ে সরে গিয়ে কঠিন এক রোগের সাথে মিতালি করে দুর্বিষহ জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন। আজ বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা দুর্বৃত্তরা লুটেপুটে খাচ্ছে ফরিদপুর। তারাই জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতি ও সরকারি টেণ্ডার কাজের নিয়ন্ত্রক! তাদের ঘরে এখন বস্তা বস্তা টাকা! পুচ্চির কতো বড় সাহস, তাদের ছক কষা রাজত্বে হানা দেয়!

হাঁ, হানা তো কাউকে না কাউকে দিতেই হবে! আর কতো! হাইব্রিড অত্যাচার ও লুটযজ্ঞ আর কতো সইবে আমার প্রিয় ফরিদপুর! কেউ বিশ্বাস করুন আর নাইবা করুন, জাগছে ফরিদপুরের নির্যাতিত মানুষ, জাগছে ফরিদপুর। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি দপ্তরে পুচ্চির দরপত্র দাখিল সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। পুচ্চিকে স্যালুট জানাই, যতো ছোটই হোক, পুচ্চি হাইব্রিড লুটেরাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারি দপ্তরে দরপত্র দাখিল করেছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই, পুচ্চির এই প্রতিবাদ এবং পুচ্চির ওপর নেমে আসা অসহনীয় নির্যাতনের ঘটনা অবশ্যই আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে নতুন উপলব্ধির দ্বার খুলে দিবে। জাতীয় নির্বাচনের এই বছরে এমন ঘটনা দ্রুত দলের ফরিদপুর চ্যাপ্টারের সকল অপকর্মের ইতি টানতেও সহায়ক হবে। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমার চাওয়া, আগামী ৩ জুন রবিবার ফরিদপুরের জজ আদালত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তৌফিক হোসেন পুচ্চিকে জামিন শুধু নয়, তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর বিরুদ্ধে নির্দেশনা দিবেন। আর সেই সূত্রে ফরিদপুরে আওয়ামীলীগ টানা ১০ বছরের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের আশা-আকাংখার প্রতীক শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী, আরও বেগবান করবে, করবেই।

জয়তু পুচ্চি, ফরিদপুরে তোমার কিংবা তোমাদের জয় অনিবার্য; তোমার রক্ত ঝরা চোখে একবার চেয়ে দেখ, একটি শুভ সকাল তোমাকে ও তোমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। জয়তু পুচ্চি!