ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

ওরা সাজেদা চৌধুরীকে উচ্ছেদ করবেই!

২০১৮ জুন ০৩ ২১:৪০:২১
ওরা সাজেদা চৌধুরীকে উচ্ছেদ করবেই!

প্রবীর সিকদার


বয়সের ভারে অসুস্থ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা নগরকান্দা-সালথায় নির্বাচনী দৌড়ে খানিকটা এগিয়ে ছিলেন উপনেতার বড় ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু। দীর্ঘদিন অসুস্থ মায়ের পাশে ছায়ার মতো থেকে বাবলু চৌধুরী ওই অবস্থানটি তৈরি করেছিলেন। সম্প্রতি পারিবারিক বিরোধ সূত্রে সাজেদা চৌধুরীর উত্তরসূরি হিসেবে মাঠে নেমেছেন তারই আরেক ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু।

তিনি ইতোমধ্যে সংসদ উপনেতা মায়ের ওপর নিজের দখলও প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সাজেদা বিরোধীরা এই পারিবারিক বিরোধকে কাজে লাগাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাদের আশীর্বাদ পেয়েছেন শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু। লাবু নির্বাচনী মাঠ গরম করতে মরিয়া হয়েই নেমে পড়েছেন। এই অবস্থায় প্রকাশ্য অবস্থান দেখে যে কারো মনে হতেই পারে, সাজেদা চৌধুরীর উত্তরসূরি নির্বাচন দৌড়ে এগিয়ে গেলেন বুঝি লাবু চৌধুরী!

রাজনীতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন, এমন অনেকেই এই সরল হিসা ব মেনে নিতে পারছেন না। তাদের বিশ্লেষণ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। তাদের আশঙ্কা, ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সাজেদা চৌধুরী বিরোধীরা এবার হাতে এক দারুণ মউকা পেয়েছেন! এই মউকা ব্যবহার করেই তারা নগরকান্দা-সালথা নির্বাচনী এলাকা থেকে শুধু সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীকেই নয়, তার পারিবারিক উত্তরসূরিদেরও উৎখাত করে নিজেদের লোককে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দৌড়ে জিতিয়ে আনবেন!

অনেকেই বলবেন, এটা কি করে সম্ভব? ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিয়ে যারা একটু ভাবনা চিন্তা করেন, তাদের বিশ্লেষণ শোনা যাক। তাদের বিশ্লেষণ, দীর্ঘদিন অসুস্থ মায়ের দেখভালের পাশাপাশি নগরকান্দা-সালথার মানুষের কাছে বাবলু চৌধুরী নিজের একটি জায়গা করে নিয়েছিলেন। এমন একটি অবস্থা্নের কারণেই এলাকায় এটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যে, আয়মন আকবর চৌধুরী ওরফে বাবলু চৌধুরীই সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর যোগ্য উত্তরসূরি। কিন্তু ফরিদপুরের সাজেদা চৌধুরী বিরোধীরা এটিকে ভালো চোখে নেয়নি। তারা দীর্ঘদিন বাবলু চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে তাকে কাবু করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফলতা পাননি। এরই মধ্যে পারিবারিক বিরোধ শুরু হওয়ায়, তারা এই বিরোধকে কাজে লাগাতে শাহদাব আকবর চৌধুরীর পক্ষ নিয়েছেন। এই অবস্থানে মনে হতে পারে, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দৌড়ে বড় ভাইকে পেছনে ফেলে লাবু চৌধুরীই এগিয়ে রয়েছেন এবং তিনিই হচ্ছেন সাজেদা চৌধুরীর উত্তরসূরি।

এতো কিছু ও এতো হিসাব নিকাশের পরও বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের আশঙ্কা, ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সাজেদা চৌধুরী বিরোধীরা এতদিন পর ভালো একটা অবস্থানে পৌঁছেছেন। সাজেদা চৌধুরী ও তার সন্তানদের যেকোনো মূল্যে আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে তারা উচ্ছেদ করবেনই! রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চূড়ান্ত আশঙ্কা, সাজেদা চৌধুরী বিরোধীরা শাহদাব আকবর চৌধুরীর পক্ষ নিয়ে প্রথমে আয়মন আকবর চৌধুরীকে এলাকায় উত্তরসূরির রাজনীতি থেকে অপসারণ করবেন। সেই সাথে নানা প্রচার-অপপ্রচার চালিয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে বাবলু চৌধুরীর বিশাল দূরত্ব তৈরি করবেন, যাতে কোনও অবস্থাতেই তিনি মায়ের উত্তরসূরি হয়ে ফিরে আসতে না পারেন। এটা নিশ্চিত করতে করতেই নির্বাচনের মনোনয়ন মৌসুম চলে আসবে। বাবলু চৌধুরী যখন মায়ের উত্তরসূরি কিংবা মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়বেন, তখন শুরু হবে আসল খেলা! সাজেদা চৌধুরী বিরোধীরা যারা এখন শাহদাব আকবর চৌধুরীকে কৌশলগত সমর্থন দিচ্ছেন, তখন তারা পুরনো চেহারায় ফিরে গিয়ে বলবেন, শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবু চৌধুরী সাজাপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি, যিনি রাষ্ট্রপতির অনুকম্পায় সাজা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত কাউকে নগরকান্দা-সালথা আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেওয়া হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরুপ প্রভাব পড়বে এবং দল বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। নতুন এই বিতর্ক ও প্রেক্ষাপট তৈরি করে ওই আসনে হাজির করা হবে নতুন মুখ। তখন কারো আর কিছুই করার ও বলার থাকবে না; আর এভাবেই সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতেই শুধু নয়, শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরিয়ে এনে আওয়ামীলীগে প্রাণ সঞ্চারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন আজকের এই কিংবদন্তি ও বয়সের ভারে অসুস্থ রাজনীতিক সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।