ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

কাশিমপুর রাজবাড়ির শেষ অংশটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে 

২০১৮ জুন ২৭ ১৫:২৪:২৭
কাশিমপুর রাজবাড়ির শেষ অংশটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে 

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পাশে কাশিমপুর রাজবাড়ির অবস্থান। রাণীনগর উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত কাশিমপুর রাজবাড়ি। কাশিমপুর রাজবাড়ি পাগলা রাজার বাড়ি বলে এটি বেশি পরিচিত। এখন শেষ অংশটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মন্দিরের কিছু অংশ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাশিমপুর পাগলা রাজা নাটোরের রাজার বংশধর। শ্রী: অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর ছিলেন এই রাজত্বের শেষ রাজা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজবংশের সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। শুধু ছোট রাজা শ্রী: শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কাশিমপুর রাজবাড়িতে বসবাস করতেন। সময়ের বিবর্তনে সেও এক সময় কিছুটা চুপিসারে রাজবাড়ির স্টেটের অঢেল সম্পদ রেখে ভারতে চলে যান। কাশিমপুর ২ একর ১৯ শতক জমির উপর কাশিমপুর রাজবাড়ির অবস্থান। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়িটির নিদর্শন সমূহ দীর্ঘদিন যাবত রক্ষণা বেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সকল কারুকার্য ধ্বংস প্রায়।

কাশিমপুর রাজবাড়ি পাগলা রাজার বাড়ি বলে এটি বেশি পরিচিত। রাজবাড়ির মূল ভবনের সামনের চারটি গম্বুজ, উত্তর পাশে হাওয়াখানা ও পশ্চিম পাশে একটি দূর্গা মন্দির ছিলো। প্রতিনিয়ত মন্দিরে পূজা ও সন্ধ্যায় জ্বালানো হতো প্রদিব শোনা যেত শঙ্খ ও উল্লুর ধনি। মুন্দিরের পাশে ছিল একটি রাজবাড়ির বৈঠকখানা, পুকুর ও নদীর ধারে একটি কাঁচের ঘরের তৈরি বালিকা বিদ্যালয়। বর্তমানে রাজার জায়গার কিছু অংশ এখন কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মন্দিরের কিছু অংশ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবহেলা অযন্তে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তের দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়িটির শেষ অংটুকু এখন দেখতে আসে অনেকেই।

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনটির সংঙ্কার করা হলে এই রাজবাড়িটিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষনী পর্যটন কেন্দ্র। কশিমপুর রাজার শত শত বিঘা জমি ও পুকুর স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কায়দা কৈউশলে দখলে রেখেছে। রাজার সম্পত্তিগুলো স্থানীয় মানুষদের অত্যাচারে সবই এখন প্রায় বেদখল। রাজবাড়ির বেশির ভাগ জায়গা স্থানীয়রা অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে বিভিন্ন পন্থায় উপজেলা ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লীজ নিয়ে চাতাল তৈরি করে ব্যবসা করছে।

এদিকে, দ্বায়িত্বশীল মহল নজরে না নেওয়ায় কাশিমপুর রাজবাড়িটি দিনদিন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে চাতাল, মিল, কলকারখানা, বসতবাড়ি। এছাড়া উঁচু জমি কেটে সমতল করে ধান চাষ করা হচ্ছে। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়িটির নিদর্শন সমূহ দীর্ঘদিন যাবত রক্ষণা বেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সকল কারুকার্য ধ্বংস প্রায়। দ্বায়িত্বশীল মহল রাজবাড়ি ও রাজার সম্পদ গুলোর উপর নজর না দেয়া কারনে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সংলিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই ঐতিহাসিক নিদর্শন, বাংলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী কাশিমপুরের রাজবাড়িটি সংঙ্কারের জন্য এগিয়ে আসা ও রাজার রেখে যাওয়া সম্পত্তি গুলোর দিকে আসু দৃষ্টি দেওয়া প্রযোজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মকলেছুর রহমান বাবু জানান, স্বাধীনতার পর কাশিমপুর রাজার বংশধররা কয়েক দফায় সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তিরা রাজার এই বিশাল সম্পত্তি দখলে নেয়। এক সময় বিভিন্ন কায়দায় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে লীজ নেওয়ার কথা আমি শুনেছি। এমনকি বড় বড় দালানকোটা ঘেড়া পাচীর ও রাজার প্রাসাদের ইট খুলে প্রকাশ্যে দিবালোকে রাতে আধারে স্থানীয়রা লুটপাট করে বিক্রয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে দ্বায়িত্বশীল মহল নজরে না নেওয়ায় রাজার বাড়ি মৃত প্রায়। যতটুকু নির্মাণ শেলি কালের স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। রাষ্টের পক্ষ থেকে তাযদি রক্ষনা বেক্ষন ও সংস্কারের মাধ্যমে দৃষ্টি নন্দন করলে এখানেও গড়ে উঠতে পারে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান।

(ওএস/এসপি/জুন ২৭, ২০১৮)