ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত

এসএম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষির্কী কাল

২০১৮ আগস্ট ০৯ ১৪:৪৯:০৩
এসএম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষির্কী কাল

রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) : ১০ আগস্ট শুক্রবার বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৪ তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দিনব্যাপি নড়াইলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে । কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শিল্পীর মাজার জিয়ারত, মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন, কোরআন খানি, দোয়া-মাহফিল, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী।

১৯২৪ সালের ১০ আগষ্ট বিশ্ব বরণ্য বরেণ্য এই শিল্পী নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন মেছের আলী এবং মাত ছিলেন মাঝু বিবি ।

১৯২৯ সালের দিকে সুলতানের বাবা তাকে ভর্তি করে দেন নড়াইল আশ্রম স্কুলে। কিন্তু স্কুলের শৃঙ্খলাবদ্ধ একঘেয়েমি পড়াশুনা তার ভাল লাগতো না। প্রায়ই স্কুল পালিয়ে বনের ধারে কিংবা চিত্রা নদীর পাড়ে নির্জন বসে কাঠ-কয়লা, হলুদ, পুইশাকের বিচির রঙ দিয়ে ছবি এঁকে সকাল-দুপুর এমনকি বিকেল পার করে দিতেন সুলতান।

১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালিন সময়ে স্কুল ভিজিটে আসেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। রিসিভশনের সময় গেটে দাঁড়িয়েই তার ছবি এঁকে ফেললেন শিশু সুলতান। রাশভারী উপাচার্য নিজের সুন্দর ছবি দেখে তার পিঠ চামড়ে বললেন “ সাবাস”।

এভাবে নড়াইলের তৎকালিন জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের সু দৃষ্টিতে পড়েন এবং ১৯৪১ সালে তিনি লাল মিঞাকে কলকাতায় নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সমালোচক কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক সায়েদ সোহরাওয়ার্দির সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। সায়েদ সোহরাওয়ার্দির বিশেষ অনুরোধে একাডেমিক যোগত্যা বিচার না করেই ১৯৪১ সালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অষ্টম শ্রেণী পাস সুলতানকে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি করা হয়। কলেজে তার নাম দেওয়া হয় এস এম সুলতান।
১৯৪৪ সালে কলেজের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান দখল করে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হলেও কলেজ ছেড়ে চলে যান কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে। সেখানে উপজাতীয়দের সঙ্গে বসবাস ও তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাংকন শুরু করেন।

এরপর শিল্পী সুলতান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ বিভিন্নদেশ সফর করেন এবং এসব দেশে প্রখ্যাত চিত্রকরদের সাথে তার ছবি প্রদর্শিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। ১৯৫১ সালে নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৫৫ সালে সবার অলক্ষে করাচি থেকে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং মাটির টানে জন্মস্থান নড়াইলে ফিরে আসেন।

শিল্পী সুলতান শিশুদের খুব ভালো বাসতেন। তাই ১৯৭৮ সালের দিকে নিজস্ব উদ্যোগে জন্মস্থান নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফাইন আর্ট স্কুল এবং ১৯৮৭ সালে নড়াইলের কুরিগ্রামে “শিশুস্বর্গ” নামে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাদের জন্য তৈরী করেন বড় নৌকা। তার আশা ছিলো এই নৌকায় করে নদীতে শিশুদের নিয়ে ছবি আঁকবেন । তিনি বলতেন, শিশু প্রকৃতিকে চিনবে। তারা প্রকৃতির ছবি আঁকবে। যাযাবরের মতো জীবন-যাপন করা এই শিল্পী নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ছবি আঁকলেও অধিকাংশ ছবি নষ্ট এবং হাতছাড়া হয়ে গেছে। বর্তমানে নড়াইলের সুলতান কমপ্লেক্সে তাঁর আঁকা ২২টি ছবি রয়েছে।

বরেণ্য এই শিল্পী ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এভাবে লাল মিঞা থেকে সুলতান হয়ে তিনি বিশ্ব কাপান। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিল্পী সুলতান মৃত্যুবরণ করেন।

(আরএম/এসপি/আগস্ট ০৯, ২০১৮)