ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

গবেষণা কার্যক্রম ব্যহত

কোটা অনুযায়ী ঈশ্বরদী ডাল গবেষণা কেন্দ্রে শ্রমিক নিয়মিত না করায় অসন্তোষ

২০১৮ আগস্ট ১৬ ১৩:৪৮:৩২
কোটা অনুযায়ী ঈশ্বরদী ডাল গবেষণা কেন্দ্রে শ্রমিক নিয়মিত না করায় অসন্তোষ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ডাল গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত অনিয়মিত শ্রমিকদের দীর্ঘদিন যাবত বরাদ্দকৃত কোটা অনুযায়ী নিয়মিত না করায় শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। ফলে দেশের একমাত্র এই ডাল গবেষণার কেন্দ্রে গবেষণা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ডাল গবেষণায় কর্মরত শ্রমিকসূত্র ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৬ সালের ২৪শে অক্টোবর ৫৩১ নং স্মারকে পরিচালক বরাবরে প্রেরিত পত্রে জানা যায়, এখানে নিয়মিত শ্রমিকের বরাদ্দকৃত কোটা ৯২ এবং অনিয়মিত ৪৩ জন। বর্তমানে নিয়মিত শ্রমিক ৭৪ এবং অনিয়মিত শ্রমিক ৩৮ জন কর্মরত আছেন। এই কেন্দ্রে বরাদ্দকৃত কোটা অনুযায়ী নিয়মিত শ্রমিকের ১৮টি এবং অনিয়মিত ৫টি পদ শুণ্য। দীর্ঘদিন ধরে এই কেন্দ্রে বরাদ্দকৃত শুণ্যৗ পদ পূরণ না করে অন্য কেন্দ্রে কোটার অতিরিক্ত পদ পূরণের কারনেই এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ৭ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেও এখানকার শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত রয়েছে।

কৃষি ফার্ম শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা অননুযায়ী অনুপস্থিত ছাড়া কোন অনিয়মিত শ্রমিক বছরে ২৪০ দিন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ৩ বছর কাজ করলে কোটা পূরণের জন্য তাকে নিয়মিতকরণ করা হবে। শ্রমিক নিয়মিত হওয়ার পর তদস্থলে আবার অনিয়মিত শ্রমিক নিয়োগ করা হবে। ডাল গবেষণা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী জানান, এই কেন্দ্রে কোটা অনুযায়ী ১৮টি নিয়মিত শ্রমিকের পদ শুণ্য থাকলেও ২০১১ সাল হতে কর্মরত অনিযমিত শ্রমিকদের নিয়মিত করা হচ্ছে না। এই বিষয়ে স্থানীয় পরিচালক এমনকি জযদেবপুরে মহাপরিচালকের নিকট বারবার আবেদন-নিবেদন করলও তাদের দাবী মানা হচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, ডাল গবেষণার উন্নয়নে এখানকার শ্রমিকদের বড় ভূমিকা থাকায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। অথচ পরিপত্র ও নিিতমালা অনুযায়ী কোটা থাকা সত্বেও শ্রমিক নিয়মিত না করায় শুধু শ্রমিক অসন্তোষই নয়, গবেষণা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শ্রমিক নেতা ও অন্য একটি সূত্র জানান, আগের মহাপরিচালকের সময় অন্যান্য গবেষণা কেন্দ্রে বরাদ্দকৃত সকল কোটা, এমনকি কোন কোন কেন্দ্রে কোটার অতিরিক্ত নিয়মিতকরণ করার কারণেই এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেকারণে দেশের ডাল গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত।

ভূক্তভোগী শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, আমরা জেনেছি বিগত সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন ছাড়াই সারা দেশে বরাদ্দ মোট কোটার অতিরিক্ত সংখ্যক শ্রমিক নিয়মিত করা হয়েছে। যা নীতিমালা বর্হিভূত। এই বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন পর্যায়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও অনিয়মকারী ও স্বর্থান্বেষিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে এই কেন্দ্রের পরিচালক ড. মুহাম্মদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে বরাদ্দকৃত নিয়মিত শ্রমিকের কোটা পূরণ না হওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, গত বছরের ১৮ই জানুয়ারী ১১ জন এবং চলতি বছরের মার্চে ৭ জন অনিয়মিত শ্রমিককে নিয়মিত করার জন্য তিনি মহাপরিচালকের দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকদফা তিনি তাগিদও দিয়েছেন। কিন্তু দেশে বরাদ্দকৃত মোট কোটা শুণ্য না থাকায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এখানকার শ্রমিকদের নিযমিত করতে পারছেন না। তিনি আরো জানান, এই বিষয়ে বর্তমান মহাপরিচালক পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে কোটা বৃদ্ধি করবেন বলে তাকে মহাপরিচালক তাকে আশ্বস্থ করেছেন।

মুঠোফোনে জয়দেবপুর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাহাপরিচালকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে জানা যায়, তিনি বর্তমানে আমেরিকাতে অবস্থান করছেন।

পরে পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) শোয়েব হাসান মুঠোফোনে জানান, মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত দেশে মোট ২,৪১৮টি নিয়মিত শ্রমিকের কোটা পূর্ণ থাকায় ডাল গবেষণা কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত কোটা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোট বরাদ্দকৃত ২,৪১৮ এর অতিরিক্ত সংখ্যক শ্রমিক মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন ছাড়াই নিয়মিত করণের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। এসময় তিনি জানান, শ্রমিকের কোটা বাড়ানোর বিষয নিয়ে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা হযেছে। কোটার সংখ্যা বৃদ্ধি হলে সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

জানা যায়, নিয়মিত ও অনিয়মিত এবং সিটির শ্রমিকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য রয়েছে। সিটির বাইরে নিয়মিত শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৪৫০ টাকা এবং অনিয়মিত শ্রমিকের ৪০০ টাকা। এছাড়া নিয়মিত শ্রমিকরা বছরে একটি বোনাস বেশী পান। আর সিটি শহরে নিযমিত শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা এবং অনিয়মিত ৪৫০ টাকা। এখানকার শ্রমিকরা দাবী করেন, এই গবেষণা কেন্দ্রের কার্যক্রম অনেক সিটির চেযেও গুরুত্বপূর্ণ। যেকারণে সিটির সমান মজুরি প্রদানের জন্য তারা দাবী জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ঈশ্বরদী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং দেশের ডাল গবেষণা কেন্দ্রটি দেশের ভাল ও প্রথম শ্রেণীর গবেষণা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহেলিত। বহুাবিধ সমস্যা থাকা সত্বেও বিগত কয়েকে বছরে এখানে কোন উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদিত হয়নি।

(এসকেকে/এসপি/আগস্ট ১৬, ২০১৮)