ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

টিআইবির অর্থহীন উদ্বেগ

২০১৮ সেপ্টেম্বর ২১ ১৭:২০:২৯
টিআইবির অর্থহীন উদ্বেগ

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ফৌজদারি মামলায় প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ার আগে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা তার নিয়োগকারী কর্মকর্তার পূর্বানুমতি নিতে হবে এমন বিধান রেখে “সরকারি চাকরি আইন-২০১৮” এর খসড়া গত ২০ আগস্ট চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বহুল আলোচিত আইনটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ অযথা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে বর্তমানে এটি নিয়ে বিতর্কের ঝড় প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, বলা হচ্ছে এ আইন কার্যকর হলে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হবে এবং তা হবে দেশে কিদ্যমান আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এ আইন প্রযোগের ক্ষেত্রে দেশের নাগরিকগণ বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হবেন। আরও বলা হচ্ছে, দুর্নীতি প্রতিরোধে ও দমনে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতাও এর মাধ্যমে খর্ব হবে।

সরকারি সৎ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সুরক্ষা এবং অযথা হয়রানি থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে সরকার এ আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। আসামি পালিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে তাকে গ্রেফতার করা জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু চাকরিজীবীরা তো বলতে গেলে এইনিতেই চার দেয়ালে আটকা, তার সার্ভিস রেকর্ডে সকল তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। তার তো পালাবার পথ নেই, অযথা গ্রেফতারের দরকার কি? গ্রেফতার কেবল আতংক ছড়ায়, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে না। আর যে কোনো গ্রেফতার “ঘুষ বাণিজ্য” উৎসাহিত করে, অনেক সময় অসহায় পরিবারগুলো দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়।

বর্তমান সরকারের এ শুভ উদ্যোগের সূচনালগ্নে কেনো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বিপরীতে অবস্থান নিলো, তা সচেতন নাগরিকদের ভাবিয়ে তুলবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আইনটি বাতিলের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মনে হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তারা বিষয়টির গভীরে প্রবেশ না করেই একটা গতানুগতিক মতামত দিয়েছেন। এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেশের নাগরিকদের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়ার যে আশংকা করা হচ্ছে তার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলা যায় না। কারণ সাধারণ নাগরিকদের দুর্নীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ কম, তাই বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়ার আশংকাও কম।

সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিচারণে এক বর্ণনা আছে, তাতে দেখা যায়, এক আনার এক সৎ কর্মচারী ঘুষ খেতেন না, অথচ ঘুষ খাওয়ার অভিযোগেই তাঁর চাকরি গেল (আদালতের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পেয়েও তিনি চাকরিতে আর যোগ দেননি) । যে অফিসে অসৎ লোকের সংখ্যা বেশি, পাল্লায় ভারি, সে অফিসে সৎ লোকের চাকরি থাকে না।

আর তাছাড়া, রাষ্ট্রের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন কেবল আইন দ্বারা সৃষ্টি স্বাধীন সংস্থা নয়, স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতাও ইতিমধ্যে অর্জন করেছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে খোদ দুদকের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, যে আইনই পাশ হোক না কেন, দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা কোনো সমস্যা হবে না। কাজেই এ আইনের বিপরীতে অন্য কারো বাড়তি কথা বলার কারণ দেখি না। হয়রানি করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে উচ্চ আদালতের এমন হুশিয়ারীও মাঝে মাঝে লক্ষ্য করা যায়।

টিআইবি এ ক্ষেত্রে বিপরীতে অবস্থান না নিয়ে আইনটির ভালো দিক যাতে সফল প্রয়োগ হয় সে বিষয়ে সোচ্চার হলে বেশি ভালো হবে। যা জরুরি তা হলো-অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযোগপত্র প্রণয়ন ও বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।

যা হোক, সরকারের এ উদ্যোগ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগের উপর কিছুটা হলেও বাড়তি চাপ কমবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার