ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত

ফয়সাল হাবিব সানি'র ১০টি কবিতা

২০১৮ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৫:২১:৪৪
ফয়সাল হাবিব সানি'র ১০টি কবিতা







১. যুদ্ধ, অামি ক্ষুব্ধ

অাজও ধরণীতে তাণ্ডব! দামামা!! শান্তি চারিদিকে রুদ্ধ
মরণ! মরণ! খেলাতে অাজ বিশ্বরাঙা— যুদ্ধ।
অাজও মানুষ ধ্বংসতৃষায় জীবন করেছে বদ্ধ,
জীবন অাজও নিদারুণ অসহায় তামাম জমিন মধ্য।
অাজও শুনি অামি মৃত্যুর ধ্বনি; বাতাসে বারুদের গন্ধ…
অাজও দেখি অামি পুরো পৃথিবী বোমার ধোঁয়ায় অন্ধ!
অাজও মানুষের বিবেক হলো না, বিস্ময় জাগে বুকে!
রক্ত অাজ ঢেলে দাও তবে, পিপাসু পৃথিবীর মুখে!
যুদ্ধ যদি করতে হয়, তবে করো জীবনের সাথে যুদ্ধ...
জীবনযুদ্ধে, অালোর রোদ্দে করো রে তাঁহা শুদ্ধ।
যুদ্ধ, অামি ক্ষুব্ধ; তবু তোমার হাঙ্গামা থামলো না...
ক্ষুব্ধ অামার মানুষসত্তা— কেউ তা জানলো না!

২. জাগো হে তারুণ্য

জাগো হে তারুণ্য!
জাগো অাজ সমস্বরে...
নেমে পড়ো বিদ্রোহে পৃথবীর 'পরে।
জাতি অাজ লজ্জিত, চারিদিকে শুধু লজ্জা!
অাজ গায়ের পশম রুখে দাঁড়াক, কাঁপুক অস্থিমজ্জা।
যুদ্ধের কোলাহলে, বিবেকের কল্লোলে ওঠো অাজ জেগে
ঝাঁপিয়ে পড়ো তুফান হয়ে অাঁধার মত্ত মেঘে।
ছিঁড়ে ফেলো যতো শৃঙ্খল-বাধা, লঙ্ঘিয়ে যাও রাত্রি
হে অামার তারুণ্য! মৃত্যু অভিযাত্রী...
জাগো হে তারুণ্য!
অাজ জাগ্রত করো চেতন,
তোমার রক্তে উড্ডীন হোক ধর্ষিত পৃথিবীর কেতন।

৩. কলম

হে অামার কলম তুমি যেও না থেমে;
কবিতার পাতায় বিদ্রোহ হয়ে এসো অাজ নেমে।
তোমার কালিতে যেনে জ্বলে ওঠে অাজ বিদ্রোহের অগ্নিশিখা,
জালিমদের মৃত্যু তোমার কালিতে থাকে যেন অাজ লেখা।
লেখা থাকে যেন তোমার কালিতে সাম্যের কবিতাখানি,
যেন থাকে লেখা তোমার কালিতে তারুণ্যের মহাবাণী।
কলম তুমি থেমে যেও না, চলতে অাবার লাগো…
দানব-দাজ্জাল যে যেখানে বিশ্ব থেকে ভাগো।

৪. জন্মই অামার জয়

নিঃশ্বাসে অামার বহ্নি জ্বলে, বারুদ গন্ধে শ্বাস
বুকের মাঝে কবিতা অামার, জন্ম-মৃত্যু চাষ।
হারিয়ে কাব্য, বাজায় বাদ্য বহ্নিতে ঢালি শপ্ত—
কাব্য অামার হারতে জানে না, পৃথিবীতে করেছি রপ্ত।
নতুন করে স্বপ্ন অাবার, নতুন করে লেখা...
নতুন করে ভুলের মাঝে জীবনের কাব্য শেখা।
চারিদিকে বিস্ময় পৃথিবী তাকিয়ে! নেই কোনো মোর ভয়—
কর্দমায় অামার জন্ম মাগো; তবু `জন্মই অামার জয়'।

৫. নববার্তা

চারিদিকে জুলুম! ধ্বংস! দাঙ্গা! রুখবে এসব কে?
মায়ের গর্ভ ছেড়ে আজ পৃথিবীতে আসছে যেঁ।
তাঁর দিকে আজ আগামী চেয়ে, ধরিবে হাল বুঝি
তাঁর মাঝে আমি যে আজ চেতনার স্বপ্ন খুঁজি।
হুঙ্কারিত অঙ্গনে, কালের প্রাঙ্গনে আজও যুদ্ধের বার্তা শুনি...
আজকের নবজাতকের মাঝখানে আমি নতুন বিস্ময় বুনি।
আর নয় রক্ত, আর নয় হাঙ্গামা; ধ্বংসখেলা হোক রিক্ত—
নবপ্লাবনের জোয়ারে আজ জাগ্রত হোক চিত্ত।
তাই মুছে যাক কালের বিভৎস ইতিহাস; থেমে যাক শকুনের থাবা।
যেঁ শিশু জন্ম নিলো আজ, সেঁ-ই আগামীর বাবা'।।

৬. অামি

অামি নজরুল নই, সুকান্ত নই
অামি বিদ্রোহ জাগাই অামার পৃথিবীময়।
অামি রাতের অাঁধারে চুপি-চুপি
খুঁজি জীবনের কুঁপি,
অামি অবাধ্য, জুলুমের কাছে তাণ্ডব!
অামি অামার পৃথিবীতে তাজ্জ্বব!
অামি কবিতা লিখতে নিয়েছি জন্ম
এ পৃথিবীতে অদ্য—
অামি অাগুনে ঝলসি, বিদ্রোহে জ্বলছি
`দাবানল' অামার পদ্য।

৭..থাকব না তবু

থাকব না তবু, পৃথিবীতে অামি কণ্ঠে ফোলিব বাজ—
পৃথিবীতে স্থান করে যাব অাজ।
জরা-জীর্ণ, দীর্ণ-শীর্ণ পৃথিবীতে হানিব ঝঙ্কার...
কণ্ঠ মোর থামবে না তবু, চির বিদ্রোহ হুঙ্কার।
নাঁচাব কলম, কাঁপাব কবিতা— জীবন প্রচণ্ড প্রতাপে হবে খণ্ড!
তবু, পার পাবে না জানোয়ার-শূয়োর!! পার পাবে না কোনো ভণ্ড!
থাকব না তবু, এ পৃথিবীতে রেখে যাব মোর কর্ম—
জীবন অামার লভুক শাণিত কবিতা বর্ম।
চলে যাব অামি; তবু, কাঁদাব বিশ্বকে...
সংকল্প তাই অাজ দৃঢ় অামার লক্ষ্যকে।

৮. প্রশ্ন

ওঁদের শরীরের ঘাম,
বাবু সা’ব তুমি কতো দিয়েছো দাম?
কতো দামে কিনেছো তুমি ওঁদের বাগানের জবা?
কোন্ অধিকারে মেরেছো তুমি ওঁদের খাবারে থাবা?
ভুলে কি গিয়েছো ইতিহাস তুমি, ভুলে কি গিয়েছো অতীত?
যাঁদের অবদানে শক্ত তোমাদের ওই ভিত্।
ভুলো না বাবু; সাবধান! ভুলো না তোমার সত্তা—
হায়রে, পৃথিবী! তোমরা মনিব, আমরাই পথের কুততা।

৯. দানব

ও মানব,
না-কি দানব?
মুখোশ ওর সরাও—
সকল অসত্যের রাস্তা মড়াও।
ও মানুষ নয়, মুখোশের অাড়ালে থাকে;
ভুল করেছি অামরা মানুষ ভেবে ওকে।
ও দানব! খুবলে খাবে গোটা বিশ্ব!
মাটিতে তাকিয়ে দেখি অাজও রক্তগঙ্গার দৃশ্য!
গেঁথে অাছে অাজও অামার চোখে মানুষের বিভৎস্য লাশ!
ও দানব!! এদেশে কিভাবে করে বাস!
অাজ অাবারও তাই দ্রোহ জাগে ধুত্তুর!
বড়ো নেশা লাগে মৃত্যুর।

১০. অধিকার দাও!

বাঁচার অামার অধিকার দাও! বেশি চাব না কিছু
জন্ম অামার পৃথিবীতে, অামি এক মানব শিশু।
অবহেলার সাথে বাড়ন্ত অামার বঞ্চিত অস্তিত্ব সত্তা,
তবু, অামার মাঝে এক অাগামী পৃথিবী— করো না তাঁরে হত্যা।
নতুন পৃথিবী অামার দিকে তাকিয়ে অাছে বিস্ময়ে!
কর্মে অামার জিতব জন্ম, দুরন্ত নির্ভয়ে।
দাও হে, অামায় অধিকার তুমি! দাও হে, অামায় ঝলকাতে
অাগুন হয়েই জ্বলব অামি বিজয়েরই উল্কাতে।