ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

রোহিঙ্গা সংকট : দ্রুত কার্যকর সমাধানই স্বস্তির পথ

২০১৮ সেপ্টেম্বর ৩০ ১৭:৩৬:২২
রোহিঙ্গা সংকট : দ্রুত কার্যকর সমাধানই স্বস্তির পথ

রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ


যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু ক্রমশ আমাদের দেশের জনগণের জন্য নানা রকম হুমকি ও শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা মোটেও সুখকর কিছু নয়! মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের জাতিগত নিধন শুরু হলে প্রায় ১০/১২ লক্ষ মানুষ প্রাণ ভয়ে আমাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্মরণকালের সেরা মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একান্তই মানবিক কারণে বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন! দ্রুত খাদ্য, বস্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ গ্রহণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তারপর থেকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে সাধুবাদ জানিয়েছেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর এমন সাহসি মানবিক উদ্যোগের জন্য ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধিতেও ভূষিত করা হয়েছে।

যাহোক, হঠাৎ করে এতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে নানা রকম সাহায্য সহযোগিতাও করে আসছে ওইসব দেশ, দাতা সংস্থা, দেশী/আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন সমূহ। এগুলোর পাশাপাশি এই সংকট নিরসনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে চলেছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ, বিশ্বের বিভিন্ন দাতাদেশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত তদন্তে উঠে এসেছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের নানা চিত্র, ভয়াবহতা ও নিসংশতার অকাট্য দলিল প্রমাণ। মায়ানমারের নানা আচরণ ও রোহিঙ্গাদের উপর তাদের সামরিক বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনকে স্মরণকালের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বর্বরতা ও গনহত্যা আখ্যায়িত করে বহির্বিশ্বে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। এমনকি এই সংকট নিরসনে মিয়ানমারের উপর জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের চাপও অব্যাহত রয়েছে বেশ জোড়ালো ভাবেই।

এরইমধ্যে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং একাধিক বার সমঝোতা স্মারক সই এবং কিছু চুক্তিও সই হয়েছে। দুঃখের বিষয় এখনও আশানুরূপ দৃশ্যমান আলোর মুখ দেখেনি তার অনেক কিছুই! শুধুমাত্র মিয়ানমার সরকার ও তাদের সামরিক কর্মকর্তাদের নানাবিধ গাফিলতির কারণে এমন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের এমন গাফিলতি সহ্যের সীমা অতিক্রম করার উপক্রম হয়েছে প্রায়। যা সত্যিই দুঃখজনক।

অন্যদিকে মানবতার কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা সৃষ্ট বাংলাদেশে চলমান অনেক অনাকাখাঙ্খিত সমস্যাগুলোকে মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে এদেশের জনগণ ও সরকারকে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা ও এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ব জনমত তৈরি করাসহ নানা রকমের পদক্ষেপ নেয়া কোন প্রকার গাফিলতি করেনি বর্তমান সরকার। কিন্তু দুঃখের বিষয় মিয়ানমারের ঢিলেঢালা ও গা ছাড়া ভাব বাংলাদেশ সরকারকে হতাশ করার পাশাপাশি ধর্য্যের পরীক্ষায় ফেলেছে। যত দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের সরকার, দেশ ও জাতির জন্য অস্বস্থির বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীকে স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের এমন অনাকাঙ্খিত আচরণকে দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক উপলব্ধি প্রকাশ করে শেখ হাসিনা মিয়ানমারকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'যুদ্ধে জড়াতে চাই না, তবে ধৈর্য হারাচ্ছি'।

এতো খোলামেলা শুশিয়ারি যদি মিয়ানমারের কানে না পৌঁছায়, তবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে গলা মিলিয়ে বলতে চাই, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না, তবে মিয়ানমারের নেতা অং সান সুচি আর সেদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকায় বাংলাদেশ ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছে।’ যা সত্যিই আশা করিনি আমরা।

জানি না এসব কথা বা ভাষা মিয়ানমার সরকার বুঝার মত মানসিক অবস্থায় আছেন কিনা। তারা তো কারো কথায় তেমন কর্ণপাত করেন বলে তেমন মনে হয় নাই আমার। মিয়ানমার সরকার ও তাদের অত্যাচারী সেনাবাহিনী বুঝলে ভালো, না বুঝলে তা হবে তাদের জন্য আরো আত্মঘাতি ও ভুলে ভরা সমীকরণের সামিল। যার দায়ভারও শুধুই তাদের নিতে হবে হয়তো।

আমরা বাঙালি। আমরা বীরের জাতি। মিয়ানমার যেন আমাদের গৌরব উজ্জ্বল ও ত্যাগের মহিমায় অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা ভুলে না যায়। রোহিঙ্গা নিধনের মহা উৎসবের সময় তারা আমাদের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করেছিলো। ওই সময়ে সীমান্তে একটা উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলো। তাদের উদ্দেশ্য কি ছিলো জানি না তবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যথেস্ট ধৈর্যযশীলতার পরিচয় দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আশা করি মিয়ানমারও শান্তির বার্তা বহন করবে এবং কৃতজ্ঞচিত্তে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি যথাথত সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চলমান রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান করবেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয়কৃত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে আমাদের ও বিশ্ববাসীর চাওয়া পাওয়ার সুফল প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবেন।

অন্যথায় দেখে শুনে বুঝে ঠান্ডা মাথায় তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে বাংলাদেশ হয়ত কোন প্রকার ভুল করবে না। এবং তাতে জাতিসংঘ এবং বিশ্ব হয়ত বাংলাদেশের সাথেই থাকবে। আর আমি মোটামুটি নিশ্চিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার ইতিহাস ভবিষ্যত বিশ্ব নিন্দিত ও কলঙ্গিত ইতিহাস হিসেবে জানবে। আর স্মরণকালের এই বর্বরতা এবং নিসংশ গণহত্যার বিচারও একদিন হবে, হোক সেটা মরণোত্তর বা জীবদ্ধসায়। সময়ই তা বলে দিবে।

ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করেনি, মিয়ানমারে অং সান সু চির সরকার এবং সুচির সেনারাও হয়ত এই ঘৃণিত পাপের শাস্তি থেকে মুক্তি বা ক্ষমা পাবেনা। আফসোস, জাতি নিধনের চেষ্টার এই কালো অধ্যায়ের রচয়িতাদের প্রধান একজন (সু চি) কোন এক সময় শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন।

লেখক : রাজনৈতিক কর্মী