ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

নৌকার পক্ষে প্রচারণায় বাধা কাম্য নয়!

২০১৮ অক্টোবর ০৩ ১৮:০৪:৪৬
নৌকার পক্ষে প্রচারণায় বাধা কাম্য নয়!

রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ


সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ফরিদপুর সদর তথা ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সেটা এখন প্রায় সবারই জানা। ব্যাক্তিগতভাবে তিনি আওয়ামীলীগ সাপোর্ট করেন, আওয়ামীলীগ ভালোবাসেন, আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করেন, সুতরাং তিনি মনোনয়ন চাইতেই পারেন। এই দেশের জন্য তার বা তার পরিবারের ত্যাগের কথা দেশবাসীর অজানা নয়।

যাহোক, তিনি চাইলেই যে মনোনয়ন পেয়ে যাবেন তার তো কোন প্রকার গ্যারান্টি নাই। শুধু ফরিদপুর-৩ নয়, বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো নির্বাচনী এলাকায় একাধিক মোনোনয়ন প্রার্থী রয়েছে আওয়ামীলীগে। তারা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে ভিবিন্ন ধরনের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। যারাই চালাচ্ছেন তারাই নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। এইটাতে দোষের কিছু আছে বলে মনে করি না।

সাংবাদিক প্রবীর সিকদার আমাকে জানালেন, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা ফরিদপুরের কানাইপুর বাজারে তার নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার ব্যানার ছিড়ে ফেলেছে! আমার কাছে ব্যাপারটা মোটেও শোভনীয় মনে হয় নাই। প্রবীর সিকদার প্রচারণা করলেই যে তিনি নমিনেশন পাবেন তার গ্যারান্টি কি? এবং তার পোস্টার ছিড়লেই যে সেটা জনমনে প্রশ্ন ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিবেনা তার নিশ্চয়তা কে দিবে? পোস্টার যারা ছিড়েছেন তাদের নেতার জনপ্রিয়তা এই ঘৃণ্য কাজের জন্য কমবে না তারই বা গ্যারান্টি কি?

কাউকে খুশি করার জন্য যদি এই ঘৃণিত কাজ করে থাকেন তবে নেতা খুশি হবেন কিনা জানি না। তার স্থানে আমি হলে নির্বাচনের আগে এমন কাজের জন্য পোস্টার ছেড়া ব্যাক্তিকে আমার প্রধান শত্রু ভাবতাম। কারণ নির্বাচনের আগে এই ধরনের কাজ আলোচনা থেকে সমালোচনার পাল্লাই ভারী করে বেশি। এই কাজের সত্যতা প্রকাশ পাবেই, মফস্বলে এইসব গোপন থাকেনা। আর সত্যিটা প্রকাশ পেলে যদি জনগণ ইমোশনাল হয়ে পড়ে তবে এই কাজে ক্ষতিটা যার পক্ষের লোক ছিড়েছে তারই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা ওই নেতার জন্য সুখকর হয়না।

অপরদিকে নিজ দলের কেউ না হয়ে যদি অন্য কোন দলের কেউ এই কাজ করে থাকে তবে সেটা একটা অবশ্যই ভাবনা ও শঙ্কার বিষয়ই বটে। নমিনেশন পাওয়ার আগে নৌকার পক্ষে লাগানো পোস্টার ছেড়া কিসের লক্ষণ বা কিসের আলামত বহন করছে তা আমার চিন্তা শক্তির বাইরে।

যাহোক, প্রবীর সিকদারের পোস্টার ছিড়ে হয়ত উনার প্রচারণা থামানো যাবে কিন্তু ওনাকে ধামানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কবে তারা বুঝবেন এসব কাজ করলে প্রবীর সিকদারের জনপ্রিয়তা বাড়বে ছাড়া কমবে না। কে বা কারা এইটা করেছে আমি তাও আমি জানিনা। শুনেছি, ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোট চার জন। তবে যারাই করুক তারা কাজটা ভালো কিছু করছেন না। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে এমন কাজ কারো জন্যই ইতিবাচক কিছু বহন করবে না।

ভুলে গেলে চলবে না, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আর ভোটের ও মাঠের রাজনীতির হিসাব মিলানো হয়তো এতো সহজ কাজও নয়। সামান্য একটু ভুল সব কিছু পাল্টে দিতে পারে। তোষামদকারী, চগলখোর, মতলববাজ, সুবিধাভোগী এবং অনুপ্রবেশকারী লোকজনই নেতাদের ডুবায়। নিজের বা দলের পরীক্ষিত কর্মীরা কখনোই তা নয়। নেতা দোষ না করেও কখনো কখনো দোষী হয়ে যায় শুধুমাত্র তার পাশের কিছু অসাধু ধান্দাবাজদের কারণে। যা অত্যন্ত কষ্টকর বিব্রতকর হয় নেতার জন্য।

শেষকথা, ফরিদপুরসহ দেশের সকল নির্বাচনী এলাকায় গণতান্ত্রিক ধারায় সুস্থ প্রচারণা চালানো, সবাই মাঠে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে সেই নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি, এবং তা নিশ্চিত করতে সবারই আন্তরিকতা ও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা জরুরি। অন্যথায় কলুষিত হবে রাজনীতি, বিতর্কিত হবে নির্বাচন, বিনষ্ট হয়ে পড়বে শেখ হাসিনার নিজ হাতে গড়া সুস্থ ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তথা জনগণের ক্ষমতায়ন। সর্বোপরি হুমকিতে পড়বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও সাফল্যের সব অর্জন। যা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।

লেখক : রাজনৈতিক কর্মী