ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

বোন শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি

২০১৮ অক্টোবর ০৯ ২৩:৫৫:৪১
বোন শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি

প্রবীর সিকদার


পরম শ্রদ্ধাভাজন আপা,
একাত্তরে বাবা হারানোর পর বঙ্গবন্ধুকেই বাবা জ্ঞানে শ্রদ্ধা করি। সেই পরম অনুভব থেকেই আপনি আমার বড় বোন, আশ্রয়ের বটবৃক্ষ। আর সেই শ্রদ্ধাবোধ থেকে আমার লেখা বই 'আমার বোন শেখ হাসিনা' ওয়ান-ইলেভেনের সময় কারাবন্দী বোন শেখ হাসিনা তথা আপনার মুক্তি আন্দোলনে খুব ছোট করে হলেও অবদান রেখেছিল।

ওই সময়ে আপনার মুক্তির দাবি সম্বলিত ১০হাজার পোস্টকার্ড চিঠি, যে চিঠিগুলো আমার নিজের হাতের লেখা, সেই পোস্টকার্ডগুলো সরকারের শীর্ষ থেকে তৃনমূলের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। অভিনব ওই আন্দোলনের নাম দিয়েছিলাম 'পোস্টকার্ড আপিল'। আপনার গ্রেফতার বরণের পরের দিন থেকে ওই পোস্টকার্ড আপিল চলেছিল আপনার মুক্তির আগের দিন পর্যন্ত।

২০০১ সালে রাজাকারের নৃশংস হামলায় আমি তো মরতেই বসেছিলাম! আপনার সহমর্মিতা সহযোগিতায় দেশ-বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় মৃত্যুর কবল থেকে ফিরে এলেও আমাকে হারাতে হয় একটি পা এবং স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় আমার একটি হাত। ওই বছরেই চিকিৎসা শেষে আপনার দেওয়া কৃত্রিম পায়ে ভর করে আপনাকে সালাম জানাতেই গণভবনে গিয়েছিলাম। সেদিন আপনি আমাকে ও আমার স্ত্রী-সন্তানদেরকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়ে পাশে থাকার মমতা দেখিয়েছিলেন। এমনকি কোনো সমস্যা হলে আমরা যেন আপনার কাছে ছুটে যাই, সেই ভরসাও দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আপনি আমার ফরিদপুরের বাসায় টেলিফোন করেও আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। সেই স্মৃতি ভুলে যাবার নয়!

তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়! ঢাকার পূর্বাচল কিংবা উত্তরায় আপনার সরকারের তত্বাবধানে রাজউক সাংবাদিকদের মধ্যে বিশেষ সাংবাদিক কোটায় অনেককেই প্লট দিয়েছে। আপনি প্রতি বছর সাংবাদিকদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, এই ঢাকার শহরে আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কতো লড়াই করে টিকে আছি! তারপরও আমি কখনোই রাজউকের প্লট কিংবা অর্থ সহায়তার জন্য আপনার কাছে যাইনি।

আপা, আজ আমি আপনার কাছে কিছু চাইতেই এই শব্দ বাক্যের অবতারণা করছি। আমি দৃঢ় ভাবেই বিশ্বাস করি, মমতাময়ী আমার বোন শেখ হাসিনা আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না, দিতে পারেনও না। একটি সুখী সুন্দর বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আপনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে আপনার সফরসঙ্গী হিসেবে ৬ দিনের চীন সফরকালে আমি খুব কাছে থেকে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করেছি। সেই সময় থেকেই আমি নিজেকে মানসিক ভাবে তৈরি করেছি আপনার পাশে থেকে দেশ সেবা করবার। সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম আমি।

সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে আপনার পাশে থেকে দেশ সেবার অংশ হিসেবেই ফরিদপুর সদর সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হতে চাইছি। আমাকে মাত্র একটি বার সংসদ সদস্য হিসেবে দেশ সেবার সুযোগ আপনি করে দিন! আমি কথা দিচ্ছি, আপনি হতাশ হবেন না। আপনার দেওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আমি দেশ ও আওয়ামীলীগের জন্য অবদান রেখেই মরতে চাই। এমন একটি সার্থক মৃত্যুর জন্য আপনি ছাড়া আর কে-ই বা আমার জন্য পথ করে দিবে!

ভালো থাকবেন আপা, অনেক ভালো। অভাগা এই দেশটির জন্য আপনাকে আমার চাই আরও এক শ' বছর! জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় শেখ হাসিনা!