ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » প্রবাসের চিঠি » বিস্তারিত

জমজমাট মাসুদা ভাট্টি নাটক 

২০১৮ অক্টোবর ২৪ ১৬:০৫:৪৪
জমজমাট মাসুদা ভাট্টি নাটক 

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক : মাসুদা ভাট্টি নাটকে বড় ধরণের চমক ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন গ্রেফতার। বিজয়ী মিস ভাট্টি। কংগ্রেচুলেশন। এই নাটকে নায়িকা ভাট্টির আর একটি বিজয়, তসলিমা নাসরিন তাঁর বিরুদ্ধে লিখেছেন। একবার নয়, দু’বার? মিস ভাট্টি তসলিমার লেখায় বেঁচে থাকবেন। একজন লেখকের জন্যে এটি বড় পাওনা। এরচেয়েও বড় বিজয় নাটকটি ‘নারীইস্যূ’ হয়েছে। সিনেমা বা নাটকে ডিরেক্টর যার পক্ষে তিনিই যেতেন, সময় ভাট্টির পক্ষে, তাই তার জয়জয়কার।

এটি কেন নারীইস্যূ হলো বোধগম্য নয়, কিন্তু হয়েছে। দেশে এত ধর্ষণ, নির্যাতন কিন্তু নারী ইস্যু হয়না। ২০১৩-তে টিভি রিপোর্টার নাদিয়া শারমিনকে হেফাজতিরা প্রকাশ রাস্তায় হেনস্থা ও মারধর করেছে, নারী ইস্যু হয়নি। কেউ এজন্যে গ্রেফতার হয়নি? নারী সাংবাদিকরা তখন মাঠে নামেন নি? এমনকি ‘তেঁতুল’ উপাধি মাথায় নিয়েও ওনারা হুজুরের বিরুদ্ধে সভা করেননি। এ মুহূর্তে ‘মী-টু’ আন্দোলনে তাদের কোন উৎসাহ নাই? অথচ, সদ্য ভারতে ‘মী-টু’ আন্দোলনে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী এমজে আকবর পদত্যাগ করেছেন।

মঈনুল হোসেন গ্রেফতার হয়েছেন রংপুরের একটি মামলায়, যাতে একজন মহিলা মানহানীর মামলা করেন। যার মানহানী হলো, মামলা কি তিনি ব্যাতিত অন্যরা করতে পারেন? আর পারলেও আদালত কি সেটি গ্রহণ করে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করতে পারেন? মাসুদা ভাট্টি প্রমান করেছেন, তিনি শক্তিশালী, ‘ব্যারিষ্টারের কথামত তার চরিত্রের জোর’ না থাকলেও খুঁটির জোর বেশ শক্ত। তবে তার চরিত্রের কালিমা ঘোচাতে বিবৃতি এসেছে, ব্যারিষ্টারের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল হয়েছে।

আমি ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেনের বিপক্ষে। জামাত বা জামাতীদের পক্ষে যারা কথা বলে, তাদের আমি বিপক্ষে। আমি পাকিস্তানের বিপক্ষে, পাকিস্তান আমার কাছে ‘বিষফোঁড়া’। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র, সংবিধান, মানসিকতা সবই তো পাকিস্তানের মত? আমরা জামাতকে নিষিদ্ধ করিনি; বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাইনি। আমাদের সকল রাজনৈতিক দলেরই মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে ‘গাঁটছড়া’ বাঁধা আছে? পাকিস্তানের ন্যায় ধর্ম আমাদের রাজনীতির মুখ্য উপাদান।

বহির্বিশ্বে এই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বড়বড় মিডিয়ায় ‘মঈনুল গ্রেফতার’ নিউজ সরকারের বিপক্ষে গেছে। এ ঘটনার পর ঢাকার ‘টক-শো’-তে বিরোধীদের আকাল পড়বে। আমি মাসুদ ভাট্টির বিরুদ্ধে নই, তবে তার কথাবার্তায় সাংবাদিক নয়, দলীয় পরিচয়টা বেশি ফুটে ওঠে। এরা ক’জনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছেন যে, মেশিনের একদিক দিয়ে রাজাকার ঢুকিয়ে অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে বের করে নিয়ে আসছেন। এজন্যে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এখনো বাড়ছেই?

এই ভদ্রমহলার নামটি যখন প্রথম শুনি, তখন মনে হয়েছিলো তিনি পাকিস্তানী। পরে দেখলাম তিনি বাংলায় লিখছেন। বাঙ্গালী। লেখা দেখে বুঝলাম, লেখক নিজেকে প্রগতিশীল কাতারে রাখতে সচেষ্ট। ব্যারিষ্টারের সাথে তার ‘টক-শো’র ‘হট-এক্সচেঞ্জ’ দেখে আমার প্রথম রিয়েকশন ছিলো, ‘মঈনুল হোসেন কাজটি ঠিক করেননি, তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। এও বলেছি, মঈনুল হোসেন যে কারণে পরিত্যক্ত, একই কারণে মিস ভাট্টিও যে পরিত্যক্ত হবেন না তা কি কেউ জোর দিয়ে বলতে পারেন?

মাসুদ ভাট্টির সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোন সম্পর্ক নেই? ক’বছর আগে ইনি নিউইয়র্কে মুক্তধারার বইমেলায় এসেছিলেন। বলেছিলাম, আপনার সাথে কথা বলতে চাই। কথা হয়নি। ওয়েব ঘেটেও তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়না। বিশেষত: ২০০৩’র আগেকার কথা? তার বাঁশের কলম আর তালের পাতায় হাতেখড়ি’র চেতনা যদি বিয়ে-বিচ্ছেদের পর হয়ে থাকে, তাতে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই? তার লেখালেখির সাথে কিছুটা পরিচিত। তাকে মাঝে-মধ্যে অতিমাত্রায় চেতনা-বিপ্লবী মনে হয়?

একজন ফজলুল কবিরী তার ব্লগে লিখেছেন, মাসুদ ভাট্টির ‘ষোলকলার এক কলা’ গল্পটি জগদীশ গুপ্তের একটি গল্পের কার্বন কপি? পাঠক, এ নিবন্ধ লেখার কারণে কেউ যেন আমায় ‘জামাত-বিএনপি’ বানিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন না? আমি খাঁটি বঙ্গবন্ধু অনুসারী, তবে ‘তেল’ দিতে শিখিনি। তাই উন্নতি করতে পারিনি, ইচ্ছেও নেই? কিন্তু, আমাদের চেতনাবাজ সাংবাদিকদের ২০০৮’র পর সম্পদের হিসাব নিলে ‘চেতনার’ মূল রহস্য বের হতে পারে? কখনো যে তা হবেনা, তা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায়না, কথায় বলে, সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস আছে, স্বল্প সংখ্যক সাংবাদিকের অতিমাত্রায় ‘তোষামোদী’ বা ‘ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার’ কারণে পেশা ও রাজনীতি দু’টোই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এদের কেউ কেউ, সরকারকে ক্ষমতায় রাখার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন? যদিও এই দায়িত্ব কেউ তাদের দেয়নি? একটি ঘটনা বলি। নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী এলে সাংবাদিক সম্মেলন হয়, এবারো হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা আগেই ঠিক করে দেন, কোন মিডিয়া প্রশ্ন করবেন। অন্যদের তেমন একটা সুযোগ থাকেনা। তদুপরি, হলভর্তি ক্যাডার থাকায় অন্যরা প্রশ্ন করার রিস্ক নেন না।

এবার এনিয়ে মিশনের সাথে এক সম্পাদকের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তারা আগেভাগেই প্রধানমন্ত্রীকে কঠিন প্রশ্ন থেকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন? আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী এসব জানেন না। প্রশ্ন হলো, আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী কি সাংবাদিকের কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম? মোটেই না, বরং, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাংবাদিক কোথায়? তারপরও আমলারা এটি করেন। একইভাবে কিছু সাংবাদিক সরকার রক্ষার বা ফেলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন? এরা ভুলে যায় যে, একজন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী ভুঁইফোড় নন, শক্ত মাটির ওপরে দাঁড়িয়েই তারা কথা বলেন! তাই, সাংবাদিক তার পেশার কাজটি সঠিকভাবে করলে দেশ ও তার প্রিয় দলের উপকার হয়, ‘তেলে’ নয়?

(এস/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০১৮)