ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত

এইচ আই হামজা’র আটটি কবিতা

২০১৮ নভেম্বর ০২ ১৮:০০:২৪
এইচ আই হামজা’র আটটি কবিতা







সেই কবিতা

আসুন আমরা আবার কবিতায় ফিরে যাই
আমরা সেই কবিতা পড়তে,লিখতে ও শুনতে চাই
যে কবিতা মানুষের কথা বলে।
যে কবিতা দেশ, মা, মাটি, মনুষ্যত্বের কথা বলে।
কবিতা সর্বত্র মুক্তির দিশারী,আন্দোলনের গান!
কবিতায় বঞ্চিতের আর্তনাদ, অভুক্তের ব্যথা, চিরন্তন সত্য থাকে।
আমার বিশ্বাস আমরা সেই কবি ও কবিতায় ফিরতে উন্মুখ!
আসুন আমরা আবার সেই কবিতায় ফিরে যাই
যে কবিতা মানচিত্র, পতাকা এবং সার্বভৌমত্বের কথা বলে
কবিতা ফুল ও শিশুর কথা বলে
কবিতা প্রেম ও বৃষ্টির কথা বলে
কবিতায় নদী, পাহাড়, ঝর্নার মিতালী
নীলাভ আকাশ, জোছনা ও শিশিরের কথা বলে
আসুন কবিতায় মুড়ে দিই উলঙ্গের দেহ
মুছে দিই মায়ের চোখ
প্রেমিকার বুকে লিখে দেই হাসিমাখা উষ্ণ প্রেম।
আমরা এমন একটি কবিতার কথা বলি
যে কবিতা মাদিবা, তেরেসা,বিবেকান্দ ও নজরুল লিখেছে
যে কবিতা লেনিন, চে"
গান্ধী থেকে মুজিব লিখেছে অবিশ্রান্ত
এখনো কেউ কেউ লিখে যাচ্ছে অবিরাম।
এবং কি তাঁরা আমৃত্যু কবিতার কথা বলেছে
আসুন আমরা এমন একটি কবিতা লিখি
বৃষ্টিতে ভিজে রৌদ্রে, শুকিয়ে যেমন করে,
লেখে আমাদের কৃষক, কারখানার শ্রমিক!
যে কবিতায় সুর উঠে শান্তি সাম্যের ও সত্যের।
আমরা আবার সেই কবিতায় ফিরে যাই
যে কবিতা জাতিসত্তা থেকে বিশ্বসত্ত্বার কথা বলে
যে কবিতায় সফেদ আকাশ, নীলাভ সূর্য চিরন্তন জোছনার কথা বলে
যে কবিতায় কাঁটাতার, যুদ্ধ থাকে না
যে কবিতায় সুপারসনিক যুদ্ধ বিমান, টর্পেডো থাকে না
যে কবিতায় পারমাণবিক বোমা, মিসাইল থাকে না
আমরা সেই কবিতা চাই
আমরা এমন একটি কবিতায় ফিরতে চাই
যে কবিতা মাতৃত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সত্যের কথা বলে
আসুন আমরা আবার সেই কবিতায় ফিরতে চাই

আলোর মিছিলে শত ফুল

আঁধার ঘনিয়ে এসেছে ঐ দূর অন্ধকার
বনজঙ্গলের দ্বারে।
মাঝি তরী বায়, তীরে এসে থেমে যায়,
নৌকা বাঁধা ঘাটে সারে সারে
শূন্য সে ঘাট, জনশূন্য মাঠ,জীবন থেমে যায়
চলেছে যারা এই পথ
ভুলেনি ওরা, দীপ্ত মনের সিক্ত শপথ
দূর হতে থেকে থেকে আসে,বাঁশির সুর
ফেলে আসা অতীত, বাজে বেদনার করুণ সুর
এই ঘাট হতে, শত পথিক, গিয়েছে শত পথে
থেমে থাকেনি জীবন,কারো কোন মতে
অথচ তরুণ, এখনো পথ রয়েছে বেশ
ভাবছ হেথা পথ চলা তোমার হল শেষ?
অনেক তরুণ, ছুটেছে দারুণ এখনো অনেক বাকি
কেউ কেউ থেমে যাবে, পথ দিবে না তবু ফাঁকি
পথ চলেছে পথের মতো
পথিক চলেছে শত
ইতিহাস বলে তোমার সাথি
ছিল শত রথী-মহারথী
তবে কেন ভয়, তবে এতো সংশয়
অথচ দেখো পথে ফুটেছে শত তাজা ফুল,
ভেঙেছে নদীর দুকূল
তবুও পথের হয়নি আজও শেষ
এসো নবীন আলোর মিছিলে রাঙাতে এই দেশ
জাগ্রত যে ঘুমিয়ে আছে সে
জাগ্রতকে জাগাও
ওহে নবীন বন্ধুর পথে প্রাণ দিতে
জীবনের জয়গান গাও

আলো আঁধারের নষ্ট খেলা

কষ্টেরা নষ্ট হতে বলে বারবার।
তবুও আমি কষ্টকেই বলি বন্ধু,
চোখের জলে যখন বুক ভাসে-
সময়ের সকল প্রতিকূল স্রোতে।
তখন অন্ধকারকে ডেকে নিই একান্তে,
অন্ধকার আমার প্রিয়!
যখন দিনের সমস্ত ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ে গোধূলি বিকেল।
যখন হিমেল হাওয়ায় একরাশ স্নিগ্ধ প্রশান্তি এসে আন্দোলিত করে।
প্রতিকূল মুহূর্তের কাছে নিজেকে খুঁজে নিই একান্ত গোপনে।
স্বর্ণ শোভিত নারীর কোমল অঙ্গ যেমন অলংকৃত করে অপরূপ রূপে!
ঠিক প্রতিকূল মুহূর্ত শাণিত করে,
আন্দোলিত করে বারবার।
যদিও অন্ধকার আমার প্রিয়!
খুঁজে ফিরি দুঃখগাঁথার মাঝে হৃত সুখ!
বনের সমস্ত পাখি, সাগরের তিমিরা ছুটে চলে।
দিগন্ত ছেড়ে এক অনাগত মহাকালের গর্ভে!
তখন নিত্য ছুটে চলার মাঝে খুঁজে পাই-
জীবনের অনন্ত আঁধার।
মেঘকন্যারা পাহাড় জুড়ে খেলা করে
নিত্য আঁকে জলরঙ, মধুর আল্পনা।
স্বপ্ন খেলা করে দু-চোখ ভরে
এ খেলা আলো আঁধারের সাপলুডুর খেলা
এ খেলা হেলায় হারিয়ে অবেলায় খোঁজে ফেরা জীবন তরী।
তবুও অন্ধকার আজন্ম বন্ধু আমার!
অন্ধকার তুমিই তো আমার সমস্ত প্রেরণার উৎস!
আঁধারের রাত্রিতে জেগে উঠা নতুন সূর্য আমার প্রিয়।
যদিও অন্ধকারের মাঝেই লুকিয়ে থাকে আলো
দূর্জন আমার প্রিয়!
নিন্দুক আমার প্রিয়!
দিনশেষে নষ্ট মনের কষ্ট ফেরি করি।
তবুও এই কষ্টই আমার অনন্ত আঁধার,আজন্ম বন্ধু!

ফুলকুঁড়ি

আঁধারের মেঘ কেটে ঐ আলোর রেখা জাগছে
ফুলকুঁড়ি ফুটছে ঐ ফুটছে
কারা যেন মৃদু পায় শিকল ছিঁড়ে দুরন্ত বেগে ছুটছে
ফুলকুঁড়ি ফুটছে ঐ ফুটছে
সীমান্ত ঘেরা ঐ দিগন্ত রেখা
মিথ্যার আবরণে সত্য ঢাকা
কাঁদছে মানুষ হাসছে পশু,নবতর ডাক আসছে
ফুলকুঁড়ি ফুটছে ঐ ফুটছে
এ ডাক বহু পুরনো, যুগে যুগে শত মনীষীর
হেরেছে সেকেল, গড়েছে সভ্যতা শত বীর
ফুলকুঁড়ি ফুটছে ঐ ফুটছে
আঁধারের মেঘ কেটে ঐ আলোর রেখা জাগছে।

ঈশ্বরের কাছে ছুটির প্রার্থনা

একদা প্রশান্তিকে বলেছিলাম
প্রশান্তি আমায় ছুটি দাও।
প্রতিউত্তরে প্রশান্তি বলেছিল ছুটি? সে বহুদূর!
তাই তো নিত্য ছুটির গান গাই।
শতকাল কেটে, শত বসন্ত শেষে!
মুক্তির অবারিত প্রান্তে এসে দেখি
জীবন খেয়ার নাবিক এখনো দূর অন্ধকারে।
একদা ক্লান্তিকে বলেছিলাম,
ক্লান্তি এবার মুক্তি দাও।
ক্লান্তিও বলেছিল সে শ্রান্তি চায়!
তাই বেদনার শত যন্ত্রণা সয়ে-
শত সহস্র বছর করেছি পার।
এতকাল যাকে নিরবে সয়েছি
রিক্তের বেদন হয়নি ছিন্ন,
সেও আজ ক্লান্তির ভারে নিমগ্নপ্রায়।
তাই আকাশকে বলেছিলাম-
এবার তোমার রঙ পাল্টাও!
আকাশ তাই হেসে কুটিকুটি।
শত রঙের অঝোর ঝলকানি শেষে-
শত হুঁকার ছেড়ে, বর্ষণে প্লাবিত করে জনপদ।
বাধ্য হয়ে ঈশ্বরকে বললাম-
হে ঈশ্বর এবার তোমার ঘণ্টা বাজাও।
আর বেরসিক ঈশ্বর কিনা সাঁজাল যন্ত্রণার অমোঘ নিয়তির করুণ জীবনের দারুণ এক আলেখ্য!

আফ্রিকানদের কথা বলছি

সাগরের উত্তাল ঢেউ,মায়াময় অরণ্য।
নিসর্গ পাহাড়ের বুকে মেঘ-
মেঘের নিচে স্বর্গরাজ্য,
যদিও সাম্রাজ্য বিস্তারে শকুনের চোখ চেয়ে আছে
কালো কালো মানুষের লাল সূর্য চোখ!
ওদের কেউ এখনো পৃথিবী দেখেনি!
দেখেছে বেঁচে থাকার লড়াই?
লড়াইয়ের অন্যপিঠে-
নিত্যকার খোরাক যেখানে সেই সমুদ্রের পাড়।
হীরের খনিতে চাবুক হাতে সভ্যতার খুনি ধবল মানুষেরা-
যারা একদিন স্বপ্ন দেখাবে বলে আজ স্বপ্নের ইজারা নিয়েছে।
আমি সেই সব বঞ্চিত আফ্রিকানদের কথা বলছি,
আমি বলছি,
যেখানে মানবিকতা আশ্রয় নিয়েছে মাদাগাস্কার বা সোমালিয়ার গহীন অরণ্যে।
চোখ ধাঁধানো রূপকথার ভীরে
লুকিয়ে আছে কালো অন্য এক ইতিহাস।
ওরা এখনো দেখেনি,
দেখেনি সভ্যতার আড়ালে-
লুকিয়ে থাকা অমানবিক আরেক সভ্যতা।
আমি আফ্রিকার কথা বলছি,
আমি বলছি সেই কালো মুষ্টিবদ্ধ হাতের কথা।
আমি মানুষের জয়গান শুনেছি নিপীড়িতের মুখে,
আমি আফ্রিকানদের এক রঙিন স্বপ্নের কথা বলছি।
যা ওরা প্রতিনিয়ত দেখে!
সভ্যতার পিশাচেরা বারণ করে স্বপ্ন দেখতে,
তবুও ওরা স্বপ্ন দেখুক-
অনাবিল শান্তি, সাম্য আর স্বাধীনতার।
ওরা স্বপ্ন দেখুক উড়ন্ত পাখি হবা।

চাঁদের আড়ষ্টতা

শান্ত নদীর তীরে শান্ত সবুজ
উপরে নীল আরো নীল আকাশে
চাঁদের আড়ষ্টতা
যেন মলিন লজ্জাবতীর লজ্জাস্ন ভিজে শরীর
ওদিকে রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসে ক্রমাগত
মেঘ কেটে কেটে লুকোচুরি খেলায় মাতে
সহস্র যুগের অনন্ত আঁধার
যেন ফণা তুলে দাঁড়িয়ে নাগিনি
অথচ সবেমাত্র ভোর হলো
আসসালাতু মিনাল খাইরুন নাও
দ্রোহধ্বনির মাদল বাজে
নিশাতুর চোখ আরও প্রগাঢ় আন্দোলিত
সঙ্গম সেরে ক্লান্ত যুবকের আবেশি ঘুম
স্নান সেরে যুবতীর গর্বের হাসি

দুধেল সঙ্গম

বৃষ্টিভেজা মধ্যরাতে যুগলবদ্ধ নতুন একটি কবিতা লিখি
কামনার তাড়নায় লেখা হোক নতুন গান
তোমার রেশমি চুড়ি, পশমি শাড়ি,
কপালের খাঁজে লাল অর্ধবৃত্ত চাঁদ
প্রায় সমকোণ দুটি ঠোঁটে মিলিত হোক সিগারেটে পোড়া আরো দুটি কালছে ঠোঁট
আমাদের চুম্বনে বসন্তের বৃষ্টিস্নাত রাত হোক দারুণ উত্তাপে ভরা
অনাবাদি জমিতে চলুক চাষের কর্ষণ
আজ রাতে নতুন কবিতার বীজ রোপিত হোক আমাদের নিত্য প্রলয় গীতে
আমাদের দুধেল সঙ্গমে জাগৃত বোধ হোক মানুষের।