ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য » বিস্তারিত

কিশোর কারুণিক’র ছোট গল্প

২০১৮ নভেম্বর ১৯ ০০:১৬:৫৩
কিশোর কারুণিক’র ছোট গল্প







অভাব

বাবার বুকের ব্যাথায় খুব বেশি হয়ে গিয়েছিল। বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল তাপস। ডাক্তার তার ফিস ছাড়া রুগি দেখবেন না। বড় ডাক্তার। ডাক্তার ফিস ৫০০টাকা। তাপস বুঝতে পারলো না এখন কী করবে। ওর কাছে কে যেন বলল সরকারী হসপিটালে নিয়ে যাও। রুগিকে আবার ভ্যানে তুলে সরকারী হসপিটালের দিকে ভ্যান ছুটছে হঠাৎ বাবার মুখ ঘুড়ে পড়লো। তাপস বুঝতে পারলো বাবা মারা গেলেন। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তাপস। আকাশ বাতাস কেঁপে উঠলো।

তাপসদের সংসারে বাবাই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। তাপসের বয়স ১৫ বছর। পাড়া প্রতিবেশিদের সহযোগীতায় মরদেহ গঙ্গাঁ দেবার ব্যবস্থা হলো। ধর্মীয় বিধান মতো কাঁচা গলায় দিয়েছে তাপস। সংসারে বোন আর মা। ঘরেতে একমুঠো চাল নেই। এই সময় আতপ চালের ভাত খেতে হয়, ধর্মীয় কিছু বিধান মানতে হয়। পাড়া প্রতিবেশিদের কথা মতো বাবার শ্রাদ্ধক্রিয়া কাজ পনের দিন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

প্রথম কয়েকদিন পাড়া প্রতিবেশিরা আতপ চাল আলু পটল দিয়ে যায়। ঐ দিয়েই চলে যায় পাঁচদিন। আজ সকাল থেকে পথের দিকে চেয়ে আছে কেউ যেন আসে। পৌষ মাস। সকালে স্নান করে গায়েই পরনের ধূতিটা শুকানো হয়ে গেল। দুপুর ২ট বেঁজে গেল। কিন্তু কারোর আসার কোন খোঁজ নেয়। ক্ষিধেতে ছটপট করছে ছোট বোন, ওর বোধ হয় খুব ক্ষিধে লেগেছে। এভাবেই চলে গেল দিনটা। পরের দিন আর শরীর চলে না। উঠানে বড়ই গাছ। তাপস স্নান করে গাছ ঝাকি দিলো, বেশ কিছু কুলফল পড়লো। ঐ দিয়েই ঐ দিনটা চললো। ঘরের পাশে কলা গাছের ঝাড়, গাছে কলা ধরেছে কিন্তু এখনো পক্ত হয় নি। কী আর করা কলার কান কেটে কলা সিদ্ধ করে খেয়ে ১৪দিন পার হলো। তবু কারো কাছে কিছু চায়নি তাপস। ওর খুব লজ্জা। পাশের বাড়ির একজন এসে বললো। তোর বাপের শ্রাদ্ধনুষ্ঠান না করলে তোর বাপের নরকেউ ঠায় হবে না।

তাপসের মা ওদের অভাবের কথা বললো। লোকটি বুদ্ধি দিলো মানুষের কাছে সাহার্য চায়তে। তাপস প্রথমে রাজি ছিল না। কিন্তু বাবা নরকেউ ঠাই হবে না ভয়ে লোকটির কথা মতো মানুষের কাছে বাজারে দোকানদার দের কাছে সাহার্য চায়লো।

মানুষজন তাদের সাধ্যমত সাহার্য করলো। ঠাকুর মশায় বড় একটি ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে বললে, “ফর্দের একটিও জিনিস যেন বাকি না থাকে তাহলে তোমার বাবার গতি হবে না। তাপস ফর্দের লেখা মতো সব জিনিস পাাতি কিনলো। দশ কেজি সিদ্ধ চাল, পাঁচ কেজি আতপ চাল, আলু, পঠল, ধূতি গামছা ইত্যাদি ।

আজ শ্রাদ্ধনুষ্ঠান। আজ ৯/১০ দিন অন্ন পেটে পড়েনি, ও ভেবেছে ভালোই হলো যে সব জিনিস কিনা হলো ও দিয়েই ওদের সংসার বেশ কিছুদিন চলে যাবে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে।

শ্রাদ্ধনুষ্ঠান হয়ে গেল। হাতে আর কোন টাকা নেই। বোনটা সকাল থেকে কাঁদছে, মা’র মুখে কোন কথা নেই। ঠাকুর মশায়ের আর্থিক অবস্থা ভালো। ঠাকুর মশায় কলাপাতা করে কী যেন তাপসের হাতে দিয়ে বলল, “নদীতে দিয়ে স্নান করে আসো। তাপস ঠাকুর মশায়ের কথা মতো তা করতে চললো। সঙ্গে ছোট বোন গেল।

বোন বললো, “দাদা খুব ক্ষিধে লেগেছে!”
“চল বাড়ি গিয়ে রান্না করব।”

বাড়ি ফিরে এসে দেথে ঠাকুর মশায় চাল ডাল পঠল সামগ্রী তার পুটলায় বেঁধে বসে আছে। তাপস বললো, “কাকাবাবু

আপনি সব চাল নিয়ে যাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ, এগুলো ব্রাহ্মনের পাওনা। আমার দক্ষিণা দাও।
“দক্ষিণা কোথায় পাব?”
“আমার দক্ষিণা না দিলে তোর বাপ নরক গামি হবে।”
“কী বলছেন কাকাবাবু?”

ঘরে ঢুকে কিছু কয়েন এনে ঠাকুর মশায়কে দিতে গেল। ঠাকুর মশায় রেগে উঠলো। তাপসকে মারতে গিয়ে ঠাকুর মশায় পড়ে গেল। ঠাকুর মশায় আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। ঠাকুর মশায়ের পা চেপে ধরলো তাপসের মা। ব্রাহ্মণ পা সরিয়ে নিলো, তাপসের মাথা গরম হয়ে গেল। তাপস চাল ডাল পটলের পুটলা কেড়ে নিলো, বললো, “এই চাল আমি ভিক্ষা করে এনেছি, আপনাকে দেব না, আমরা আজ দশদিন না খেয়ে আছি; আমার বোন ক্ষিধেতে কাঁদছে; আপনার তো অনেক আছে!”

আশেপাশে ছড়িয়ে পড়লো তাপস ঠাকুরমশায়কে মেরেছে। কিছু লোক এসে তাপসকে আচ্ছা মতো লাটি পেটা করলো। ঠাকুর মশায় তার পুটলাগুলো নিয়ে তাপসকে অভিশাপ দিতে দিতে তার বাড়ির পানে রওনা দিলো। লোক গুলো নানা কথা বলতে বলতে চলে গেল। তাপসকে জড়িয়ে ধরে বোন মা অঝরে কেঁদে উঠলো।