ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ফ্যাক্টর তরুণ ভোটাররা

২০১৮ ডিসেম্বর ১০ ১৮:০৭:৪৬
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ফ্যাক্টর তরুণ ভোটাররা

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারে তরুণ ভোটাররা। যারা বর্তমানে ‘তরুণ প্রজন্ম’ বলে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তরুণ ভোটারের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী এসব তরুণ ভোটারদের মধ্যে দেশপ্রেম রয়েছে। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি অরাজনৈতিক আন্দোলনে এদের সাহসী উপস্থিতি এবং অংশগ্রহন লক্ষ্যনীয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের কারণে এই তরুণ প্রজন্ম অবাধ তথ্য প্রবাহের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ভাবেও তারা সচেতন। আর এ কারনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে এই তরুণ প্রজন্ম তথা তরুণ ভোটাররা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনটি মনে করছেন।

প্রসঙ্গত ক্রমে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০০০ সালের ঠিক আগে যারা জন্ম গ্রহন করেছেন, তাদের বলা হয় জেনারেশন জেড বা প্রজন্ম জেড। তাদের বড় অংশই সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। তবে তারা রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন।

আন্তর্জাতিক গবেষনা বলছে, তরুণ প্রজন্ম অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর আর নিজেদের অনেক বেশি বৈশ্বিক নাগরিক মনে করেন। আর এই তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের সমর্থন আদায় করার জন্য দল বা জোট গুলো কৌশলী ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচনী ইস্তেহারে এই তরুন প্রজন্মের প্রয়োজনকে দল বা জোট গুলো কতটা গুরুত্ব দেয়-সে ব্যাপারেও তরুণ ভোটাররা সচেতন রয়েছে। এই অবস্থায় তরুণ ভোটারদের যে দল বা জোট যত বেশি টানতে পারবে, তারা তত বেশি লাভবান হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ১৯ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন এবং ২০০৮ সালে ৮ কোটি ১০ লক্ষ ৮৭ হাজার ৩ জন। অর্থাৎ গত ১০ বছরের ব্যাবধানে ভোটার বেড়েছে ২ কোটি ৩১ লক্ষ ৩ হাজার ৪৭৭ জন।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক কলাম লেখক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘নতুন ভোটারদের যে সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে, এতেই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই আড়াই কোটি ভোটার এ নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিধারনে প্রধান ভূমিকা রাখবে’।

ড. তারেক শামসুর রেহমান আরও বলেন, ‘আমরা যারা পুরানো ভোটার, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলন দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি তাঁরা সেই অধিকার ও বঞ্চনা বোধের বিচার-বুদ্ধি নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। এর পরের জেনারেশনের দীর্ঘ সময় অটোক্রেসির অন্ধকারে কেটেছে। তাদের কাছে অনেক সত্য আড়াল করা হয়েছে। অ্যান্টি-গ্রুপের মানসিকতা এখনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের কনসেপ্ট আগের মতোই আছে। বলা যায় ১৯৯৬ সালের পর মর্ডান জেনারেশন এসেছে। এরা একদম নতুন। ২০০৭ সালে এদের বয়স ১০-১২ বছর ছিল। এদের বেশির ভাগের মাইন্ডসেট অন্য রকম। এরা গণজাগরণ মঞ্চে অংশ গ্রহন করেছিল। এরা অন্ধভাবে ভোট দেবে না। দল বা জোটের রাজনীতির ভাঙাগড়াও এরা পর্যবেক্ষনে রাখছে’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে এই তরুণ প্রজন্মের সমর্থনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরা পরিবর্তন, সততা এবং আদর্শ চায়। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চায়। এদের ৯০ শতাংশই স্বাধীনতার পক্ষে, কিন্তু এরা দলান্ধ নয়। নিজেদের আওয়ামীলীগ বলে দাবী করে না। এরা ক্রিকেট ভালবাসে। মেয়েদের ফুটবল খেলার সাফল্যে উল্লসিত হয়। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে অভিনন্দন জানাতে ছুটে যায়। প্রচ- দেশ প্রেম রয়েছে এদের মধ্যে’।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা দেখে শুনেই নির্বাচনে ভোট দেবেন। ৩/৪ দিনের মধ্যে দল বা জোট গুলো যে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করবে, তাতে তরুণদের প্রয়োজনকে যে দল বা জোট বেশী গুরুত্ব দেবে-তারাই তরুণ ভোটারদের মন জয় করতে পারবে। যেহেতু এবারের নির্বাচন হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক, তাই এবারের নির্বাচনে কিছুটা হলেও ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে তরুণ ভোটাররা।

(আরএম/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৮)