ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ব্যাংক খাত বিষয়ে সিপিডির তথ্য বিভ্রান্তিমূলক

২০১৮ ডিসেম্বর ১৬ ১৭:০৪:১২
ব্যাংক খাত বিষয়ে সিপিডির তথ্য বিভ্রান্তিমূলক

চৌধুরী আবদুল হান্নান


সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) দেয়া একটি তথ্যে জানানো হয়েছে যে, ব্যাংকে গত দশ বছরে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি হয়েছে। খবরটি যতটা না উদ্বেগজনক তার চেয়ে বেশি বিভ্রান্তিমূলক। বিষয়টি অন্য একটি কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, গরম খবরটির প্রকাশকাল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগমূহুর্তে।

যে সকল গুণিজন সিপিডির সংলাপে অংশ নিয়েছেন তাঁরা সকলেই ব্যাংক বিষয়ে, অর্থনীতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বয়সে প্রবীন এবং প্রত্যেকেই বর্ণাঢ্য অতীতের অধিকারী। তারা জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলেন। তাঁদের মতামত সচেতন মানুষ মনোযোগ দিয়ে গ্রহণ করে থাকে।

গত দশ বছরে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বড় কয়েকটি ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের ক্ষতি এ ধরনের ঢালাও মতামত জনমনে ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে ভুলবার্তা দেবে, আস্থার সংকট তৈরীতে সহায়ক হবে।

ব্যাংকগুলো ভালো চলছে না, তা ঠিক। কিন্তু ব্যাংকের অবস্থা এতটা সংকটাপন্ন নয় যে, আমানতকারী তার জমা টাকা চাহিবা মাত্র ফেরত পাবেন না, গ্রাহকের কোনো চেকও ডিসঅনার (Dishonur) হয়েছে বলেও শুনিনি।

ঋণ মঞ্জুরীপত্রে উল্লিখিত পরিশোধের তারিখের একদিন পার হয়ে গেলেই ঋণ হিসাবটি অনিয়মিত ঋণ ধরা হয় এবং ধীরে ধীরে ঋণের শ্রেনীমান খারাপ হতে থাকে, কিস্তি পরিশোধ বা অর্জিত সুদ পরিশোধ করা হলে তা আবার নিয়মিত ঋণে পরিনত হয় যা ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রম। জালিয়াতি, কারসাজি বা প্রতারণার মাধ্যমে যারা ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ বের করেছে তারা সাধারণ লোক নয়, তারা রাঘব বোয়াল। এ অর্থকে ক্ষতি হিসেবে গণ্য করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ তার ব্যবসায়ী ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে। আর যদি টাকা বিদেশে পাচার করে থাকে তাতেও এ দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এ দেশে তাদের শিকড় রয়েছে।

টাকা যেভাবেই বের করে নিক, স্বাভাবিক উপায়ে বা জালিয়াতির মাধ্যমে, কিছু জামানত থাকেই। এমন তো নয় যে, অস্ত্র উঁচিয়ে ডাকাতি করে এ অর্থ বের করে নিয়েছে। তাদের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে এ অর্থ আদায় করা কঠিন কাজ, তা ঠিক কিন্তু সরকার চাইলে পারে না এমন কিছু নেই। জামানত বিক্রি করে সমুদয় বকেয়া সমন্বয় না হলে বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। তা হলো-বন্দকী সম্পত্তি ছাড়াও গ্রাহকের অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ সমন্বয়ের আইনী ক্ষমতা ব্যাংকের থাকে। প্রয়োজন কেবল রাজনৈতিক সদিচ্চার এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ।

স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের একটি গতানুগতিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে নতুন করে কোনো কমিশন গঠন করার প্রয়োজন নেই তা জোরালোভাবে বলা হচ্ছে না। গভর্নর যখন ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে হোটেলে গিয়ে বৈঠক করে মুদ্রানীতির সিদ্ধান্ত নেন, তথন বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা/সক্ষমতা যতটা হাস্যকর তা বুঝতে কারো বাকি থাকে না।

নির্বাচনকে সামনে রেখে কেবল আ. লীগের বিগত দশ বছরের আজগুবি খবর বা গুজব ছড়ানো রহস্যজনক এবং কেউ এর মধ্যে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার গন্ধ পেলে তাকে দোষ দেয়া যাবে না।
এখানে সিপিডির সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রবীন বুদ্ধিজীবীরা অন্য কোনো পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন। প্রশ্ন থেকেই যায়, সিপিডির হঠাৎ করে নির্বাচনের আগে কেনো এমন গরজ পড়লো একটি বিষ্ফোরক খবর গুজব আকারে প্রকাশ করার?

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।