ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

চকরিয়া পেকুয়ার মানুষ আগুন সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে নৌকা মুখী হয়েছে এবার

২০১৮ ডিসেম্বর ২৭ ১৫:০৮:৩৮
চকরিয়া পেকুয়ার মানুষ আগুন সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে নৌকা মুখী হয়েছে এবার

মানিক বৈরাগী


আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার ১, চকরিয়া পেকুয়াবাসী ধানের শীষের আগুন সন্ত্রাস, দলীয় নির্যাতন ও সালাহ উদ্দিনের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে চায়। তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মৌসুমী নেত্রী হাসানি আহমেদ থেকে। কেন এবার চকরিয়া পেকুয়াবাসী নৌকামূখী হল? তার একটি খন্ড চিত্র তুলতে ধরতে চাই।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে কিছু তথ্য: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, কক্সবাজার সংসদীয় ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। সাং-পেকুয়া সিকদার পাড়া নিবাসি আলহাজ্ব এডভোকেট সালাহ উদ্দীন আহমদ সম্পর্কে আমার তেমন আবেগ ও ভাবাবেগ কিছুই নাই। ওনি যখন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তখন কক্সবাজারে ওনার ভিন্নমতাবলম্বি যাকে পেয়েছেন তাকেই তিনি পেদানি দিয়েছেন।
বিএনপিতে ওনার প্রতাপে বিপুল জনপ্রিয় সংসদ সদস্য মরহুম খালেকুজ্জামান ছাহেব লাঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন, মামলার আসামি হয়েছিলেন খালেকুজ্জামান সহ তাঁর অনুসারিরা।

যারা বিএনপিকে কক্সবাজারে প্রতিষ্টা করেছিলেন তাদের অনেকেই বিএনপি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যেমন গোলাম কিবরিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, চকরিয়ার এমএ গনি এমএ, যাকে মেজর জিয়াউর রহমান সচিব এর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বিএনপির করার অনুরোধ করেছিলেন। তিনি সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বিএনপিতে যোগদেন। বিএনপির প্রতিষ্টাতা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুল করিম চৌধুরি কে অকার্যকর করে রেখেছিলেন ও তাঁর সাথে পেকুয়া জনসভায় ম্যাডাম খালেদা জিয়ার উপস্থিতে মঞ্চে অসৌজন্যমুলক আচরনের করেন। সাইফুজ্জান ওয়ারেচিকে বিএনপি রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে বহু মামলা দিয়ে ফেরারী করে রেখেছিলেন।

চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৎকালীন জামাতের সংসদ সদস্য এনামুল হক মঞ্জু (ছুট্টু) কে ম্যাড়াম খালেদাজিয়ার উপস্থিতে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক মরহুম ফরিদুল ইসলাম। শুধু মাত্র ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামানের ব্যাক্তিগত বন্ধু হওয়ার কারণে তার উপরেও নির্যাতন ও মামলার আসামী হন। চকরিয়া চিরিংগা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেক বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ পৌরসভা নির্বাচনে সতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ায় এ.পি.এস সালাহ উদ্দিন বাহিনী তার উপর হামলা করে এবং তার নামে বহু মামলার আসামী হন। চকরিয়া উপজেলার সাবেক ছাত্রদল নেতা রফিক ও জমির চকরিয়া পৌরসভা কমিশনার ফজলুল করিম সাইদির পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলা ও হামলা করা হয়।

কক্সবাজার সদর আসনের সাবেক এমপি মরহুম খালেকুজ্জামানের ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামানের নমিনেশন নিয়ে যে কর্মকান্ড করেছিলেন তা অতিব নিকটে। বিএনপির বিগত জেলা সম্মেলনে কেন মাইর খেলেন ও হামলার কারন ও বিএনপির লোকজন এখনো ভুলেনি। এ নিয়ে মুখরোচক আলোচনাও করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহাফুজুল্লাহ্ ফরিদের সাথেও তার বনিবনা না হওয়ায় কুতুবদিয়া মহেশখালীতে এটিএম নুরুল বসরকে দিয়ে তার বিপক্ষ গ্রুপ কার্যকর করে।

সালাউদ্দিন ছাহেব যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী থাকাকালিন চকরিয়া কক্সবাজারে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিদের উপর কি রকম নির্যাতন ও খুনের রাজনীতি চালিয়েছিলেন তা সকলের জানা। ভেউলামানিক চর ইউনিয়ন এর সফল চেয়ারম্যান নুরুল আলম কে পুলিশ দিয়ে হত্যা করেছিলেন? চকরিয়া উপজেলা আওয়ামিলীগের বর্তমান সভাপতি জাফর আলম, ফজলুল করিম সাইদি, জাহেদুল ইসলাম লিটু, সাহাব উদ্দিন টিংকু, রাজিবুল হক চৌধুরি, হায়দার আলী, সালাউদ্দিন সি আই পির ছোট ভাই কামরুদ্দিন আহমদ, মোজাফফর হোসেন পল্টু, জাবেদ হোসেন পুতুল, ইসমাইল-ইউসুফ (দুইভাই), মোমেন, নাজমুল সাইদ, অরনম মাহাবুব জহির, চকরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক হাবিবুর রহমান বেদার, হারবাং এর দারুচ্ছালাম রফিক, বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানসহ কেউ বাদ যায়নি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অত্র কলামের লেখক মানিক বৈরাগী, (সাইফুদ্দিন আহামেদ মানিক)র উপর কি নির্যাতন হয়েছে তা জেলাবাসী জানে। এমনকি তার পিতা-মাতারও যানাজা পড়তে দেওয়া হয়নি। নির্যাতন নিপিড়ন, হামলা-মামলায় বাদ যায়নি তার পরিবারের এস,এস,সি পরীক্ষার্থী ভাতিজা সহ নারী পুরুষ সকলেই। বাড়ীঘরে হামলা ও পড়–য়া মানিক বৈরাগীর প্রায় লক্ষাধিক টাকার বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বইয়ের সাথে পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফ পর্যন্ত বাদ দেয় নি।

এপিএস সালাউদ্দিনের উপজেলা পেকুয়ার মগনামা চেয়ারম্যান মো: ইউনুস, বর্তমান জেলা পরিষদ মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম, পেকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবু শামা, বর্তমানে আবু শামা সেই নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে প্রয়াত হয়েছেন। আবুল কাশেম, বারেক সহ আরো অনেক। বদর খালির কফিল উদ্দিন, বাহাদুর, ভুট্টো ও নির্যাতন হামলা মামলা থেকে রেহায় পায়নি। কক্সবাজার শহরে পাগলি মার্ডার মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আজিম কনক, শফিউল্লাহ আনসারি, ডালিম বড়ুয়া সহ আরো অনেক কে মামলা হামলার শিকার হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বিশেষ নির্যাতন চালিয়েছিল ডামিল বড়ুয়া, শফিউল্লাহ আনসারী, নাছির উদ্দিন সহ প্রমুখ। সেই সময় সালাউদ্দিনের ইন্দনে শিবির ক্যাডাররা সাবেক ছাত্র নেতা ডালিম বড়–য়ার ছোট ভাইকে হত্যা করেছিল এবং নারকীয় নির্যাতন চলিয়েছিল। উপর্যুক্ত ঘটনা ও নাম স্মৃতি থেকে লেখা।

বিগত ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে ও পরে ৩ মাস সালাউদ্দিনের গায়েবি ভিডিও বার্তা দিয়ে লাদেনীয় নির্দেশে আগুন সন্ত্রাসে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়। এখনো জীবিত অগ্নীদগ্ধ মানুষেরা পোড়া ক্ষত বহন করে মৃত্যুর দিনক্ষণ গুনছে। এসবের অভিশাপের বিচার একমাত্র আল্লাহ করা ছাড়া আরকোন গতি নাই। তার নির্দেশিত আগুন সন্ত্রাসে চকরিয়াও বাদ যায়নি। চকরিয়ার নিরীহ মানুষ চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে আগুনে পুড়ে। ওনি এপিএস থাকা কালিন কক্সবাজার থেকে কয় ট্রাক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল এবং এই অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে বিশ্বে কেমন পতিক্রিয়া হয়েছিল পুরান পত্রিকার ফাইল ঘাটলে যানা যাবে এবং জব্ধ কৃত অস্ত্রের ট্রাক গুলো কেন ছেড়ে দেয়া হয়েছিল? পরে অই ট্রাক কোথায় গেল কেউ জানে না।ওনি মন্ত্রী থাকা কালে আবারো দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা খেল, এটাও দেশবাসি জানে। ওনার অন্তরদান থেকে তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা স্বামি-পিতা কে ফিরে পাবে এতে আমি আনন্দিত। কারণ এই ব্যক্তির কারনে যাদের পিতা মাতা, স্ত্রী সন্তানেরা কেমন অনিশ্চয়তার দিন কাটিয়েছিল তা একমাত্র ভুক্তভোগিরাই যানে। সর্বশেষ কবি জসিম উদ্দীনের একটি কবিতা চরণে ইতি"আমার এঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।

ডুলাহাজার ইউনিয়নের সাবেক সফল চেয়ারম্যান, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন ও তার ভাইদের নামে বহু মামলা ও চিংডিঘের দখল করে ৫ বছর অবৈধভাবে ভোগ করে তার দখলদার বাহিনী। এতেও ক্ষান্ত হয়নি। ডুলাহাজারার সাবেক বি.এন.পি নেতা খাদেম নাছির উদ্দিন সালাহ উদ্দিনের কাছে কামালের হোসেনের জন্য সুপারিশ করায় খাদেম নাছিরও মামলা হামলা থেকে রেহায় পায়নি। ডুলাহাজারার পীরএকামেল আলহাজ্ব হযরত আবদুর রশিদ (র: আ:) কামাল হোসেনের পক্ষে সালাহ উদ্দিন ও মোবারকের কাছে সুপারিশ করার কারণে তিনিও লাঞ্চিত হন। চকরিয়া কলেজ ছাত্রলীগ এর সাবেক সভাপতি আমার চাচাত ভাই, আ.স.ম মোমেন মামলার কারনে দেশান্তরিত হওয়া, বিনামারার শওকত,কৈয়ারবিল খিল ছাদেক এর নাজমুল সহ নাম না জানা কত আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ কর্মি মামলা হামলার শিকার তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

বর্তমান ২০১৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালাহ উদ্দিন আহমদ এর সহধর্মীনি সাবেক এম.পি হাসিনা আহামেদ চকরিয়া পেকুয়ার সালাহ উদ্দিনের উত্তরাধিকার হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তার স্বামীর উপর্যুক্ত হিংসা বিদ্বেশ, সন্ত্রাস, আধিপাত্ব্যের পাপের বোঝা তিনি কিভাবে জনতার সামনে উপস্থিত হন। এই সালাহ উদ্দিন আহমেদ যখন বেগম খালেদা জিয়ার এ.পি.এস ছিলেন তখন পেকুয়াবাসীর সাথে কৌশলগত ভাবে যে উন্নয়ন প্রতারণ করেছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেই সব প্রতারণার খদিস মানুষ জেনে গেছে। যেমন বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা যৌথ অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকারের সাথে এশিয়ান হাইওয়ে নির্মাণের জন্য। তিনি যেহেতু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সরকারী সব পরিকল্পনা তার হাত দিয়েই যেত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

সালাহ উদ্দিন আহামেদ এই সব জেনেই চট্টগ্রাম-বাঁশখালী-পেকুয়া-কক্সবাজার রোড ম্যাপ ধরে পেকুয়াস্থ রোড ম্যাপের পার্শ্বস্থ জমি সরকার অধিগ্রহণের পূর্বেই তিনি কমদামে নিজের নামে কিনে নেন। যারা বিক্রি করতে চাইনি তাদের উপর নেমে আসে নরক যন্ত্রণা। বিগত জোট সরকারের সময়ে তিনি ঐ জমি সমূহ সরকার অধিগ্রহণের কাছে নিজেই বিক্রি করে কোটি কোটি হাতিয়ে নেন। এর ফলে এই সুবেশধারী সালাহ উদ্দিন নিজ গ্রামের মানুষের সাথেও অর্থ লোভের কারণে প্রতারণা করেন। এদিকে মগনামার লবনমাঠগুলো একটি সম্প্রসারণশীল কোম্পানীর হাতে তুলে দেন খুব অল্প দামে। ওখানেও তিনি কমিশন বানিজ্য করেন। ফলে মগনামাবাসী লবনমাঠ হারা হল।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন সামরিক সরকারের সময় তিনি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে পরবর্তী নির্বাচনে চকরিয়া পেকুয়াবাসী হাসিনা আহমেদকে নির্বাচিত করেন। কিন্তু হাসিনা আহমেদ নির্বাচিত হয়ে ঢাকা চলে যান। সেই ৫ বছর আর চকরিয়া পেকুয়াবাসী হাসিনা আহমদকে চোখে দেখে নি। তিনি আবার এসেছেন এই নির্বাচনি মৌসুমে।

জনগণের সাথে রাজনৈতিক নির্বাচনি প্রতারণা করার জন্য। কিন্তু একজন নারী তিনি মা, তিনি বোন, মমতাময়ী আচরণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বামীর সেই সন্ত্রাসীদের নিয়ে একই আচরণ করছেন বরইতলীতে প্রতিদন্ধী প্রার্থীর প্রচার ট্যাক্সিতে পেট্টোল হামলা করে। কারণ এই আচরণ তিনি তার স্বামী বোমা সালাহ উদ্দিন থেকেই পেয়েছেন। আগুন সন্ত্রাসকে চকরিয়া পেকুয়ার জনতাও ভোটার আর প্রতারিত হচ্ছে না। চকরিয়া পেকুয়াবাসী আগুন সন্ত্রাস দলীয় সন্ত্রাস দখলদারিত্বথেকে মুক্তিপেতে স্বাধীনতার, শান্তির নৌকা প্রতি আস্থা রেখেছে।

লেখক : কবি