ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

নতুন সরকারের কাছে একজন সাধারণ নাগরিকের প্রত্যাশা

২০১৯ জানুয়ারি ০২ ১৭:৫৪:১২
নতুন সরকারের কাছে একজন সাধারণ নাগরিকের প্রত্যাশা

চৌধুরী আবদুল হান্নান


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আমাদের জানিয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আর পথ হারাবে না, স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে-শত্রুরাষ্ট্র পাকিস্তানী ভাব ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাল এবার শেষ হলো।

বিগত ১০ বছরে হাসিনা সরকারের ব্যাপক সফলতা রয়েছে, ব্যর্থতাও কম নেই। শতভাগ সাফল্য কখনো পাওয়া যায় না, তা কেউ আশাও করবে না। কিছু কিছু সফলতার গল্প-গাথা শেখ হাসিনাকে অমর করে রাখবে। চলমান বিদ্বেষপূর্ণ হিংসার রাজনীতির ময়দানে সরকারের ঘোর বিরোধীরাও তা স্বীকার করবেন।
একটানা তৃতীয় মেয়াদ শুরুর প্রাক্কালে অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকবেন, আলোচনা-সমালোচনা করবেন। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার কিছু কথা আছে :

তোষামোদকারী ও চাটুকারদের সঠিকভাবে চিনে নেওয়া, স্বার্থ উদ্ধারে তারা বেপরোয়া হবে। প্রবাদে আছে- “সদ্য ধর্মান্তরিতরা সাবেক ধার্মিকদের চেয়ে অধিক তেজী হয়।” নানাভাবে দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য এরা সুযোগ সন্ধানী হবে, অনেক ক্ষেত্রে আসল কর্মীরা কোনঠাসা হয়ে যায়। তোষামোদে খুশি হয় না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।

নেতা-নেত্রীদের মধ্যে যে বিরল গুনাবলী আছে তার বর্ণনা করতেই যদি সভার সময় শেষ, আসল কথা বলবে কথন? তবে চাটুকারিতার জবাব একবার দিয়েছিলেন সোভিয়েত দেশের ত্রানকর্তা মহামতি লেনিন। চাটুকারদের তৈলমর্দন শেষে লেনিন বলেছিলেন, “আমি নিজের রসে সিদ্ধ হতে প্রস্তুত নই।”

তোষামদকারীরা তাদের অন্যায় আবদার পূরণে মরিয়া হয়ে উঠবে, আর এর দায় পড়বে সরকারের ওপর। যখন কোনো দলীয় নেতা সরকার প্রধান বা রাষ্ট্র প্রধানে রুপান্তরিত হন, তখন তিনি কেবল দলের নন- সারা দেশের নেতা হয়ে যান। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তিনি সকলের কথা শুনবেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবেন নিজে।

লেখাপড়া না জানা সম্রাট আকবর মোগল সাম্রাজ্য প্রায় ৫০ বছর দক্ষতার সাথে পরিচালনার মূলমন্ত্র ছিল তিনি জ্ঞানী, মেধাবীদের পরামর্শ শ্রবন করতেন কিন্তু জ্ঞানদীপ্ত সিন্ধান্তটি নিজেই গ্রহণ করতেন।

শেখ হাসিনার গৌবোজ্জ্বল অবদানের বিষয়ে হিংসা-দ্বেষ কবলিত রাজনীতির কারণে দেশের মধ্যে বিতর্ক থাকলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর নেতৃত্ব প্রশংসিত। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমি মুগ্ধ, শেখ হাসিনার কাছে বিশ্ববাসীর অনেক কিছু শেখার আছে।” বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান জিম ইয়ং কিম বলেছেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে।”

আগামী ৫ বছর অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ হবে দীর্ঘদিন বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষোভ নিরসন করা এবং একই সাথে একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাওয়া। দেশ পরিচালনায় রাষ্ট্রের অর্থভান্ডার সুরক্ষা দেওয়া অত্যাবশ্যক। “ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে”- এমন কথা এখন টক অব দি কান্ট্রি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে- ব্যাংক পরিচালকরাই চার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি (সমকাল ০৫/০৩/২০১৮)।

বেড়ায় যদি ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলে তাহলে তা রক্ষা করা যায় না। অর্থ ভান্ডার রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের তারাই যদি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার তালে থাকে তাহলে যা হবার তাই হয়।

দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংক খাত দ্রুত নিয়ন্তণহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনই লাগাম না টানলে পরিনাম হবে ভয়াবহ যা দেশের সকল অর্জন খেয়ে ফেলবে। অপরদিকে এ বিষয়টি দেখভাল করার দায়ভার সরকার যার ওপর ন্যাস্ত করেছে, সেই মাননীয় অর্থমন্ত্রী যখন নিজেই বলেন, তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, তখন আর কি বাকি থাকে?

তাছাড়া পচন যখন মাথায়, সরকার প্রধান এদিকে দৃষ্টি না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষরণ থামার কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদ শুরুর প্রাক্কালে তাঁর কর্ম পরিকল্পনার যে অগ্রাধীকার তৈয়ারী করবেন, তার মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাও অন্তর্ভূক্ত থাকবে- এমন প্রত্যাশা করি।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।