ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

আ. লীগ : থাকুক ক্ষমতায়, সুস্থ পুষ্ট রাজনীতির চর্চাও চাই

২০১৯ জানুয়ারি ১২ ১৫:০৯:১২
আ. লীগ : থাকুক ক্ষমতায়, সুস্থ পুষ্ট রাজনীতির চর্চাও চাই

মানিক বৈরাগী


আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও আওয়ামীলীগ এর সাংগঠনিক রাজনীতি চর্চার দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড দেখে আজকের এতসব প্রশ্ন। বাংলাদেশের প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি টানা তিনবার ক্ষমতায়। কিন্তু সে অনুযায়ী আন্তদলীয় রাজনীতি চর্চার দিকে তাকালে খুব হতাশ হতে হয়। বাংলার লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন এই আওয়ামীলীগকে ভালোবেসে, পিতা মুজিবের আহবানে কে বিশ্বাস করে। পিতা মুজিবের শাহাদাত বরণের পর কত হাজার আওয়ামীলীগ এর নেতা-কর্মী জীবন মরণ লড়াই করেছে সামরিক, স্বৈরাচারী সাম্প্রদায়িক সরকার ও রাজনৈতিক দলের কাছে। শুধু মাত্র একটি সুন্দর বাংলাদেশ ও পরিশীলিত রাজনীতি চর্চার আশায়।এই আশাটি করেছিলেন মুজিব তনয়া শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস ও ভালোবাসায়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি শহীদি কাফেলা। এই শহীদি কাফেলার দিকে যদি তাকাই কিছু কিছু কারনে হু হু করে কেঁদে উঠে মন। তাই আজ এই রচনা।

আওয়ামীলীগ এর পদ পদবি, সুবিধা, ভোগ উপভোগ, মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর,মেয়র,উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি, নারী এমপি, জেলা পরিষদ মেম্বার, চেয়ারম্যান। ঘুরে ফিরে সব খানে কিছু গোষ্ঠিবদ্ধ লোকেরা হতে চায় কেন?

বৃহত ও প্রাচীন এই রাজনৈতিক দল টি কি ক্রমাগত আদর্শিক ভাবে ধ্বস নামা শুরু করেছে নাকি?
আওয়ামীলীগ এ কি নেতৃত্ব শুণ্যতা দেখা দিল নাকি?

তাহাদের এত লোভ কেন?সবকিছুই শুধু তাহারা পেতে চায় কেন? অন্যদের সুযোগ দিতে চায় না কেন?
প্রশ্ন জাগে বর্ষীয় এই আওয়ামীলীগ এ আন্তদলিয় গণতন্ত্র চর্চা কি রহিত হয়েছে?

পরমত সহিষ্ণু রহিত হলো?কেউ কাউকে মানতে চায়না কেন?যার যেটি যোগ্যতা নাই কিছু টাকা কয়েকজন পালিত চামচাই কি রাজনীতি চর্চা?

ক'দিন পর জাতিয় সংসদের মহিলা এমপি নির্বাচনের তারিখ ও প্রজ্ঞাপন জারি হবে। এতে দেখা যাচ্ছে মনোনয়ন বঞ্চিত এমপি প্রার্থী র বউ আবার মহিলা এমপি প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। আবার স্বামী উপজেলা চেয়ারম্যান এর জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। যিনি জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান আছেন আবার তাঁর বউও নারী এমপি হতে চাচ্ছেন। যিনি মেয়র নির্বাচনে মনোয়ন পান্নি তিনি আবার জেলা পরিষদ এর মেম্বার হয়েছেন।

এখন আবার তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এর জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। যিনি জেলা বা উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদ আবার ইউপি চেয়ারম্যান, তিনিও আবার উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চাচ্ছেন।আবার যিনি বর্তমানে মেয়র আছেন তিনিও উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটি কি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এর রাজনৈতিক শুণ্যতা নয়?

এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের হিড়িক পড়েছিল। যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হতে পারেন নি তিনিও এমপি মনোয়ন পত্র কিনেছেন, জমা দিয়েছেন। যিনি ইউপি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পায়নি তিনিও উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান হতে চায়।এর মধ্য বেশি দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ কোন্দলবাজ নেতা, উপদলীয় উপদল সৃষ্টি কারি নেতা, বিভিন্ন দল ত্যাগ করে আসা ত্যাগী নেতা।

প্রশ্ন হচ্ছে যুগে যুগে আওয়ামীলীগ এর দুর্দিনে যারা আওয়ামীলীগ কে আঁকড়ে ধরে জেল জুলুম খেটে সবহারানোরা কোথায় যাবে? তাঁরা কি অপরাধ করেছিল ২১ আবার ৭ বছর আওয়ামীলীগ কে সচল রেখে সর্বস্বহারা হারা আওয়ামীলীগ এর দুর্দিনেরা নেতারা আজ কি খুব অপাংক্তেয়? এদের শ্রমের কি কোন সম্মান নাই আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এর কাছে। তারা কি শুধু মৃত্যুর পর একটি শোক বিবৃতির মালিক। এখন তো শোক সভা করারও সময় হয়না, পায়না নেতারা।কারন তারা এত ব্যস্থ সরকার ও উন্নয়নযজ্ঞে এত বেশী সময় দিতে হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেলো জাতিয় সংসদ নির্বাচনে অধিক সংখ্যক প্রার্থী দেখে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন" এত প্রার্থী কেন? আওয়ামীলীগ তো নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেনি।" তাহলে এই শতবর্ষী রাজনৈতিক দল টি এখনো অপুষ্টই থেকে গেলো? এসবের উত্তর আমি জানিনা।

আবেদন থাকবে আওয়ামীলীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী র প্রতি শুধু ক্ষমতা রাষ্ট্র সাজানোর পাশাপাশি আওয়ামীলীগ কেও সুন্দর সুশৃঙ্খল ভাবে সাজাতে হবে।রাজনৈতিক, সমাজবৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিদ্যার চর্চাও বাড়াতে হবে। সাথে বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদ, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চর্চাও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দলীয় কার্যালয় ভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মচর্চা, কার্যালয় নিয়মিত চালু রাখা, নেতারা দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সময়দেয়া টাও জরুরি।

এখন দেখি মন্ত্রী এমপি, চেয়ারম্যান, মেয়র, নেতার ড্রইং রুমেই হাজিরা ও গুটি চালাচালি। নেতাদের বউ ও আবার সেখানে সিদ্ধান্ত দাতা। প্রশ্ন করতে পারেন তাহাদের বউ এর প্রসঙ্গ এলো কেন? বাঙ্গালি বউ এর যেমন সুখ্যাতি আছে, দুরহ খ্যাতিও কম নয়। দোষখ্যাতির পরিমান পাল্লায় বেশি। আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে বুঝবেন। আর সবাইতো বঙ্গমাতা ফজিলাত্তুননেসা মুজিব, জোহরা তাজউদ্দীন,আইভি রহমান নয়।

এই বাংলাদেশে কত বাঘা বাঘা নেতা শুধু বউ এর লোভি খাসলত ও চরিত্রের কারনে আজ রাজনৈতিক ভাবে দেওলিয়া হয়েগেছে।নাম উল্লেখ করতে চাই না। তবে পত্রপত্রিকায় লেখা হয়। নির্বাচনি হলপ নামা ঘাটলে দেখা যায়। দুদুকের তদন্ত রিপোর্ট ঘাটলে দেখা যায়। তো প্রসঙ্গ অন্যত্র চলে যাচ্ছে, কেচু খোজতে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসছে।

বলছিলাম কি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভানেত্রীই পারেন দল কে সচল রাখার। পৃথিবীর ইতিহাসে কত প্রাচীন রাজনৈতিক দল, কত প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ক্ষমতা হারানোর পর ইতিহাসে ফসিল হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। শুধু আদর্শবিচ্যুত হওয়া, আত্নদলিয় রাজনৈতিক চর্চার অভাবে, আন্তদলিয় গণতন্ত্র চর্চার অভাবে আজ ইতিহাস উপহাসের পাত্র।

আমাদের বাংলাদেশেইতো দুটি ক্ষমতাকালিন ভাবে গঠিত ভাবে বিএনপি ও জাতিয় পার্টি। হ্যা দল দুটি রাজনীতি বিজ্ঞান অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে অনেক ঘাটতি আছে, বিতর্ক আছে।তবুও তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করছে, ক্ষমতায় ছিলেন।আজ তাদের কি করুণ দশা। পঁচাত্তরের পর আওয়ামীলীগ এর একি অবস্থা তো কম নয়। এই আওয়ামীলীগবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সময় থেকে কত ভাঙ্গা ভেঙ্গেছে, কত বাঘা বাঘা নেতা বেরিয়ে এসে নিজেরাই রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। হ্যা তারা নিজেরা বিকল্প হিসাবে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু চির প্রতিপক্ষের শক্তির কি সহায়ক শক্তি হিসাবে শক্তি যোগান দেন নি? দিয়েছে, দিচ্ছে।

একমাত্র আব্দুর রাজ্জাকের বাকশাল এর শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছিল। ৯১ এর নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগ এর সাথে একিভুত হয়ে। যদি একিভুত না হত তাদের অবস্থা ও বর্তমান গণ ফোরাম, জনতালীগ, কয়েক টুকরো জাসদের অবস্থা হতো। তাই বলছিলাম আওয়ামীলীগ কে ক্ষমতায়ও থাকতে হবে,দলিয় রাজনৈতিক চর্চাও বাড়াতে হবে। দলিয় ফ্যাসাদ ও কমাতে হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কে সুস্থ, সুষ্ঠ, পুষ্ট রাজনীতি চর্চায় থাকতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। জবাবদিহিতা থাকতে হবে, আন্তদলীয় গণতন্ত্র চর্চা ও রাখতে হবে। তাহলে আওয়ামীলীগ বাংলার মানুষের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো মানুষের আস্থার মণিকোঠায় স্থান পাবে। দলীয় নেতাদের এই জন্য আদর্শিক ভাবে গড়ে তুলতে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার বিকল্প নেই।

লেখক : কবি।