ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » কৃষি » বিস্তারিত

চার বছরে কমেছে ৭৯ ভাগ

নড়াইলে কমে যাচ্ছে গমের আবাদ 

২০১৯ জানুয়ারি ২৩ ১৬:১৫:১২
নড়াইলে কমে যাচ্ছে গমের আবাদ 

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইল একটি কৃষি প্রধান জেলা। এই জেলার চাষিরা আদিকাল থেকেই বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি গমের আবাদ করতেন। এক সময় জেলায় প্রচুর পরিমান গমের উৎপাদন হত। বিভিন্ন কারনে দিন দিন এই গমের আবাদ আশংকা জনক হারে কমে যাচ্ছে। গত চার বছরেই জেলায় গমের আবাদ কমেছে শতকরা ৭৯ ভাগ। উৎপাদন খরচের তুলনায় গমের দাম অনেক কম থাকা, তুলনা মুলক ভাবে গম থেকে ধানের দাম বেশি থাকা, গমে ব্লাষ্ট রোগসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ বালায় আক্রমন হওয়ায় গমের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে কৃষকদের দাবী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, (২০১৫-১৬ মওসুমে) আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ৩শ ২ হেক্টর জমিতে। (২০১৬-১৭ মওসুমে) জেলায় ৪১২৪ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছিল। ১৭-১৮ অর্থ বছরে জেলায় ৪১২৪ হেক্টোর জমিতে লক্ষমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে মাত্র ১৩৭০ হেক্টোর জমিতে। আর চলতি মৌশুমেও নড়াইলে গমের লক্ষমাত্রা পুরুন করতে ব্যার্থ হয়েছে কৃষি বিভাগ। ১৮-১৯ অর্থ বছরে (চলতি বছর) জেলার তিনটি উপজেলায় গমের আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ১’শ ১৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩’শ ৩০ হেক্টর জমিতে। এ বছরে লক্ষমাত্রার অর্জন করতে ব্যার্থ হয়েছে ৬৭ শতাংশ। এই দিয়ে পর পর ২ বছর গমের আবাদের লক্ষমাত্রা পূরন করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

সদরের তালতলা এলাকার কৃষক রকিম শেখ জানান, এক মন গম উৎপাদন করতে ৬শ থেকে ৭শ টাকা খরচ হয়ে যায়। মৌসুমে বাজারে প্রতি মন গম বিক্রি হয় মাত্র ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা। সরকারী ভাবেও যথা সময়ে গম কেনা হয়না। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দিন দিন গমের আবাদ থেকে সরে আসছে।
কৃষক নাসির উদ্দিন জানান, বাজারে গমের থেকে ধানের চাহিদা বেশি, গমের থেকে ধানের দামও বেশি। সেই জন্য তার মত অনেক কৃষক দিন দিন গমের আবাদ ছেড়ে দিয়ে অন্য ফসলের আবাদ করছে।

কলাতাছি গ্রামের কৃষক খশরুর শেখ জানান, বর্তমানে বাজারে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা, এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫/২৬ টাকা। বাজারে আটার দাম কম থাকায় গমের আবাদ দিন দিন ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

কালিয়া উপজেলার বাবরা গ্রামের একাধিক কৃষক জানান, তাদের এলাকায় এক সময় প্রতি ঘরে ঘরে গমের আবাদ করতেন কৃষকেরা। বর্তমানে এলাকাতে তেমন গমের আবাদ হয়না। দিন দিন গমের ফলন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া গমের জমিতে বিভিন্ন প্রকার পোকার উপদ্রব দেখা দেয়। এক প্রকার রোগ হয় যেটায় আক্রমন করলে জমির ফসল একদম নষ্ট হয়ে যায়, কোন প্রকার কিটনাশক দিয়েও সেই রোগ দমন করা যায়না।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার তালবাড়ি কুমড়ি গ্রামের গম চাষী আলতাব জানান, তিনি প্রতি বছর তার জমিতে গম চাষ করেন। গত বছর ১ একর ১২ শতক জমিতে গমের আবাদ করেছিলেন। গমের ফলনও ভাল হয়েছিল, কিন্তু বাজারে গমের দাম কম থাকায় তার উৎপাদন খরচও উঠেনি। সেই জন্য তিনি এ বছর আবাদ কমিয়ে সামান্য কিছু জমিতে গমের আবাদ করেছেন।

লোহাগড়া উপজেলার মরিচপাশা গ্রামের কৃষক আরিফুজ্জামান জানান, আমি দীর্ঘ ২ যুগেরও বেশি সময় যাবৎ কৃষি কাজ করি। প্রতি বছরই কিছু জমিতে গমের আবাদ করি। গত বছর গমের খুব ভাল ফলন হয়েছিল। কিন্তু দাম অনেক কম পেয়েছিল তিনি। এ বছর গমের তুলনায় ধানের দাম কিছুটা বেশি পেয়েছেন। তাই গমের আবাদ ছেড়ে দিয়ে গমের জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নড়াইলের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে গমের বীজ বপনের সঠিক সময়। চলতি মৌসুমে নভেম্বর মাসে জেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারনে সময় মত চাষিরা তাদের জমিতে এবছর গমের বীজ বপন করতে পারেনি। সেই জন্যই চলতি বছরে গমের আবাদ অনেক কম হয়েছে। এছাড়া গমে ব্লাষ্ট রোগের কারনেও গমের আবাদ কমেছে। কৃষকেরা যাতে গম ক্ষেতে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে সেই জন্য কৃষকদের মাঝে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে গম আবাদের প্রতি উৎসাহ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

কৃষকদের কথা চিন্তা করে উৎপাদনের সাথে তাল রেখে গমের নায্য মূল্য নির্ধারন করবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০১৯)