ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » শিক্ষা » বিস্তারিত

জাবিতে সেশনজটে ঝুলছে শিক্ষার্থীদের ভাগ্য

২০১৯ জানুয়ারি ২৯ ১৩:৩৬:১৯
জাবিতে সেশনজটে ঝুলছে শিক্ষার্থীদের ভাগ্য

স্টাফ রিপোর্টার : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট দেখা দিয়েছে অভিশাপ হিসেবে। অনেক শিক্ষার্থীর ভাগ্য ঝুলে আছে এই সেশনজটে। ছয় বছরের শিক্ষাজীবন শেষ করতে লাগছে আট বছরের বেশি সময়। এর জন্য ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। ফলে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর সেই পরীক্ষা শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। এদিকে নির্ধারিত সময়ে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় চূড়ান্ত পরীক্ষার মাঝে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

একই অবস্থা ৪৪তম ব্যাচেও। ওই ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০১৭ সালে হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু ল্যাবরুম সংকটের কারণে দেড় মাসেও তাদের ল্যাব পরীক্ষা শুরু করা যায়নি।

এছাড়া ৪১তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর শেষ হয়। ৪২তম আবর্তনের শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। ৪৬তম আবর্তনের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০১৮ সালের ২৭ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর পরীক্ষা শেষ হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। এদিকে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪৭তম আবর্তনের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানা গেছে।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক পীযূষ সাহা বলেন, ‘ক্লাস ও ল্যাব রুম সংকট এবং ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই ছয় বছরের শিক্ষাজীবন আট বছরেও শেষ হচ্ছে না।’

ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে বিভাগের দুইজন অধ্যাপক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, অধিকাংশ শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার কারণে বিভাগে ঠিকমতো সময় দেন না। এছাড়া দুই-তিনজন শিক্ষকের কারণে সব সময় ফলাফল প্রকাশ করতে বিলম্ব হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে বিভাগে সাতটি ব্যাচের জন্য মাত্র চারটি ক্লাসরুম আছে। ক্লাসরুম সংকট সেশনজটের অন্যতম একটি কারণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ৪১তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু ৫০১নং কোর্সে শিক্ষার্থীদের ‘অভিনব নম্বর’ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলায় ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। সেই ফলাফল এই বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রকাশ করে। ফলে তিন মাস আগে ক্লাস শেষ করেও ৪২তম ব্যাচের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারেনি। অন্যদিকে ৪২তম ব্যাচের পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারছে না ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

এ দুটি বিভাগসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিভাগে সেশনজটে ঝুলে আছে শিক্ষার্থীদের জীবন। জানা যায়, আইন অনুষদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং বিভাগ, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগে এক বছর করে, পরিসংখ্যান বিভাগ, গণিত বিভাগ, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ছয় মাস করে, ব্যবসায় অনুষদেও চারটি বিভাগেই রয়েছে ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজট।

এছাড়া, কলা ও মানবিকী অনুষদে বাংলা বিভাগ ছাড়া সব বিভাগেই ছয় মাস এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ছাড়া বাকি পাঁচটি বিভাগেও ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সেশনজট রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, এসব বিষয় গুরুত্বসহ বিবেচনা করে দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিনদের সঙ্গে কথা বলবেন।

(ওএস/অ/জানুয়ারি ২৯,২০১৯)