ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

বাসন্তী হাওয়ায় প্রাণে লাগে সুখের দোলা

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৭:১৯:২৯
বাসন্তী হাওয়ায় প্রাণে লাগে সুখের দোলা

হাকিকুল ইসলাম খোকন : মনের উঠোনে আজ বসন্তের উতল হাওয়া। প্রাণে প্রাণে লাগবে সুখের দোলা, মুখ রেখে দখিনা বাতাসে চুপি চুপি বলার দিন ‘সখী, ভালোবাসি তারে।’ আজ বৃহস্পতিবার ভালোবাসা দিবস। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে। রোমান বিশ্বাসে-বসন্তের আবিরে স্নানশুচি হয়ে বুহসপতিবার কিউপিড ‘প্রেমশর’ বাগিয়ে ঘুরে ফিরবে হূদয় থেকে হূদয়ে। অনুরাগ তাড়িত পরান এফোঁড়-ওফোঁড় হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়।

বৃহস্পতিবার হৃদয় গহনে তারাপুঞ্জের মত ফুটবে চন্ডীদাসের সেই অনাদিকালের সুর:“দুঁহু তরে দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/ অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া...। আকুতি ঝরবে— ‘তুমি কি দেবে না সাড়া প্রিয়া বলে যদি ডাকি, হেসে কি কবে না কথা, হাত যদি হাতে রাখি।’

পৃথিবীর সব সাহিত্য ডুবে অছে ভালোবাসা নিয়ে কাব্য-মহাকাব্য, গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাসের অতলান্তে। অতলান্তকে তল পাওয়া গেছে, তারপরও ’ভালোবাসা কী?’ এই প্রশ্নে খেই হারিয়েছেন।

কবিগুরুর ভাষায়, ’তোমরা যে বলো দিবস রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’সখী ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়। সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুঃখের শ্বাস? জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভাষায় : ‘আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়, মনে পড়ে মোরে প্রিয়, চাঁদ হয়ে রব আকাশের গায়, বাতায়ন খুলে দিও।’

আধুনিক কবির কণ্ঠে প্রেয়সীকে বলা : ‘পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী।’ অথবা ‘সুখী হবার জন্য তোমার চারপাশে অসংখ্য মানুষের দরকার নেই, শুধু সেই সত্যিকারের কয়েকজনই যথেষ্ট যারা, তুমি যা তার জন্যই তোমাকে ভালোবাসবে।’

একালের কবির অনুভব ‘তোমার সাথে প্রতিটি কথাই কবিতা, প্রতিটি মুহূর্তেই উত্সব—তুমি যখন চলে যাও, সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সব আলো নিবে যায়...।’

ভালোবাসার কথা প্রকাশের জন্য সুদৃশ্য মলাটে মোড়া বইয়ের আটপৌরে দিন ফুরিয়েছে। আঙুল কেটে রক্তে রক্ত মিলিয়ে দেয়া, চিঠির ভাঁজে গোলাপের পাপড়ি গুঁজে দেয়া, দি¯াÍয় দিস্তায় কাগজ নষ্ট করে কাব্য চর্চা এখন ম্রিয়মাণ।

বাঙালির বসন্ত বরণের দিন। একদিকে ঋতুরাজ বসšেতর আগমন অপরদিকে আজ বৃহস্পতিবার এসেছে ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের গবেষকদের অনেকে বলে থাকেন, ফেব্রুয়ারির এই সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে বাসা বাঁধে। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠে। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুল সৌন্দর্যবিভায় লাজুক আর ঢলঢলে হতে থাকে। অনেক দিবসের ভিড়ে ভালোবাসা দিবস আলাদা মাত্রায় উত্কীর্ণ। এর সাথে প্রেম এবং অনুরাগের অমনিবাস। এই দিবসটির সূচনা সেই প্রাচীন দুটি রোমান প্রথা থেকেই। এক পাদ্রি ও চিকিত্সক ফাদার সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে দিনটির নামকরণ হয়েছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’।

খ্রিস্টীয় এই দিবসের রেশ ধরে আমাদের দেশে ও বিদেশে এদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি কেবল প্রেমবিনিময় নয়, তরুণ-তরুণীদের মাঝে গোপনে বিয়ের বাতিক দেখা যায়। রাজধানীর উদ্যানমালা, বইমেলা, ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ, নিভৃতে কাটান প্রণয়কাতর তরুণ-তরুণীরা। ফুল দোকানে থরে থরে সাজানো মল্লিকা, জুঁই, গাঁদা উঠে আসবে ললনাদের খোঁপায়।

লেখক : সভাপতি, আমরিকান প্রেসক্লাব অব বাংলাদেশ অরিজিন, এডিটর বাপসনিঊজ ।