ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ব্যাংক খাতের সুরক্ষা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন ভরসা

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৮:৪২:৩৮
ব্যাংক খাতের সুরক্ষা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন ভরসা

চৌধুরী আবদুল হান্নান


রাষ্ট্রের অর্থভান্ডার ব্যাংক ব্যবস্থার সংকটের ভয়াবহতা নিয়ে এখন কিছু বলবো না, প্রতিকার বিষয়ে কিছু বলতে চাই। তার আগে বরিশালের এক চমকপ্রদ ঘটনা বলি।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে শিশুদেও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় একটি শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি একজন ইউএনও একটি নিমন্ত্রণ পত্রে ব্যবহার করেছিলেন। জাতির পিতার ছবি বিকৃত করে ব্যবহারের অভিযোগ এনে আগৈলঝরা উপজেলার ইউএনও তারিখ সালমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানির মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতা বরিশালের জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়েরকৃত এ মামলাটি সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। বিস্ময়কর যে, তাঁর জামিন শুনানিকালে অন্তত ৫০ আইনজীবী জামিনের বিরোধিতায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বিয়য়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং মত প্রকাশ করেন যে, ছোট্ট শিশুর কাঁচা হাতের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবির আলাদা মূল্যায়ন করাই তো স্বাভাবিক।
বস্তুত প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের কারণে পুরো বিষয়টি ন্যায় ও আইনের পথে তাৎক্ষনিক প্রত্যাবর্তিত হয়েছিল। তারপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র কওে বরিশালে ছোট খাট ভূমিকম্প হয়ে গেল। বদলি হতে হলো বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, বরগুনার জেলা প্রশাসক এবং বিচারক মুখ্য মহানগর হাকিমসহ অনেকে।

এ জাতীয় ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে, এর কয়টিই বা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আসে। দেখা যাচ্ছে এমনি ভাবে আইন-কানুন, বিধি-বিধান তার নিজস্ব গতিপথ হারিয়েছে। অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তিদের পদায়নের ফলে রাষ্ট্রের অনেক অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রতি ক্ষেত্রে তোষামোদের দ্বারা অযোগ্যতাকে ঢাকার প্রচেষ্টা নগ্নভাবে দৃশ্যমান।

বরিশালের এ আলোচিত ঘটনা থেকে আমাদেও দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, প্রধানমন্ত্রী চাইলে যত বড় কঠিন কাজই হোক, তা সুসম্পন্ন হতে বিলম্ব হবে না। কিন্তু একার পক্ষে কী সব কাজ করা সম্ভব? তবে বড় সমস্যা অন্যত্র, তাঁর পাশে যাদের নিত্য বিচরণ করার সুযোগ রয়েছে, তারা প্রধানমন্ত্রীকে সু-পরামর্শ দেওয়ার চেয়ে তোষামোদ আর চাটুকারিতায় বেশি ব্যস্ত থাকেন। মাঝে মাঝে ব্যক্তিস্বার্থে তাঁকে বিভ্রান্ত করারও অপচেষ্টা করা হয়। ভরসা যখন কেবন তিনি, নিবেদন করি তাঁরই কাছে...।

ব্যাংক খাতের অব্যবস্থা, দুর্নীতি রোধে এ যাবৎ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা হয়েছে তা কেবল কথার ফুলঝুরি। খেলাপি ঋণ, অবলোপনকৃত ঋণ, বেনামী ঋণ আর কারসাজির মাধ্যমে বের করে নেওয়া ঋণের ভারে ব্যাংকগুলো আজ মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম। বোঝাপড়ার মাধ্যমে এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালককে যখন- “আমার ব্যাংক থেকে তোমাকে ঋণ পাইয়ে দেই, তোমার ব্যাংক থেকে আমাকে দাও, কারোই ফেরত দিতে হবে না” এমন গোপন আঁতাতের ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে টাকা বের হয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকলে ব্যাংকের দুর্দশা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের প্রায় সকল হাতিয়ার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ব্যাংক খাতের স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে মানুষ মনে করে আর্থিক খাতের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং তারা ঠুটো জগন্নাথ। আরও দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই।

স্বাধীনচেতা এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ একজন গভর্নর নিয়োগের জন্য দ্রুত একটি সার্চ কমিটি করা যায়, যার প্রধান হতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তাঁর নেতৃত্বে তিন বা চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। এ কমিটি একাধিক দক্ষ, অভিজ্ঞ ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের তালিকা তৈয়ারী করবেন এবং এ তালিকা থেকে সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান একজনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেবেন। এভাবে সকল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এ সকল পদে কোনো নিয়োগ হবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ কাজটি করে দিলে আমরা নিশ্চিত যে, ব্যাংক খাতে ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াবে। আর ক্ষমতা থাকতেই কাজ করে ফেলতে হয়, তা না হলে পরে অনুতাপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।