ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ঈমানী জোর বেশি না কম?

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ২৮ ২২:৪৪:১৮
ঈমানী জোর বেশি না কম?

এম কফিল উদ্দিন বাহাদুর


আমি মুসলমান, আমি অবশ্যই ভারতের পক্ষে। আ.লীগের সাথে সম্পর্ক ভাল তার কারণে নয়, প্রতিবেশী দেশ তাও নয়। ভারত আমাদের দুঃসময়ে ছিল, পাকিস্তান যখন আমাদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছিল তখন পাশে ছিল। কিছু সুশীলের মতে, ভারত স্বার্থের কারণে ছিল! তাদের ভাষায় যদি বলি হ্যাঁ স্বার্থের কারণে ছিল তবুও তো ছিল পাশে আমাদের। এমন দুঃসময়ে কে ছিল পাশে? বিশ্বে তো অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ছিল! কে ছিল পাশে? কেউ তো না!!

যখন আমার বাঙালি পানির বদলে প্রশ্রাব খেয়েছিল বাধ্য হয়ে, যখন আমার মা/ বোনকে ধর্ষণ করছিল, যখন আমার বাবাকে বেয়নেট দ্বারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করছিল, যখন আমার ঘর- বাড়ি পুড়িয়ে ছারখার করছিল, যখন রাস্তায় কুকুরের সাথে রাত কাটাতে হয়েছিল, আমার মায়ের লাশ শকুনে খেল, বোনের ধর্ষিত দেহ ভক্ষণ করেছিল কুকুর তখন কে ছিল পাশে? একমাত্র ভারত।

আজ আমি বাঙালি হিসেবে গর্ব বোধ করছি, আজ আমি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছি সোনালী সংগ্রামের কারণে। আর ঐ সংগ্রামের অংশীদার ভারত। ত্রিশ লক্ষ মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করল পাকিস্তানী খুনীরা তখন দেখার কেউ ছিলনা। ছিল একমাত্র ভারত।

একজন মানুষ যে দেশের নাগরিক হোকনা কেন সে দেশের ইতিহাস ভুললে হয়না। তা মেনে নেয়ে যায়না। একটি দেশের ইতিহাস দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

আজ যখন ভারত পাকিস্তানে যুদ্ধের নমুনা দেখা যাচ্ছে তখনি কিছু বাঙালির ঈমানি জোর বেড়ে গেল! কেউ পাকিস্তানের পক্ষে, কেউ ভারতের পক্ষে। কেউ বলছে মুসলিম মরতে পারেনা, মুসলিম হয়ে মুসলিমের বিপক্ষে যাব তা কি করে হয়! এসব অবান্তর মন্তব্য।

আসলে বাঙালি যে কোন ইস্যূতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। কোনমতেই এক হতে পারেনা। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার প্রভাব সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় খুব বেশি। এর কারণ একটাই। ইতিহাস জানেনা, বা জানলেও ভুলে থাকার চেষ্টা। যা এক প্রকার রোগে পরিণত হয়েছে। রোগ সারাতে হলে সচেতনদের আরো সচেতন হতে হবে। এবং মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাসকে এক প্রকার জোর হলেও খাওয়াতে হবে। এর কারণে নিজেরাই বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবে। নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়বে। পরিবর্তন আসতে পারে তাদের মধ্যে।

পাকিস্তানীদের মধ্যে একটা সংঘাত দেখি সব সময়। মসজিদে, মাদ্রাসায়, রাস্তা-ঘাটে বোমা ছুড়ে হত্যা করে মুসলিমদেরকেই! যারা বোমা ছুড়ছে তারাও মুসলিম। সোজা কথা হল, মুসলিম মুসলিমদেরকেই হত্যা করছে। তাদের প্রতি তাদের মমতা নাই। জঙ্গি হয়ে তাদের কাজ অন্য মুসলিম ভাইকে হত্যা করা। এটা তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যেসে পরিণত হয়েছে।

অথচ আজ সে পাকিস্তানের প্রতি প্রেম বেড়ে গেল কিছু বাঙালির। তারা পুরাপুরি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানকে। তারা মনে করছে তাদের সমর্থনের কারণে পাকিস্তান জিতে যাবে! নিজ দেশকে তারা বিভক্তি করে ফেলল ইস্যূটিকে নিয়ে। অথচ যে দেশে বসে ভারতকে গালি দিচ্ছে, বিরোধীতা করছে সে ভারত আমরা মুসলিম হয়েও দুঃসময়ে পাশে ছিল। যে পাকিস্তানীরা আমার প্রাণের স্বদেশের এখনো বিরোধীতা করে সে পাকিস্তানীদের পক্ষে বাঙালি!

যারা চিৎকার করছে মুসলিম মুসলিম বলে। মুসলমানদের প্রতি দরদ দেখাচ্ছে তারা অধিকাংশই ইসলামের নিয়ম নীতি মানেনা। তারা ঈদুল আযহা আর ফিতরের নামাজ ছাড়া নামাজ আদায় করেনা। তারা বিভেদ সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা করে। তারা রাস্তায় গাড়ি পুড়িয়ে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারে। তারা রাস্তায় মেয়ে দেখলে লালা ঝরায়। তারা গাড়িতে মা বোনদেরকে ধর্ষণ করে। তারা নেশা করে ইত্যাদি। অথচ তাদের এখন ঈমানী জোর বেড়ে গেল ভারত পাকিস্তান ইস্যূতে। আসলে তাদের ঈমানী জোর বেশি না কম? সমীকরণ মেলালেই বুঝা যায়।

তবে আমি যুদ্ধের পক্ষে নই। যা হয়েছে এখানে শেষ হোক। জীবন নিয়ে খেলািআমি কামনা করছিনা। কোন সচেতন ব্যক্তির প্রত্যাশা যুদ্ধের পক্ষে হতে পারেনা। প্রতিবেশী শত্রুর ঘরে আগুন লাগলে অনেকেই খুশিতে নাচে। কিন্তু সে আগুনের লেলিহান শিখা যে নিজের ঘরেও ছুঁতে পারে তা আমরা একদম ভুলে যাই। তাই, পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

বিশ্ব শাসন দেখে অসহায় বাচ্চারা বলছে, শাসকরা মানুষ না তারা পশুর চেয়ে অধম। তাই এখনি বন্ধ হোক যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ।

লেখক : রাজনৈতিক কর্মী।