ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

ডাকসুর সমালোচিত নেতারা

২০১৯ মার্চ ২০ ১৫:৩৩:৩৭
ডাকসুর সমালোচিত নেতারা

মানিক বৈরাগী


আধুনিক বা উপনিবেশীক বা ইউরোপীয় ধাছের যে ক'টি ভারত উপমহাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। বৃটিশ উপনিবেশ তাদের সমাজ কল্যান ও উপনিবেশ পরিচালনার জন্য যে ভারতে বিশিষ্ট জ্ঞান হিতৈষী গণ ও এই মহত কর্মে এগিয়ে আসেন। তাঁদের মতামত ও উৎসাহে পূর্ববঙ্গে ১৯২১ সালে বৃটেনের অক্সফোর্ড আদলে ও পাঠ তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালনা সুরু করে। অক্সফোর্ড আদলে পরিচালিত হতো বলেই এটি কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে। এটি যেমন সত্যি আবার মেধার যোগ্যতায় তখন বিশ্বে খ্যাতিও অর্জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার তিন বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ।এটিকে তখন সংক্ষেপে ডাসু বলা হতো। ডাসু মুলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গণের আগ্রহের ফসল।তৎকালীন মহান শিক্ষকদের বার্ষিক সভায় প্রস্থাবনা পেশ করলে ১৯২২-১৯২৩ শিক্ষাবর্ষে এটি প্রস্তাব পেশ হয়।পরবর্তী ১৯২৫ চুড়ান্ত অনুমোদন পায়।

কিন্তু শিক্ষক পরিষদ একটি খসড়া কমিটি গঠন করে।ডাসুর প্রথম সহ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ -সাধারণ সম্পাদক হন যোগেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত (১৯২৪-১৯২৫)। এর পরের বছর অভনী ভূষণ। এভাবেই ডাসুতে শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন ও মতামতে ডাসুর নেতা নির্বাচিত হতো।

১৯৫৩-১৯৫৪ শিক্ষা বর্ষে ডাসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ডাসুর নাম পরিবর্তন করে নাম নির্ধারণ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু)। এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র-ছাত্রীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যদিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। তখনো ছাত্র সংঘটন গুলো সংঘটনের বেনারে মাধ্যমে নির্বাচন হতো না। বিভিন্ন নাম দিয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংঘটন নির্বাচনে অংশ নিতো। যেমন ছাত্র ইউনিয়ন প্রগতি নামে প্যানেল করতো, আর ছাত্রলীগ শিখা সহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর নাম নির্ধারণ করে নির্বাচন করতো।

এই ডাকসু নেতারাই ৫২র ভাষা আন্দোলন, ৫৪র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২র শিক্ষা আন্দোনসহ সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যে ৭ বার নির্বাচন হয়েছে তা অনেকের চোখের সামনেই সেই নেতারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবস্থান করছে। মুক্তিযুদ্ধের পুর্বে ডাকসু নেতাদের মধ্যেও এখনো অনেকেই জীবিত আছেন। সক্রিয় রাজনীতিতে ভুমিকা রাখছেন। তো প্রশ্ন হচ্ছে আমার কেন এতো মাথাব্যথা, আমার তো ডাকসু কথা বলা লেখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে কোন প্রকার যোগ্যতা নেই।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন বাংলাদেশের প্রথম ও প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সন্তানেরাইতো পড়ে। আমাদের সন্তানেরাই ডাকসুই তো বারে বারে গণ মানুষের গণ স্বপ্ন পূরণে ভুমিকা রেখেছে। আমাদের সন্তানেরাই ডাসু বা ডাকসুর নেতারা আবার জন দুষমনে ও পরিনত হয়েছেন ভিবিন্ন প্রেক্ষাপটে।

মহান স্বাধীনতার পুর্বে ডাসুর নেতা গোলাম আজম ও মৌলভী ফরিদ আহমদ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মাস্টার মাইন্ড হিসাবেও ভুমিকা রেখেছে। তারা যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে।একিভাবে ডাকসুর জি এস কেএম ওবায়দুর রহমান ৭৫এর ১৫আগস্ট ও ৩রা নভেম্বর জেল হত্যার সাথে জড়িত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালিন মহাসচিব। বিএনপি করা তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কিন্তু তিনি জাতিরজনক হত্যার অন্যতম সহযোগী।

একিভাবে ডাকসুর নেতাদের মধ্যে অনেকেই ৭৫র পরবর্তী সামরিক স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহন করেছে, রাজনৈতিক ভাবে আদর্শচ্যুত হয়ে ডাকসু কে কলঙ্কিত করেছে। এর মধ্যে ডাকসুর ফেরদৌস আহমদ কোরেশি ৭৫ পরবর্তী তিনি জিয়া এরশাদ ও ফখরুদ্দিনফখরুদ্দিন-মঈন এর সময় কিংস পার্টি করে ব্যাপকভাবে মুখরোচক আলোলনা সমালোচনার জন্মদেন।তিনি মুক্তিযোদ্ধা, লেখক,সম্পাদক, সাংবাদিক।

আসম আব্দুর রব ডাকসুর সহ সভাপতি,মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অনেক অবদান। স্বাধীনতার পর ক্ষমতা ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কোন্দলের মধ্যদিয়ে জাসদ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জাসদের বিতর্কিত ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত হটকারি রাজনীতির কারনে ৭৫র প্রেক্ষাপট তৈরী করে।স্বৈরাচার এরশাদ এর সময়ে এরশাদ এর নয় বছরের শাসনামলে দালালি ওএরশাদ এর গৃহ পালিত ৭০দলিয় বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।এরশাদের পতনের পর বোরকা পরে পালিয়ে জনরোষ থেকে রক্ষা পান।সম্প্রতি তিনি ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের নেতা।

একিভাবে ডাকসুর ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না স্বাধীনতার পুর্বে ইসলামী ছাত্র সংঘ, স্বাধীনতার পর জাসদ ছাত্রলীগ, জাসদ থেকে বাসদ,বাসদ ভেঙ্গে মাহবুব-মান্না, আবার আওয়ামিলীগ এ যোগদান, এমপি হতে না পেরে ফখরুদ্দিন-মঈন এর সময়ে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে যেয়ে বিতর্কিতভাবে আওয়ামিলীগ থেকে বের হয়েযান।কিছুদন টকশো করে আলোচনায় এলে গড়েন নাগরিক ঐক্য।

বিএনপি নেতা ঢাকার সাবেক মেয়রের সাথে ফোনালাপ ফাঁস হলে যানাযায় আওয়ামিলীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার্থীর লাশ ফেলার কথা বলেন।তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারন আমেরিকা থেকে এসে গ্রেফতার হন।তিনিও যুক্তফ্রন্টের নেতা।

একিভাবে বাসদ মান্না গ্রুপের ডাকসুর জিএস জিয়াউদ্দিন বাবলু স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পিটে চুরি মেরে এরশাদের মন্ত্রী হন।তিনি এখনো এরশাদের সাথে আছেন। সম্প্রতি এরশাদের ভাগনি বিয়ে করে আলোচনায় আসেন।

সুলতান মুহাম্মদ মনসুর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্যানেল থেকে ১৯.৮৯-৯০ সনে সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁদের নেতৃত্বে এরশাদের পতন হয়।তিনি আওয়ামিলীগ এর সর্বশেষ সাংঘটনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামিলীগ থেকে এমপিও নির্বাচিত হন।

ফখরুদ্দিন-মঈন এর সময় মান্নার মতো মনসুরও মাইনাস ফর্মুলা বাস্তায়নে উদ্যোগী হলে একপর্যায়ে আওয়ামিলীগ থেকে বেরিয়ে যান। তিনি পরে ড.কামালের গণ ফোরামে যোগদান করেন। বিগত নির্বাচনে ধানের শিষ প্রতিকে আবারও এমপি নির্বাচিত হয়ে সংসদে শপত গ্রহণ করে মুলধারার রাজনীতি করার ইংগিত করেন।

দীর্ঘ ২৫ বছর পর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে উপর্যুক্ত নেতাদের থেকে অধিক বিতর্কিত নেতা হলেন নুরু। আওয়ামীলীগ এর বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী ছাত্রদের নিয়ে সংঘটিত কোটা আন্দোলনের অন্যতম নেতা। এই আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সবছেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ও সন্ত্রাসী আন্দোলন হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মনে করে। তার সাথে সন্ত্রাস সাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ইসলামি ছাত্র শিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।সেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে।

সে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অপরাপর ডাকসু নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে মা বলে সম্মোধন করে। আবার গণভবন থেকে বেরিয়ে এসে আবার নির্বাচন চায় নিজের টা ছাড়া। আবার আর এক কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন মতিয়া, মেনন, তোফায়েল নেতা বানিয়েছেন, তেমনিভাবে রব মান্না নুর কেও সৃষ্টি করেছে। তো ইতিহাস থেকে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হলে জাতির মঙ্গল দেশের মঙ্গল।তথ্যসূত্র :বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস -ড. মোহাম্মদ হান্নান,উইকিপিডিয়া

লেখক :কবি ও নব্বইয়ের সাবেক ছাত্রনেতা কক্সবাজার।