ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

নুসরাত হত্যাকাণ্ড : সুপরিকল্পিত ও ঠাণ্ডা মাথার খুন

২০১৯ এপ্রিল ১৩ ০০:৪৯:০৫
নুসরাত হত্যাকাণ্ড : সুপরিকল্পিত ও ঠাণ্ডা মাথার খুন

প্রবীর সিকদার



সোনাগাজীর মেয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা হটাত নয়, সেটা ছিল খুবই পরিকল্পিত। আর সেই খুনের পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলেন সোনা গাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের বিতর্কিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন, যিনি আবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি। ওই কমিটির অন্য সদস্যদের কেউ কেউ জড়িত ছিলেন ওই নৃশংস খুনের ঘটনার পরিকল্পনার সাথে। এটা জানতেন ওই মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক কর্মচারীও।

ভয়ঙ্কর ওই দিনটি ছিল ৬এপ্রিল ২০১৯। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি নিজের মাদ্রাসা কেন্দ্রেই আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতেই গিয়েছিল। যৌন হয়রানির মামলায় লম্পট অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বোন নুসরাতের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। প্রতিদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে পরীক্ষার হলের আসন পর্যন্ত বোনকে পৌঁছে দিতেন ভাই নোমান। অন্য অভিভাবকেরাও তাদের মেয়ে কিংবা বোনকে পৌঁছে দিতেন হলের ভেতরে, আসন পর্যন্ত। সেদিনও অন্য অভিভাবকেরা পরীক্ষার হলে সেটাই করেছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন নোমান। গেটেই নোমান কে আটকে দেন মাদ্রাসার দারোয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েক পুলিশ সদস্য। কয়েক দফা তর্ক করেও লাভ হয়নি নুসরাত কিংবা নোমানের! মাদ্রাসার কয়েক শিক্ষক কর্মচারীও তখন দারোয়ান ও পুলিশের কাজে সায় দেন। অগত্যা গেটের বাইরেই বড় ভাইকে রেখে পরীক্ষার হলে ঢুকে যায় নুসরাত। কিছু সময় পরেই আগুনের কথা জানতে পারেন নোমান। আরও কিছু সময় পরে তিনি জানতে পারেন বোন নুসরাতের নির্মম ঘটনা। এখন ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণে কি দাড়ায়? দারোয়ান ওই দিন কেন নোমানকে পরীক্ষার কেন্দ্র তথা সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকতে দেয়নি? তাহলে কি দারোয়ান জানতেন, কি ঘটবে সেখানে, কিংবা যারা নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন, তারাই মোস্তফাকে দিয়ে নোমানকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি! পুলিশ সদস্যরাই বা কেন মাদ্রাসার দারোয়ানকে সমর্থন করলেন! অন্য সব অভিভাবক পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে পারছেন, নোমান কেন পারলেন না! কিছু কি জানতেন পুলিশ সদস্যরা? রহস্য আছে সেখানেও! আর সেই সূত্রেই আততায়ীরা নির্বিঘ্নে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার কাজটি বিনা বাধায় সফলভাবে করতে পেরেছে।

সোনাগাজীর বাস্তবতা স্পষ্ট করেই বলে, মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কথিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিনের ইন্ধন ও নির্দেশনা ছাড়া সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের ভেতরে সুপরিকল্পিত ও ঠাণ্ডা মাথায় নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার আয়োজন একেবারেই অসম্ভব।