ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত

ফরিদপুরে জমি ডাকাতি ও একজন বরকত মণ্ডলের ভাইজান!

২০১৯ এপ্রিল ১৯ ০০:৩০:৫৪
ফরিদপুরে জমি ডাকাতি ও একজন বরকত মণ্ডলের ভাইজান!

প্রবীর সিকদার

ফরিদপুরে সরকারের খাস জমি, ভূমিহীনদের জমি, দরিদ্র কৃষকের জমি... সব মিলিয়ে কয়েক হাজার একর জমি ভুয়া দলিল কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে দখল করে নিয়েছে সাবেক এক মন্ত্রীর বিশ্বস্ত সহচর কিংবা সহচরেরা!

এখন আমি হাজার হাজার একর জমির কথা বলবো না, বলবো মাত্র সাড়ে ৭একর জমির কথা! এমন সাড়ে ৭একর জমির দৃষ্টান্ত কখন কতবার হতে হতে হাজার হাজার একর জমি হয়েছে, সেটা হয়তো কেউ জানে না; যেমন জানেন না ওই মন্ত্রী নিজেও!

সাবেক মন্ত্রী খোন্দকার মশাররফ হোসেনের কলিজার মধ্যে জায়গা করে নেওয়া সাবেক বিএনপি ক্যাডার ও হালের হাইব্রিড লীগ নেতা বরকত মণ্ডল ওরফে সাজ্জাদ হোসেন বরকতকে চিনেন না, ফরিদপুরে এমন মানুষ বিরল। তাকে অনেকেই আদর করে ডেকে থাকেন দুই টাকার টোকাই! হাল আমলে অবশ্য বরকতের নামেও বরকত ফলেছে! তিনি নিজেই মানুষজনকে উট গরু খাসি মেরে খাইয়ে নিজের নামটা বেশ জুতসই করে নিয়েছেন; নাম তার এখন চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম!

হালে তিনি চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম হলেও, চরভদ্রাসনে সাড়ে ৭একর জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে সাজ্জাদ হোসেন বরকতের নামে! সরকারি খাস খতিয়ানের ওই সাড়ে ৭একর জমি চরভদ্রাসন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অবৈধ ৫টি পৃথক দলিল ৪০৪, ৪৪৫, ৪৪৬,৪৪৭ ও ৪৪৮ নম্বরের মাধ্যমে তথাকথিত হস্তান্তরিত হয়। পরে ওই জমি মিউটেশনের জন্য সকল কাগজপত্র চরভদ্রাসনের এসি ল্যান্ড অফিসে যায়। তখন চরভদ্রাসনে এসি ল্যান্ড ছিলেন না; ওই দায়িত্ব পালন করতেন চরভদ্রাসনের ইউএনও কামরুন নাহার। চৌকস ওই কর্মকর্তা বরকত মণ্ডল ওরফে চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম ওরফে সাজ্জাদ হোসেন বরকতের জালিয়াতি ধরে ফেলেন। সব রকমের চাপ উপেক্ষা করে তিনি লিখিতভাবে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি জানান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে। জেলা প্রশাসক ওই চিঠি পেয়ে বোধকরি কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না! চিঠি পড়ে রইলো ফাইল বন্দী হয়েই অনেকদিন!

ইউএনও ওই চিঠি লিখে জাল-জালিয়াত বরকত মণ্ডলের কিছুই করতে পারেননি! উল্টো ওই ইউএনওকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে! পরে ডিসি মহোদয় নিজের দায় এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওই চিঠি পাঠিয়ে দেন জিপি আব্দুর রাজ্জাকের কাছে। সেখানে প্রয়োজনীয় রসদসহ পৌঁছে যান প্রবল ক্ষমতাধর বরকত মণ্ডল! জিপি মহোদয় ওই ফাইল ঢুকিয়ে রাখেন ডিপ ফ্রিজে অনন্তকালের জন্য!

মন্ত্রীর পিয়ারের বরকত মণ্ডলের জাল-জালিয়াতি নিয়ে ইউএনওর ওই চিঠি পেয়েই জেলা প্রশাসকের যে কাজটি করা জরুরি ছিল, সেটা হল, ওই জাল দলিলগুলোর ক্রেতা ও বিক্রেতা, দলিল লেখক, সনাক্তকারী ও সাব রেজিস্টারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও সরকারি খাস জমি সরকারের দখলে নেওয়া। কিন্তু ট্র্যাজেডি হল, ফরিদপুরের ডিসি মহোদয় তার কিছুই করেননি! তিনি দায়সারা ভাবে, সেই সাথে নিজের দায়িত্ব এড়াতে ওই ফাইলটি জিপি আব্দুর রাজ্জাকের কাছে পাঠিয়েছেন মাত্র! যার কিংবা যাদের দায়িত্ব সরকার ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা, তিনি কিংবা তারা যদি লোভ কিংবা লাভ কিংবা ভয়ের কাছে নিজেকে কিংবা নিজেদেরকে সঁপে দেন, তাহলে আর সাধারণ মানুষের আশ্রয়ের জায়গা থাকে কোথায়?

ফরিদপুরে ওই সাড়ে ৭ একরের মতো এমন নজির আছে হাজারো! কে আর সেই সব খুঁজে বের করবে, কেনই বা করবে! জেলা প্রশাসক তো করবেন না আরও! শুধু কি বরকতের ভয়! এই সব জাল-জালিয়াতির জমি-সম্পদ নিয়ে সুযোগ পেলেই তো বরকত মণ্ডল বলেন, এই সব রাখা হচ্ছে আমার নামে, কিন্তু সেই সব আমার নয়; বাস্তবে সব জমি-সম্পদের সম্পত্তির মালিক ভাইজান! ডিসির ঘাড়ে কয়টা মাথা যে, বরকতের ভাইজানটা কে, সেটা জানা থাকার পর জমি লুটেরা বরকত মণ্ডল ওরফে সাজ্জাদ হোসেন বরকত ওরফে চৌধুরী বরকত ইবনে সালামের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেন!