ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

এমন মানুষ চাই

২০১৯ মে ২৯ ২২:৪১:৩১
এমন মানুষ চাই

চৌধুরী আবদুল হান্নান


‘প্রবীর সিকদার’ সত্যনিষ্ঠ অকুতোভয় এক সাংবাদিকের নাম। মাত্র ১০ বছর বয়সে একাত্তরে তার বাবাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়, বাবার লাশও খুঁজে পায়নি সন্তানেরা। পিতৃ হত্যার মর্মন্তুদ বেদনার স্মৃতি নিয়ে বেড়ে ওঠেন শিশু প্রবীর।

স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি আজন্ম ঘৃনা আর ক্রোধ তার মধ্যে অপ্রশমনীয় আগুন জ্বেলে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ব্রত গ্রহণ করেন তিনি। তার লেখা বা প্রকাশনায় সব সময় এর প্রতিফলন দেখা যায়।

বর্তমানে তিনি জাতীয় বাংলা দৈনিক পত্রিকা বাংলা ৭১ এবং নিউজ পোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ইতিপূর্বে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক সমকাল পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন।

তার নিজ এলাকা ফরিদপুরের কানাইপুরে কয়েকটি বিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষার আলো বিস্তারে স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং তিনি এখনো নিজে তা অভিভাবকের মত তত্ত্বাবধান করে থাকেন।

স্বাধীনতা বিরোধীদের বিষয়ে একাত্তরের ঘটনাবলি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায়, তখন তিনি ওই পত্রিকায় ফরিদপুর প্রতিনিধি। ২০০১ নালে গুপ্ত ঘাতক তাওক হত্যা চেষ্টা করেছিল, তাতে তিনি প্রাণে বেঁচে যান বটে, বোমা হামলায় একটি পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন। কিন্তু তার কলমের গতি থামাতে পারেনি রাজাকারের উত্তরসূরীরা। সাহসিকতার সাথে সত্য প্রকাশে কখনো পিছপা হতে দেখা যায়নি তাকে।

মানবতা বিরোধীদের বিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার লেখা প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাই। ক্ষমতাসীন দলের সাফল্য গাঁথা নিয়ে যখন লেখেন তখন তাকে অনেকেই সরকারি দলের সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন, আর যখন সরকারের ব্যর্থতার ফিরিস্তি তুলে ধরেন তখন তাকে বিএনপির দোসর বলতেও অনেকে ছাড়েননি। প্রকৃতপক্ষে তিনি কোনো দলীয় ভাব ধারার সাংবাদিক নন, একজন বস্তুনিষ্ঠ নিরপেক্ষ সাংবাদিক, যা তার কর্মে প্রকাশিত।

সম্প্রতি সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির ঘটনা তুলে ধরায় অনেকেই বিরাগভাজন হয়েছেন, তার শত্রু সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। স্পষ্ট কথা বলা, অকপটে সত্য প্রকাশের কারণে মৃত্যুও হুমকি তার নিত্য সঙ্গী।

কিছুদিন পূর্বে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার খবর জেনে তার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার সেবার বাড়িতে যাওয়া হয়নি, তবুও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা হয়েছে।

মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের স্বাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি ছিল নিত্য দিনের যাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য পুলিশি সতর্কতাও ছিল। কিন্তু প্রবীর সিকদারের লেখনি বিরামহীন আর তার জীবনের হুমকিও বিরামহীন। মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারা এক ব্যক্তি যার জীবনের ব্রতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া, তাকে সুরক্ষা দেওয়ার তো এ মুক্তিযুদ্ধের সরকারেরই দায়িত্ব।

আমরা জানি প্রবীর সিকদার শহীদ পরিবারের সন্তান ও নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে প্রথম থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য।

প্রবীর সিকদারের কলম শত ভয়-ভীতি, বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এগিয়ে চলুক এমন প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।