ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিস্তারিত

আন্দোলনে এসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষকরা

২০১৯ জুলাই ১৩ ১৬:৪৬:২৭
আন্দোলনে এসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষকরা

নিউজ ডেস্ক : জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টানা ২৮ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। লাগাতার এ আন্দোলনে ২১৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন শিক্ষক ডেঙ্গু জ্বর ও সাতজন শিক্ষক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্যান্য দিনের মতো শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আন্দোলনে দুই শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হলেও অনেকে সুস্থ হয়ে আবারও আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন বলে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে নতুন করে ১৩ জন ডেঙ্গু জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, গত ২৮ দিন ধরে শিক্ষকদের কীভাবে রাজপথে বসে দিন পার করতে হচ্ছে তা নিজ চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনাহারে রাজপথে বসে দিন-রাত কাটাতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে সেই কাপড়ে বসে থাকতে হচ্ছে, নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সকল কিছু হারাম হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে ধুলাবালিতে বসে ডেঙ্গু মশার কামড় খেয়ে ছয়জন শিক্ষক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এছাড়াও সাতজন শিক্ষকের ডায়রিয়া হওয়ায় তাদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া সারাদেশের প্রায় চার হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক গত ২৮ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম পর্যায়ে এসব শিক্ষক টানা ১৭ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও গত ১১ দিন ধরে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৩০০টির মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য যাচাই-বাছাই করা হলেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বঞ্চিত প্রায় সহস্রাধিক নারী-পুরুষ শিক্ষক এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। একাধিক নারী শিক্ষকের সঙ্গে শিশু-সন্তানরাও রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে প্লাস্টিক বিছিয়ে মাথায় ফিতা আর ব্যানার ঝুলিয়ে জাতীয়করণের দাবিতে তারা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আন্দোলন করে চলেছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, সারাদেশে ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলেও প্রায় চার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বঞ্চিত করা হয়েছে। সকল শর্ত পূরণ হলেও আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়নি। গত ২৮ দিন ধরে আমরা এ দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করলেও এখনও সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছি, নিজের ও পরিবারের আহার যোগাতে পারি না। কোনোভাবে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে প্রেসক্লাবের সামনের রাজপথে বসে অনাহারে রোদ-বৃষ্টি, ধুলাবালি ও মশার কামড়ে দিনরাত যাপন করে যাচ্ছি। বরং উল্টো আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফিরোজ উদ্দিন বলেন, জাতীয়করণ থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হলে এর আগেও আমরা ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন নামি। টানা ১৮ দিন আন্দোলনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি আদায়ে আশ্বস্ত করলে আমরা বাড়ি ফিরে যাই। এরপর ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাদপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর হালনাগাদ তথ্য চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা দায়সারা তথ্য দেন। কর্মকর্তাদের অবহেলায় আমাদের রাজপথে আমরণ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হতে হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষকরা ঘর-সংসার ত্যাগ করে রাজপথে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। জাতীয়করণ ছাড়া আমরা বাড়ি যাব না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সুদৃষ্টি দিয়ে দাবি পূরণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৩, ২০১৯)