ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

নওগাঁয় বিনে পয়সায় পুলিশে চাকুরি পেলেন ১২০ জন

২০১৯ জুলাই ১৫ ১৭:৪৮:১৭
নওগাঁয় বিনে পয়সায় পুলিশে চাকুরি পেলেন ১২০ জন

নওগাঁ প্রতিনিধি : মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নওগাঁয় এবার স্বচ্ছভাবে পুলিশে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ কনেস্টবল পদে মোট চাকুরি পেয়েছেন ১২০ জন।

কনেস্টবল পদে চাকুরি প্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারন কৃষক, দিনমজুর, রবিদাস, মুক্তিযোদ্ধার হতদরিদ্র নাতী, রিক্সা চালকের মেয়ে, ভিক্ষুকের ছেলেও পেয়েছেন চাকুরি।

নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্য ও নওগাঁ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন জানান, পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম ইতোপূর্বেই বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি মুক্ত দেশ, আধুনিক দেশ’ গড়তে আগামীতে পুলিশে কনেস্টবল পদে যারা চাকুরি প্রত্যাশী তারা কেউ যেন কোন দালাল চক্রর ফাঁদে পড়ে চাকুরির জন্য দালাল চক্রসহ কাউকে যেন টাকা না দেন। শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতা সম্পূর্ন হলেই বিনা টাকায় পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরি পাবেন চাকুরি প্রত্যাশীরা।

নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যরা জানান, নওগাঁর পুলিশ সুপার তার কথা রেখেছেন। দালাল চক্রমুক্ত ও তদবির বিহীন মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন চাকুির প্রত্যাশী ৩ জুলাই ১২০ জন নারী-পুরুষকে পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরি দিলেন তিনি।
পার-নওগাঁ পারঘাটি মহল্লার হরজিন পল্লীর রবিদাস সম্প্রদায়ের শিল্পী রাণী রবিদাস। শিল্পীর বাবা ব্রিজের মোড়ে জুতা সেলাই করতেন। গত বছর বুকের ভাল্ব নষ্ট হয়ে মারা গেছেন তিনি। তার মা ও বৃদ্ধা দাদিকে নিয়ে তাদের সংসার। এক সময় বিভিন্ন লোকজনদের বাড়িতে গৃহস্থালী কাজ করতেন। পরিবারের এক মাত্র অর্থ উপার্জনকারি বাবা মারা যাওয়ার পর শিল্পীর মা শত অভাব-অনটনের মধ্যে মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিয়েছেন। বর্তমানে শিল্পী নওগাঁ কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন।

শিল্পী রাণী রবিদাস জানান, তার বাবা মারা যাওয়ার পর অভাব-অনটনে অনেক কষ্টে দিনপথ চলছিল। এমতাবস্তায় নওগাঁয় পুলিশ কনেস্টবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। এরপর নওগাঁ পুলিশ লাইনে দাঁড়ান তিনি। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনের স্বচ্ছতার কারণে মেধার ভিত্তিতে তিনি পুলিশ কনেস্টবলে চাকুরি পান।

শুধু শিল্পী নয় ! এই ভাবে নওগাঁয় পুলিশ কনেস্টবল পদে টাকা ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন মান্দা উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের মাত্র ৩৮ ইঞ্চি লম্বা (উচ্চতা) লাল চাঁন আলীর পুত্র ফিরোজ হোসেন। সহায় সম্পদ বলতে কিছুই নেই তার। লাল চাঁন আলী নওগাঁর মহাদেবপুরের নওহাটামোড় (চৌমাশিয়া) বাজার বাস ষ্টান্ডে দাঁড়ানো বাসের যাত্রীদের কাছে ভিক্ষার টাকায় সংসার চালানোর পাশাপাশি তার ছেলে ফিরোজ হোসেনকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ভিক্ষুক লাল চাঁন আলীর ছেলে ফিরোজ হোসেন এবার পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুির পেয়েছেন।

লাল চাঁন আলী বলেন, আমি একজন সহায় সম্বলহীন মানুষ। আমি বাসের যাত্রীদের কাছে হাত পাতিয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালিয়েছি এবং ছেলেকে লেখাপড়া শিখায়েছি। মহাদেবপুর উপজেলার চকরাজা গ্রামের হতদরিদ্র সহিদুল ইসলাম জানান, আমার পিতা মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের হাবিলদার ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর আমার বাকরুদ্ধ মা ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছি এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধা পিতার নামে পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা দিয়ে সংসার চালানো ও ছেলেকে লেখাপড়া চালাতে আমি যাত্রীবাহী বাসের শ্রমিক (হেলপার) হিসেবে কাজ করি।

তিনি বলেন, আমার ছেলে বাপ্পী হোসেন মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পূর্ন হওয়ার পরও চাকুিরতে ঢুকানোর জন্য ইতোপূর্বে কয়েকটি দপ্তরে আবেদন করে এমনকি সম্পূর্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার পরও শুধুমাত্র টাকা-পয়সা না থাকার কারণে ছেলেটির চাকুির এতদিন হয়নি। কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই এবার আমার মেধাবী ছেলে (মুক্তিযোদ্ধার নাতী) মেধা তালিকায় ২য় স্থান অধিকারী বাপ্পী হোসেনকে চাকুরি দিয়েছেন। আরো কয়েকজন অভিভাবকও একইভাবে বলেছেন, যে এইবার কোন প্রকার টাকা বা দালাল ছাড়াই জেলা পুলিশ সুপার সচ্ছভাবে ১২০ জনকেই শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়েছেন।

নওগাঁর পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম জানান, শুধুমাত্র যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে ১২০ জন ছেলে-মেয়ের পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরি হয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারন কৃষক, দিনমজুর, রবিদাস, মুক্তিযোদ্ধার হতদরিদ্র নাতী, রিক্সা চালকের মেয়ে ও ভিক্ষুকের ছেলেও পেয়েছেন চাকুরি। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের নিয়োগ আরো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।

(বিএম/এসপি/জুলাই ১৫, ২০১৯)