ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

১১০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার 

বাগেরহাটের হায়-হায় কোম্পানীর এমডি মান্নান কারাগারে

২০১৯ জুলাই ১৫ ১৮:৫০:৪৬
বাগেরহাটের হায়-হায় কোম্পানীর এমডি মান্নান কারাগারে

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ‘হায়-হায় কোম্পানী’ খুলে উচ্চ সুদ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারন মানুষের কাছ থেকে ১১০ কোটি আমানত সংগ্রহ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগে দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় ‘বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেটে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। দুদকের মামলায় দেড় মাস ধরে পলাতক থাকা আব্দুল মান্নান তালুকদারকে উচ্চ আদালত জামিন না দিয়ে বাগেরহাট আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়।

সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে হাজির হয়ে দুদকের দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলায় জামিন প্রার্থনা করেন আব্দুল মান্নান তালুকদার। দীর্ঘ শুনানী শেষে বাগেরহাটের জেলা ও দায়েরা জজ আদালতের বিচারক গোরক চন্দ্র বিম্বাস জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আব্দুল মান্নান তালুকদারকে কারাগারে পাঠাবার নির্দেশ দেন।

আদালক কারাগারে পাটাবার আদেশ দেয়ার পর এজলাস থেকে আসামী আব্দুল মান্নান তালুকদার বের হওয়ার পর যাতে সংবাদকর্মীরা তার ছবি ধারণ না করতে পারে সেজন্য তার আইনজীবী বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একে আজাদ ফিরোজ টিপুর নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জন আইনজীবী তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখে আদালত থেকে তাকে নিচতলা পর্যন্ত পৌছে দেন। পরে তাকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে না তুলে তার ব্যক্তিগত গাড়ীতে জেলা কারাগার পর্যন্ত পৌছে দেয়া হয়। তবে চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মামলার পর থেকে এখনো পলাতক রয়েছেন।

এরআগে, দুদকের সম্মন্বিত খুলনা কার্যলয়ের সহকারী পরিচালক শাওন মিয়া বাদী হয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের সাবেক উমেদার ও বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেটের এমডি আব্দুল মান্নান তালুকদার এবং কোম্পানীর চেয়ারম্যান শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আনিসুর রহমানের নামে গত ৩০ মে বাগেরহাট মডেল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন।

সাধারন মানুষের কাছ থেকে উচ্চ সুদ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ১৩৫ টাকার অধিক টাকা আমানত সংগ্রহ করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অপরাদলব্দ আয় স্থানন্তর, রূপান্ত, হস্তান্তর করায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২), ৪ (৩) ৪(৪) ধারায় মামলা দায়েরের পর হায়-হায় কোম্পানীটির এমডি আব্দুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান মাওলানা আনিসুর রহমান বাগেরহাট ছেড়ে পালিয়ে যায়।

দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিগত ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি আব্দুল মান্নান তালুকদার সেচ্ছা অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান করেন বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম আনিসুর রহমানকে। তারা গ্রাহকদের প্রতি লাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার প্রলোভনে বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন।

যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি। গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (একাউন্ট) হিসাব থেকে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করে গ্রাহকদের ওই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে দুদক বাগেরহাটের এই হায়-হায় কোম্পানীটির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে। প্রায় তিন মাস আগে অনুসন্ধান নেমে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে নানা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মেলে। দুদক এখন ওই টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে তার অনুসন্ধান করছে।

(এসএকে/এসপি/জুলাই ১৫, ২০১৯)