ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ বাঁধ ভেঙ্গে তিন স্থানে ভাঙন, ৬ গ্রামের হাজারো পরিবার পানিবন্দী

২০১৯ জুলাই ১৬ ০০:১৪:২৪
কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ বাঁধ ভেঙ্গে তিন স্থানে ভাঙন, ৬ গ্রামের হাজারো পরিবার পানিবন্দী

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে অব্যাহত বন্যার কবলে পরে মৌলভীবাজারের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ বাঁধ ভেঙ্গে তিনটি পৃথক স্থানে আলাদা আলাদা ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় কয়েক হাজার মানুষ পানি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর পানি । এমন তথ্য নিশ্চিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে যে তিনটি স্থানে বাঁধ ভাঙ্গছে সেটি কুশিয়ারা নদীর বাঁধ নয়, এটি গ্রামীণ রাস্থা। ঐ জায়গায় কুশিয়ারা নদীর কোন বাঁধ নেই বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র।

সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরের দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় , সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা,ব্রাম্মণগ্রাম, চানপুর, শেরপুর,দাউদপুর, কেশবচর,দরাধরপুর, আলিপুরসহ ৬টি গ্রাম কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে সৃষ্ট বন্যার পানিতে মুহুর্তেই তলিয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করার কারনে এসব গ্রামের শতশত আধাপাকা, কাচা ও টিনসেডের বাড়িঘর মুহুর্তেই তলিয়ে যায় বন্যার পানির তীব্র স্রোতে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর থেকে প্রয়োজনী জিনিসপত্র নেয়ার কোন সুযোগ তারা পাননি। ব্রাম্মণগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মিলাদ হোসেন বলেন কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গত দ’ুদিনের বন্যায় সব বাড়িঘর তলিয়ে গেলেও বাঁধ রক্ষায় এগিয়ে আসেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিনি বলেন স্থানীয়রা বাড়িঘর রক্ষায় বালুভর্তি বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করলেও তাতে কোন কাজ হচ্ছেনা।

বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে ক্ষতিগ্রস্থরা স্থানীয় হামরকোনা মাদ্রসা ও এতিমখানা, শেরপুরের আফরুজগঞ্জে ব্রাম্মণগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কয়েকশ মানুষ আশ্রয় নিলেও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।

আশ্রয় নেয়া স্থান সমূহে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও রান্নাবান্নার তেমন সুযোগ সুবিধা না থাকায় চরম বিফাকে পরেছেন আশ্রয় নেয়া মানুষেরা, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধাদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি । সোমবার দুপুর দুইটার দিকে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য মুরি,গুর,চিড়াসহ শুকনো খাবার নিয়ে উপস্থিত হন খলিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অরবিন্দু পোদ্দার বাচ্চু । শুকনো খাবার বিতরণ করা ছাড়াও তিনি স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বাঁধের ভাঙ্গা স্থান পরিদর্শন করেন।

এসময় তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন পানির তীব্র স্রোত থাকার কারনে বাঁধ মেরামত করার কোন সুযোগ নেই ,তাই আমার আশঙ্কা অবশিষ্ট বাড়িঘরসহ পুরো গ্রাম আজ রাতের মধ্যেই তলিয়ে যাবে। তিনি জানান বন্যায় আক্রান্তদের সাহায্যের জন্য ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন থেকে আড়াই মেট্রিকটন চাল ও ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে । পাশাপাশি পানিবাহিত রোগসহ নানা ব্যাধি যাতে ছড়িয়ে না পরে সেজন্য মেডিকেল টিমও কাজ করছে বন্যায় আক্রান্ত গ্রাম গুলিতে।

এদিকে হামরকোনা মাদ্রাসার পাশে কুশিয়ার নদীর দুটি স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হলে স্থানীয়রা বালু ও পাথরবর্তি বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর কয়েকদফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ-দুটি বাঁধ রক্ষার প্রানান্তর চেষ্টা যখন করছিলেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ ঠিক তখনি পাশের আরেকটি জায়গায় নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেয়। প্রায় পঞ্চাশ গজের মত জায়গা জুড়ে বিশাল এই ভাঙ্গন দেখা দিলে পানির স্রোতের তীব্রতায় স্থানীয়রা বাঁধ রক্ষার কোন সুযোগ পাননি। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তি গ্রামীণ রাস্থার তৃতীয় এই স্থানে নতুন করে ভাঙ্গনের ফলে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এতে করে ব্রাম্মন গ্রামের নুতন নতুন ঘর বাড়ি প্লাবিত হতে থাকে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্যর নির্দেশে প্রাথমিকভাবে সাড়ে ৭ হাজার বালুবর্তি বস্তা দেয়া হয়েছে ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের জন্য। তিনি বলেন পানি না কমলে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়।

(একে/এসপি/জুলাই ১৫, ২০১৯)