ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

শিক্ষার অগ্রগতির কী করুণ পরিণতি!

২০১৯ জুলাই ১৯ ২২:৫৮:৩২
শিক্ষার অগ্রগতির কী করুণ পরিণতি!

রণেশ মৈত্র


বয়সটা আমার ৮৮ ছুঁই ছুঁই । বাংলাদেশের নয় শুধু, সমগ্র পৃথিবীরই সকল মহাদেশের সকল দেশেরই সর্বোচ্চ গড় আয়ু যা তা আমার বর্তমান বয়সের অনেক নীচে। সে অর্থে যাঁরা সর্বাপেক্ষা বেশী দিন বেঁচে ছিলেন বা সর্বোচ্চ বেশী দিন বেঁচে আছেন সমগ্র পৃথিবীতে তাঁদের কাছাকাছি চলে এসেছি প্রায়। এটি আমার এক সৌভাগ্য এবং অতিশয় আনন্দের ব্যাপার বটে। শুধু আমার নিজের নয়, আমার পরিবারের সকল সদস্য, সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বন্ধব, পরিচিত-অপরিচিত সকল শুভাকাংখীর জন্যেই তা আনন্দের আরও বেশী আনন্দের এ কারণে যে, আমি এখনও লাঠির ভর ছাড়াই হাঁটা চলা করতে পারি, বাজার-ঘাট করতে পারি, মানুষের জন্যে কথাবার্তা, আদান প্রদান করতে পারি, মঞ্চে দাঁড়িয়ে অল্প-স্বল্প বক্তৃতাও করতে পারি আর পারি ঘন্টার পর ঘন্টাব্যাপী লিখতে। যা আমার বয়সী পাবনাতে আর যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁরা অনেকে পারেন না।

সেই ১৯৩৩ সালে ইংরেজ আমলে জন্ম। সেই সূত্রে অর্থাৎ জন্ম সূত্রে আমি অবিভক্ত ভারত বর্ষের নাগরিক। অত:পর এলা পাকিস্তান। যে মাটিতে জন্মে ছিলাম তা পাকিস্তানের ভাগে পড়ায় জন্মসূত্রে আপনা-আপনি পাকিস্তানের নাগরিকও। ১৯৭১ এ পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলা দেশেরও জন্মসূত্রে নাগরিক বনে গেলাম। দুই দফায় নাগরিকত্ব ত্যাগ বা গ্রহণের জন্যে কারও কাছে কোন দরখাস্ত করতে হয় নি।

মোদ্দা কথা এই আটটি দশক ধরে তিন তিনটি দেশ, তিনটি দেশের সংস্কৃতি সভ্যতা, শিক্ষা-দীক্ষা, মানুষের আচার আচরণ। সমাজ ও অর্থনীতিতে ঘটে যাওয়া সকল পরিবর্তনকে নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ ঘটেছে। আর দেখার অভিজ্ঞতাগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাই বর্তমান নিবন্ধের লক্ষ্য।

শৈশবে স্পষ্ট না বুঝতে পারলেও আমাদের গ্রাম ভুলবাড়ীয়া (পাবনা জেলার তৎকালীন সাঁথিয়া থানাধীন) গ্রামের সরকারী প্রাইমারী স্কুল ব্যতিরেকে ৩/৪ বর্গমাইল এলাকার কোন গ্রামেই কোন প্রাইমারী স্কুলের অস্তিত্ব চোখে পড়ে নি। তাই আশপাশের সকল গ্রাম থেকেই শিক্ষার্থী শিশুরা (তখন প্রাইমারী স্কুলগুলিতে চতুর্থশ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হতো) ভুলবাড়ীয়ার প্রাইমারী স্কুলেই পড়তে আসতো আশ-পাশ গ্রামগুলি থেকে পড়তে আশা শিশুদের সংখ্যাও বেশী ছিল না। শিশু, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী মিলে সাকুল্যে মাত্র ১৫০ থেকে দুইশত ছেলে মেয়েকে। কিন্তু বলা হতো ভুলবাড়ীয়া প্রাইমারী স্কুলেই গোটা থানার মধ্যে সর্বার্ধিক সংখ্যক ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করে।

কিন্তু স্কুলটিতে শিক্ষক ছিলেন মাত্র দুইজন। পাঁচটি ক্লাসে তাঁরাই পড়াতেন। কারও আসুখ-বিসুখ হলে একজন সুস্থ শিক্ষকই সকল ক্লাশে পড়াতেন। অসুস্থ শিক্ষকের অনুপস্থিতির সুযোগে তাঁরা ক্লাসগুলিকে ছুটি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল না। কোন শিক্ষই না পড়ানোর কোন অজুহাত একদিনের জন্যও খুঁজতেন না। তাঁরা ভাবতেন, শিক্ষাদানই তাঁদের ব্রত, ধ্যান, জ্ঞান। তাই তাতে বিরতির সুযোগ নেই।

তা হলে তখনকার মারাত্মকভাবে শিক্ষার সুযোগ নিয়ে যে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষাকতাকে তাঁদের পেশা হিসেবে বেছে নিতেন শিক্ষক স্বল্পাতর সুবাদে ফাঁকি দেওয়ার অবাধ এবং অজ¯্র সুযোগ থাকা সত্বেও তা গ্রহণ করার বিন্দুমাত্র মানসিকতা তাঁদের দেখি নি। আবার পাঠদানের মানও ছিলো উচ্চ এবং নিষ্ঠার কারণেই তাঁরা তা করতে পারতেন-করতেন গভীর মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে। পাঠ্য বইগুলির মানও ছিলো উচু। সরকার তখন বিনামূল্যে বই সরবরাহ করতেন। কিন্তু কম করে হলেও অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলে-মেয়েদের বই, খাতা-পেন্সিল সহ তাবৎ উপকরণ কিনে দিতেন সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া।

এত কিছু সত্বেও কোন কোচিং সেন্টার কোন পর্যায়েই তখন দেখি নি। অর্ধ-বার্ষিক বার্ষিক এবং বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষার তিন মাস আগে থেকেই শিক্ষকরা স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীকেই স্কুলের অভ্যন্তরেই স্বতো:প্রবৃত্ত হয়ে ঐ স্কুল ঘরেই কোচিং করাতেন। তার জন্য বাড়তি কোন টাকা অভিভাবকদেরকে গুনতে হতো না। আবার অতিশয় ভাল ছাত্র-ছাত্রী হলে তাঁদেরকে নিজ বাড়ীতে বা ছাত্র-ছাত্রীর বাড়ীতে গিয়ে কিছুকাল পড়িয়ে আসতেন অবসর মুহুর্তে। তার জন্য বিত্তবান অভিভাবকেরাই শুধু টাকা দিতেন মাসে মাসে অন্যরা নন।

আর এটাশুধু প্রাথমিক পর্যায়ের কথা নয়, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতেও একই অবস্থা বিরাজ করতো। লেখাপড়া মান ছিল উঁচু। ক্লাসে শিক্ষকেরা প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীাকে সংশ্লিষ্ট পূরোপূরি বুঝিয়ে পরবর্তী দিনের জন্য টাস্ট দিয়ে (আমরা যাকে বলতাম হোম টাস্ক) তবে ক্লাস ছাড়তেন। শিক্ষকদের সামাজিক সম্মানও ছিল লক্ষ্যনীয়। যেখানেই যেতেন ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক নির্বিশেষে শিক্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম বা কদমবুছি করতেন - বাড়ীতে গেলে চেয়ার জলখাবার ছিল নির্ধারিত।

জনপ্রতিনিধি, সরকারী উচ্চ ও নিম্ন কর্মকর্তারাও শিক্ষকদের প্রতি অনুরূপ সম্মান প্রদর্শন করতেন। অর্থাৎ সমাজে সর্বোচ্চ সম্মান শিক্ষকেরাই পেতেন।

কিন্তু এখন? অনেক শিক্ষককেই দেখেছি জন প্রতিনিধি বা সরকারী কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আগে তাঁরা উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষককে সমাদর জানিয়ে সামনের চেয়ারে বসতে বলতেন। তিনি বসতে তাঁরা নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতেন।

শিক্ষকদের বড় অংশই সে সম্মান আর পান না বলে অভিযোগ জানান। বলতে শুনেছি শিক্ষকের মর্যাদা না দেওয়ার সমাজটা দিন দিন গোল্লায় যাচ্ছে।

তাঁদের এ অভিযোগ মেনে নিয়েই পাল্টা তাঁদেরকেই অনেক কথা জিজ্ঞেস করতে চাই সম্ভবত: তাঁরাও প্রশ্নগুলির কোন সদুত্তর দিতে পারবেন না। বিষয়টি দু:খজনক হলেও সত্য। তবে এ আলোচনায় পরে আসছি।

বস্তুত:ই, সকল কিছু জীবনভর দেখে শুনে আজ বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় না যে আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ বস্তুত:ই ‘সব সম্ভবের দেশ’ এ পরিণতও হয়েছে। আগের যুগেও কখনও যখন এই কথা শুনেছি তবে একটি প্রবাদ বাক্য হিসেবে। কিন্তু তা ছিল কথার কথা মাত্র।

তখন শিক্ষকদের বেতন ছিল অত্যন্ত নগণ্য। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে তা ছিল নামমাত্র। কিন্তু তবু তাঁরা সবাই পড়াতেন, গভীর আন্তরিকতা ও দায়িত্ব বোধ নিয়েই ক্লাসরুমেই পাঠদান করতেন-দেশে একটিও কোচিং সেন্টার ছিল না-কোন ছাত্র-ছাত্রীই বা কোন অভিভাবকই তার প্রয়াজনীয়তা অনুভব করতে না-শিক্ষকদের তো প্রশ্ন্ উঠে না।
নৈতিকতার মান কত উঁচুতে থাকলে তা সম্ভব হয় আজ তা ভাবতেও বিস্ময় লাগে। নৈতিকতার অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলনারীর সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে। তখনকার দিনে ছেলেদের-মেয়েদের পৃথক পৃথক স্কুল-কলেজ যেমন থাকতো তেমনই সেগুলিতে সহ-শিক্ষার ব্যবস্থাও থাকতো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে।

ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পর্ক ছিলো ভাই-বোনের মত। দু’একটি ক্ষেত্রে যে তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতো না তা নয় কিন্তু সে সম্পর্ক যৌন সম্পর্ক পর্যন্ত গড়াতো না। আজ যৌনতা একটি ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়েছে। ইদানীংকালের ঘটনাগুলি সর্বাধিক ভয়াবহ। শিক্ষকদের একটা বড় অংশই তাঁদের কন্যাতুল্য ছাত্রীদের সাথে নানাভাবে, নানা কৌশলে কেউ বা নিশ্চিতভাবে পাশ করিয়ে দেওয়ার, কেউ বা বিয়ের আবার কেউ বা জোর করে ধর্ষণ করে তার ছবি নিয়ে ছবিগুলি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে।

তবে রোগ প্রায় মহামারী রূপে আবির্ভূত হলেও তা সম্ভবত: শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকার ক্ষেত্রে সত্য নয় আজও। কিন্তু আজ যদি ৫ ভাগ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তা হলেও তা গভীর উদ্বেগের কারণ শিক্ষকদের সংখ্যাই তো লক্ষাধিক সকল ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। মাদ্রাসাগুলি আরও ভয়াবহ। বোরকা হেজাবেও ঠেকে না বরং তাকে আবরণ হিসেবে দেখিয়ে কু-কর্ম আরও বেশি করা হয় বলে দিব্যি অভিযোগ। দ্রুতই সমাজ একে প্রতিরোধে এগিয়ে না এলে সমাজ সভ্যতা ধ্বংশের দিকে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে যাবে। আইন-আদালত এ ব্যাপারে সর্বাধিক এগিয়ে না এলে সমাজ ও স্থবিরতামুক্ত হবে এমনটা অন্ত: এ মুহুর্তে ভাবা যাচ্ছে না।

বেতন বেড়েছে সবারই।কি সরকারী কি বেসরকারী। কিন্তু ঘুষ দুর্নীতির ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। সামান্য একটি পুলিশ কনষ্টেবল নিয়োগেও লক্ষ লক্ষ টাকাঘুষের কাহিনী সবারই জানা। থানার মামলা নিতে টাকা চার্জশীট দিতে টাকা, না দিতেও টাকা। কী ভয়াবহ ব্যাপার। বিচারিক দীর্ঘ সূত্রিতাও আর এক দুর্নীতি। আর বিচার বিলম্বিত হওয়ার ফলে যৌন সংক্রান্ত সহ সকল অপরাধই বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছেঘুষ দুর্নীতি যৌনতা অপ্রতিরোধ্যহয়ে উঠছে যেন। আর এই ঘুষ নিম্ন পর্য্যায়ে থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একটা চেইয়ের মত প্রসারিত হয়েছে যেন।

ইদানীংকালে ব্যাংক খাতের দুনীতিও ভয়াবহ রূপ পেয়েছে। হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সমাজের ধনিক গোষ্ঠী সেই টাকা দিব্যি বিদেশী ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংকগুলিকে ফতুর করে দিচ্ছে। এরা সবাই সমাজে সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও সম্মানিত। চিহ্নিত হলেও এই ঋণ খেলাপী নামক অর্থনীতি ধ্বংসকারী অপরাধীরা যেন আইন আদলাতের ঊর্ধে। রাষ্ট্রীয় মদদেরও অভাব নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদেরকে সুরক্ষা দিয়ে চলেছে-সামান্য কিছু জমা দিয়ে বৃহদাকার লোন যাতে তারা পান তার জন্যে তাঁরা আইনও প্রণয়ন করে ছেড়েছেন।

কিন্তু গরীব কৃষকদের হাতে হাতকড়ী সামান্য লোন নিয়ে যৌক্তিক কারণে তা পরিশোধে সক্ষম না হওয়ার কারণে। শ্রমিকদের জন্য লোনের কোন ব্যবস্থাই নেই অথচ এই কৃষক শ্রমিকেরাই জমিতে ও কলকারখানার ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে বহুমাত্রিক ।

উৎপাদন করে দেশকে বাঁচিয়ে রাখছেন, যেটুকু অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হচ্চে তাও তাঁদেরই কল্যাণে। অথচ সরকার ক্রেডিট নিচ্ছে ঐ অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাদ্যে স্বংসম্পূর্ণতা অর্জনে। এ ক্রেডিট তাদের নয় ক্রেডিটের পূরোটাই হত দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকদের প্রাপ্য।

বিশাল বিশাল বহুতল বিশিষ্ট দালান-কোঠা গড়ে তুলছেন মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণী তাঁরাই গড়ে তুলনে চোখ ধাঁধাঁনো ব্যবসা-বিপণী। তা দেখেও ক্রেডিটা সরকার নিচ্ছেন উন্নয়নের জোয়ার দেখনে তাতেও।

আর শতকারা ৯৫ ভাগ মানুষ যে দারিদ্র্যে ভুগছেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য যে আকাশ চুম্বি হয়ে উঠে সকল নৈতিকতার অবসান ঘটাচ্ছে তার কোন উল্লেখ পাওয়া যাবে না কোথাও। যাঁদের কারণে এমনটি ঘটছে তাঁরা কিন্তু “উচ্চ শিক্ষিত” ও “সম্মানিত” এবং সে কারণে আইনের হাত তাদের প্রতি সম্প্রসারিত হয় না। সংবিধান বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের নিশ্চয়তা দিলেও রাষ্ট্র বিপরীত মুখী আইন আদলতও তাই।

বিশাল বিশাল বাজেট দেখে কার না চোখ ধাঁধাঁয়। কিন্তু লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা অন্ধ। রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পে সাম্প্রতিক ‘বালিশ কা-’ যেটুকু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয় কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার সকল ক্রেডিট যে পত্র পত্রিকার সাংবাদিকদেরই প্রাপ্য সেদিক রাষ্ট্রের বা সমাজের খেয়াল নেই।
নিবন্ধটির ব্যাপ্তি আর বাড়িয়ে লাভ নেই। আজকের শিক্ষিত সমাজের অপরাধের ব্যাপকাত যে ভয়াবহ এবং তার জন্য দায়ী যে তথাকথিত সমাজ তার প্রতিই জোর দিতে চাই। মন্ত্রীরা শিক্ষিত, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষিত, শিক্ষক-শিক্ষিরা শিক্ষিত, ব্যাংকগুলি থেকে ঋণ যাঁরা দেন তাঁরা শিক্ষিত-যাঁরা নেন তাঁরাও শিক্ষিত। তবুও কেন অপরাধের মাত্রা ক্রমবর্ধান?

শিক্ষা তবে কী শেখাচ্ছে? না শিক্ষার বিরোধী আমি নই বরং তার আর আর প্রসার দাবী করি। কিন্তু আজ গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে, কী শিক্ষায় আমরা ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলছি যে শিক্ষিতরাই সমাজে দুর্নীতিবাজ ও অপরাধ সমূহের সংগঠকে পরিণত হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রটিকে দিন দিন যেন অকার্য্যকর করে তুলছে একাত্তরের বীর শহীদদের স্বপ্নকে ব্যার্থতায় পরিণত করছে।

এ ব্যাপারে কোন প্রকার কালবিলম্বের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত