ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তিযুদ্ধ » বিস্তারিত

৩১ আগস্ট, ১৯৭১

মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল শিবপুর থানা আক্রমণ করে

২০১৯ আগস্ট ৩১ ১৪:০৩:৪০
মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল শিবপুর থানা আক্রমণ করে

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক :মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল শিবপুর থানা আক্রমণ করে থানা ও রাজস্ব অফিস জ্বালিয়ে দেয়। গেরিলারা থানা থেকে ৮টি রাইফেল, ৫টি শর্টগান ও ৪০ রাউন্ড গুলি দখল করে। এ খবর পেয়ে নরসিংদী থেকে পাকসেনাদের একটি কোম্পানী ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হলে আরেকটি গেরিলা দল পুটিয়রের কাছে তাদের এ্যামবুশ করে। চারঘন্টা সংঘর্ষের পর গেরিলাদের চাপের মুখে টিকতে না পেরে পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে নরসিংদীর দিকে পালিয়ে যায়। এক সংঘর্ষে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন সেলিমসহ ৩৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সকাল ৯/১০ টায় পাকহানাদার বাহিনী সুনামগঞ্জে কিছু রাজাকার, আলবদর নিয়ে জগন্নাথপুর হতে ৮/৯টি নৌকায় ছিরামিসি বাজারে আসে। রাজাকার, আলবদররা গ্রামের সকল মানুষকে শান্তি কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়। শান্তি প্রিয় গ্রামের মানুষ শান্তির আকাঙ্খায় ছিরামিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে জমায়েত হয়। যারা আসতে দেরী করে তাদের ডেকে আনা হয়। আগত সবাই স্কুলে হল রুমে আলোচনা আরম্ভ করার অপেক্ষা করছিলেন, এমন সময় বর্বররা শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী ও যুবকদের আলাদা রুমে ডেকে নিয়ে পিছন দিক দিয়ে হাতগুলো বেঁধে দেয়। পরে ১৫/১৬ জনের এক একটি দল করে এক সাথে বেঁধে নৌকায় নিয়ে নির্বিবাদে গুলি চালায়। কোন কোন দলকে নিকটবর্তী পুকুর পাড়ে সাড়ি বেঁধে দাঁড় করিয়ে ব্রাস ফায়ার করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ পানিতে পড়ে বাঁচার চেষ্টা চালালে পুকুর পাড় থেকে পাক বর্বররা এলোপাথারি গুলি করে। এভাবে পাক জল্লাদরা ছিরামিসি গ্রামের ১২৬ জন নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডে নরপশুরা মাত্র কয়েকজন বৃদ্ধকে অকেজো ভেবে ছেড়ে দেয়।

হত্যাযজ্ঞের পর আরম্ভ হয় ধ্বংসযজ্ঞ। ছিরামিসি বাজারের ২৫০টি দোকান কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে পাকহানাদাররা। সেখান থেকে হানাদাররা জনশূন্য গ্রামে গিয়ে লুটতরাজ চালায় ও ঘরবাড়ি সব আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ওয়াশিংটনে এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক নির্যাতনের বদলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যবস্থা না করা হলে পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক’টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ডা: এ.এম. মালিক ও লেঃ জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজীকে যথাক্রমে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। তবে, সরকারীভাবে বলা হয়: বেসামরিক গভর্নর নিয়োগ করা হলেও সেনাবাহিনী আগের মতোই কাজ করবে।

গোলাম আজম করাচীতে সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপ (ভাসানী), আতাউর রহমান খানের ন্যাশনাল লীগ, ন্যাপ (ওয়ালী)সহ অন্যান্য ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও জাতীয় পরিষদ বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবী জানান।

মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল ঢাকা-কুমিল্লা সড়কে বাতেরচরের নিকটস্থ সড়কে সেতুতে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ সংঘর্ষে কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। পরে গেরিলারা সেতুটির ৬০ ফুট লম্বা স্প্যান উড়িয়ে দেয়। এতে পাকসেনাদের ঢাকা-কুমিল্লা সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়।

মেজর আবদুল হালিমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল ধোপাখালী বি-ও-পি থেকে কয়েক মাইল ভিতরে বাঘছড়া থানা হেড কোয়ার্টার আক্রমণ করে। কিন্তু রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের আগমন সংবাদ পূর্বেই পেয়ে পালিয়ে যায়। ফেরার পথে মুক্তিযোদ্ধারা শান্তি কমিটির একজন সদস্যের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৪টি বন্দুকসহ চারজন রাজাকারকে বন্দী করে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/এএস/আগস্ট ৩১, ২০১৮)